বাংলাদেশের আন-অফিসিয়াল ‌‘আয়রনম্যান’ বেলাল

চেষ্টা মানুষকে সফলতার মুখ দেখায় এটা আমরা সবাই জানি। চেষ্টার ফলে আমাদের চারপাশে এমন কিছু গল্পের আবির্ভাব হয় যেগুলো একদিকে যেমন শক্তি জোগায়, অন্যদিকে দেয় আনন্দ। গল্প বললে হয়তো ভুল হবে বলতে হয় ইতিহাস রচয়িতা। হ্যাঁ, এই ইতিহাস রচয়িতার নাম আরিফুর রহমান বেলাল।

পেশায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা এবং শরীর চর্চায় খুব মনযোগী ছিলেন তিনি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চাকরি, পরিবারকে সময় দিতে যেয়ে খেলাধুলা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পরেন। একটা পর্যায়ে তিনি শারিরীক সুস্থতার জন্য পুনরায় ব্যায়াম করার সিদ্ধান্ত নেন। সালটা ২০১৯। দৌড় দিয়েই শুরু হয় তার নতুন জীবনের অধ্যায়। প্রথমে পাঁচ কিলোমিটার, তারপর আস্তে আস্তে দৌড়ের দূরত্ব বাড়তে থাকে।

এরই মধ্যে তিনি জানতে পারেন ট্রায়াথলন খেলার কথা। আমরা অনেকেই ট্রায়াথলন খেলা সম্পর্কে জানিনা। বাংলাদেশে এই খেলা এখনো নতুন বললেই চলে। ট্রায়াথলন হচ্ছে তিনটি খেলার সমন্বয়। সেখানে একজন এথলেটকে পরপর ৩.৮ কিলোমিটার সাঁতার, ১৮০ কিলোমিটার সাইক্লিং এবং ৪২.২ কিলোমিটার দৌড় ১৭ ঘন্টার ভিতর সম্পন্ন করতে হয়। আর যে নির্দিষ্ট সময়ে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে তাকেই বলা হয় আয়রন ম্যান।

বলছিলাম আরিফুর রহমান বেলালের কথা। ২০১৯ সাল থেকে অদম্য ট্রেনিং করে গত ৫ নভেম্বর ঢাকার হাতিরঝিলে ১২ ঘন্টা ১৭ মিনিট সময় নিয়ে এই বাকরুদ্ধ কাজ সম্পন্ন করেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের পুকুরে ভোর ৬:০১ মিনিটে তিনি সাঁতার শুরু করেন ৷তারপর ১৮০ কিলোমিটার সাইক্লিং করার জন্য হাতিরঝিল চলে আসেন। আর দুপুর ১ টায় সাইক্লিং শেষ হলে দৌঁড়ের জন্য প্রস্তুনি নেন৷

কিন্তু দুপুর গড়াতে গাড়ির চাপ বাড়ায় তিনি হাতিরঝিল থেকে রমনায় চলে আসেন এবং সেখানেই দৌঁড় সম্পন্ন করেন৷ হাতিরঝিলের এই প্রখর রোদে আর ধূলায় মাখামাখি হয়ে বাংলাদেশের মাটিয়ে এই প্রথম তিনি ট্রায়াথলন করে ইতিহাস রচনা করে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, চেষ্টা করলে অর্থবল না থাকলেও আয়রন ম্যান দেওয়া যায়। হয়তো এর কোন সার্টিফিকেট নেই। কিন্তু তার এই অদম্য প্রচেষ্টা বহু তরুণকে উৎসাহ জাগিয়েছে নিজের দেশে ট্রায়াথলন এর জন্য প্রস্তুতি নিতে। নিজের চেষ্টা নিজে করে যেতে।

তার এই সুন্দর প্রচেষ্টাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তার এই অর্জনে সেচ্চাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন ফিটনেস ভিত্তিক "দ্য ওয়াইল্ড রেসার" দলের সদস্যরা৷ বেলাল এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন ম্যারাথন, হাফ ম্যারাথন প্রতিযোগিতা, আল্ট্রা ম্যারাথন, দেশের সবচেয়ে বড় এডভেঞ্চার ইভেন্ট বাংলা চ্যানেল সাঁতার কেটে পারি দিয়েছেন৷ তার ম্যারাথন এবং আল্ট্রা ম্যারাথন ইভেন্টের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ম্যারাথন ২০২১, মেরিন ড্রাইভ আল্ট্রা, শমসেরনগর আল্ট্রা ট্রেইল ম্যারাথন উল্লেখযোগ্য।

আরিফুর রহমান বেলালের স্বপ্ন আজীবন ট্রায়াথলন প্রেক্টিস করার এবং যদি সুযোগ থাকে তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আয়রনম্যান সম্পন্ন করার৷ তিনি দেশের তরুণ প্রজন্মকে ট্রায়াথলনের দিকে আকৃষ্ট করাতে চায়। তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/০৯নভেম্বর/এমএম)