ধারাবাহিকভাবে কমেছে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি

মাসের পর মাস কমতির দিকে বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি। এতে নতুন বিনিয়োগও না বাড়ায় কমেছে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিও। ব্যাংকে তারল্য সংকট, বর্তমানে ঋণের সুদহার বেশি হওয়া, এপ্রিলে সুদহার কমার সম্ভবনা এবং বৈশ্বিক মন্দাকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছে অর্থনীতিবিদরা।
সেসবের সঙ্গে নতুন করে করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে পড়া আরেকটি বড় কারণ বলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
জানা গেছে, চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুদ্রানীতিতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত লক্ষ্য ঠিক করেছে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। যা গেল অর্থবছরের জুন পর্যন্ত লক্ষ্য ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখো গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯.১০ শতাংশ। এর আগের মাস জানুয়ারিতে ছিল ৯.২০ শতাংশ, ডিসেম্বর শেষে ছিল ৯.৮৩ শতাংশ, নভেম্বর শেষে ৯.৮৭ শতাংশ, অক্টোবর শেষে ১০.০৫ শতাংশ, সেপ্টেম¦র শেষে ১০.৬৬ শতাংশ, আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর আগের মাস জুলাই শেষে ছিল ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ, জুন মাসে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, মে মাসে ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ, এপ্রিলে ১২ দশমিক ০৭ শতাংশ, মার্চে ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিলো।
মাসের পর মাস এখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমার কারণ কি জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ঋণ নিতে খুব বেশি আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, ঋণের সুদহার দুই অঙ্কের ওপরে। ’
তিনি বলেন, ‘গত কয়েকমাস ধরে চীনসহ বিশের অনেক দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। বৈশ্বিক মন্দায় আমাদানি রপ্তানি কমেছে। এ কারণে ব্যাংক খাতে ঋণের চাহিদা কিছুটা কমে গেছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই অংক গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ব্যক্তিখাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমার ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসের প্রভাব তেমন পড়েনি। বেশকিছুদিন ধরে এই খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিক কমে যাচ্ছে।’
তার মতে, এর একটি কারণ ‘ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকটের কারণে উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছে না। ব্যাংক আমানত পাচ্ছে না। যার কারণে চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দিতে পারছে না। এছাড়া যেসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো, তারাও ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে খুব যাচাই-বাছাই করছে। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতের ঋণ কমে গেছে।
আহসান এইচ মনসুর আরো বলেন, ‘অপরদিকে দেশের রাজস্ব আয়ে প্রতিমাসে বড় অংকের ঘাটতি। আর সরকার উচ্চমাত্রায় ব্যয় করছে। একারণে সরকার প্রচুর পরিমাণে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে। সেকারণে ব্যক্তিশ্রেণী ঋণ পাচ্ছে না। ’
এভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ ধারাবাহিক কমতে থাকলে ভবিষ্যতে অর্থনীতির অবস্থা খারাপ পর্যায়ে চলে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন আহসান এইচ মনসুর। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ না বাড়লে, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে উন্নয়ন হবে না। যেকোনো মূল্যে সরকারকে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের অপর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকার চলতি অর্থবছরের ৮ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৫৩ হাজার ৭৪৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। এতে করে সরকারে মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৪৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
(ঢাকাটাইমস/২৭র্মাচ/আরএ/ডিএম)

মন্তব্য করুন