এক সহকারী হাইকমিশনারের সঙ্গে সখ্য ছিল দেব প্রসাদের

রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর ও গোপনীয় তথ্য ভারতে পাচারের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্য দেব প্রসাদ সাহার সঙ্গে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের মানুষের সখ্য ছিল। একজন কনস্টেবলের এ ধরনের সংযোগ দেখে বিস্মিত পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের একজন সহকারী হাইকমিশনারের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্কের ছবি ফাঁস হয়েছে ইতোমধ্যে। ছবিটি দেব প্রসাদ তার ফেসবুক পেজে ব্যবহার করেছিলেন বলে জানা গেছে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর ছবিটি খুলনায় আলোড়ন তুলেছে।

দেশের তথ্য পাচারের সঙ্গে দেব প্রসাদের সংযোগের ঘটনা সামনে আসার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা ধরনের গুঞ্জন শুরু হয়েছে তাকে নিয়ে। দেব প্রসাদ ও তার পরিবারকে নিয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

খুলনার তেরখাদা সদরের সাহাপাড়ার বাসিন্দা কনস্টেবল দেব প্রসাদ সাহাকে গত ১৭ ডিসেম্বর বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে যশোরের আদালতে সোপর্দ করে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তাকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

দেব প্রসাদের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য। বাংলাদেশে ও ভারতে দেব প্রসাদ ও তার ভাইদের অঢেল সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব সম্পত্তির অধিকাংশ দেব প্রসাদের সহায়তায় অবৈধ কারবারের মাধ্যমে করা হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

যশোরে একটি প্রাইভেট ক্লিনিক ব্যবসার পাশাপাশি নওয়াপাড়ায় পাথরের ব্যবসা রয়েছে দেব প্রসাদের। সম্প্রতি যশোরে ৬০ লাখ টাকায় একটি বাড়ি কেনেন তিনি।

তেরখাদা সদরের সাহাপাড়ায় দেব প্রসাদ সাহার পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।

দেব প্রসাদের চতুর্থ ভাই অচিন্ত্য সাহার খুলনা শহরের বড় বাজারে রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দেশি-বিদেশি নানা ধরনের পণ্যের ব্যবসায়ী তিনি। মিডিয়ার মাধ্যমে দেব প্রসাদ সাহার গ্রেপ্তারের খবর জানতে পারেন বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, তেরখাদা উপজেলা সদরের মৃত সুরেন্দ্রনাথ সাহার ছেলে দেবপ্রসাদ। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বড় তিন ভাই গৌরপদ সাহা, প্রভাষ সাহা ও মেঘনাথ সাহা প্রায় দুই যুগ আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত জেলার হাওড়া এলাকায় স্থায়ী নিবাস গড়েছেন। গৌরপদ সাহা ও প্রভাষ সাহা সেদেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। আর সেজ ভাই মেঘনাথ সাহা দুই দেশের মধ্যে মাদক ও চোরাকারবারিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় আলিশান বাড়ি রয়েছে তাদের।

মূলত সেজ ভাই মেঘনাথ সাহার সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশে অবৈধ ব্যবসার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেব প্রসাদ সাহার। মাদকদ্রব্য, ওষুধপত্রসহ ভারতীয় পণ্যদ্রব্য দেশে এনে উচ্চমূল্যে বিক্রির জন্য নিজস্ব বলয় রয়েছে তার।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী ও পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, দেবপ্রসাদ সাহা (কনস্টেবল নং-৭০৩) ঢাকার উত্তরা ১ নং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে কনস্টেবল। সেই সুবাদে ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বেনাপোল ইমিগ্রেশনে কর্মরত ছিলেন। সেখানে কর্মরত অবস্থায় ভারতের অনেকের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। যখন-তখন নোম্যানস ল্যান্ড অতিক্রম করে ভারতে যাওয়া-আসা করতেন। ইমিগ্রেশনে দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনীর অফিস সহকারী আবু হানজালা রানা ও সৈনিক শাহনেওয়াজ শাহিনের সঙ্গে তার পরিচয় ও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।

তারা দুজন বেনাপোলে মাঝেমধ্যে এসে ভারতের এস চক্রবর্তী ও পিন্টু নামে দুজনের কাছে বাংলাদেশের গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করতেন।

২০১৮ সালের শেষের দিকে দেব প্রসাদ সাহা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসংবলিত একটি পেনড্রাইভ নোম্যানস ল্যান্ড পার হয়ে ভারতে পাচার করেন। ১৫ দিন পর আবু হানজালা রানার কাছ থেকে এনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসংবলিত পেনড্রাইভ ভারতের এস চক্রবর্তী ও পিন্টুর কাছে হস্তান্তর করেন দেব প্রসাদ সাহা।

গত ২৫ অক্টোবর ঢাকার কমলাপুরের একটি হোটেল থেকে ডিজিএফআই ও র‌্যাবের হাতে সৈনিক শাহানেওয়াজ শাহিন আটক হন। এ সময় তার কাছ থেকে একটি পেনড্রাইভ জব্দ করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ভারতের কাছে বাংলাদেশের তথ্য পাচারের বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়।

এরপর বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তর তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে অনুসন্ধানে নামে। তদন্তে তাদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও ভারতের একজন পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথোপকথনের ভিডিও সিডির মাধ্যমে ভারতে বাংলাদেশের তথ্য পাচারের বিষয়টি উঠে আসে।

বেনাপোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মামুন খান ঢাকা টাইমসকে জানান, ভারতে বাংলাদেশের তথ্য পাচারের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় দেব প্রসাদকে ৫ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

(ঢাকাটাইমস/২১ডিসেম্বর/মোআ)