যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী বোমা জিবিইউ-৫৭ /বি, ইরানকে কাবু করতে পারবে না

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূ-স্তরভেদী বোমার মালিক যুক্তরাষ্ট্র। এই বোমার নাম জিবিইউ-৫৭ /বি ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি)। এর সাহায্যে মাটির প্রায় ২০০ ফুট গভীর পর্যন্ত কোনো সুরক্ষিত স্থাপনা ধ্বংস করা সম্ভব। তবে এতদসত্ত্বেও ইরানের পাহাড়ের নিচে অবস্থিত ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসে এই বোমাটির কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকেরা।
এই বোমার ওজন প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড (১৩ হাজার ৬০০ কেজি)। এতে রয়েছে ৫,৭৪০ পাউন্ড উচ্চ বিস্ফোরকের ওয়ারহেড এবং এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্পিরিট স্টিলথ বোমারু বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য। এই স্টিলথ বিমান রাডারে ধরা পড়ে না বললেই চলে এবং এটি একটানা ১১ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রমে সক্ষম। ফলে যেকোনো মুহূর্তে বিশ্বের যেকোনো স্থানে হামলা চালানোর ক্ষমতা রাখে যুক্তরাষ্ট্র।
সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইয়েখিয়েল লেইটার জানান, “ফোরদোর মতো গভীর ও সুরক্ষিত স্থাপনায় হামলা চালানোর মতো প্রযুক্তি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই আছে।” তার মতে, একমাত্র জিবিইউ-৫৭ /বি-ই এমন ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র যা ফোরদোর মতো টার্গেটে প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে সামরিক বিশ্লেষকরা এই মূল্যায়নে একমত নন। ব্রিটেনের থিংক ট্যাংক RUSI-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বোমা মাটি ভেদ করে সর্বোচ্চ ২০০ ফুট (প্রায় ৬১ মিটার) গভীরে প্রবেশ করতে পারে। অন্যদিকে, ফোরদো স্থাপনা অবস্থিত ৮০ থেকে ৯০ মিটার গভীরে, অর্থাৎ এমওপি তার লক্ষ্যস্থানে পৌঁছানোর আগেই তার কার্যকারিতা হারাতে পারে।
মার্কিন বিমানবাহিনীর সাবেক কর্নেল এবং সিএনএনের বিশ্লেষক সেড্রিক লেইটন বলেন, “ফোরদোর মতো স্থাপনায় আঘাত হানতে হলে একাধিক বোমার দরকার হবে। একবারের হামলা যথেষ্ট নয়।”
গ্রিফিথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের ফেলো ও রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা পিটার লেইটন বলেন, “বারবার আঘাত হয়তো কাঙ্ক্ষিত ক্ষতি করতে পারে, কিন্তু সফলতার কোনো গ্যারান্টি নেই। এমনকি, আঘাতে প্রকৃতপক্ষে কী ক্ষতি হয়েছে, তা নির্ধারণ করাও কঠিন হবে।”
এই পরিস্থিতিতে সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফোরদোর মতো উচ্চ সুরক্ষিত এবং পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত স্থাপনায় শুধু শক্তিশালী অস্ত্র দিয়ে নয়, বরং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সমন্বিত অভিযানের প্রয়োজন।
বিশ্লেষকেরা একমত যে, যুক্তরাষ্ট্রের এমওপি বোমা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হলেও, ইরানের মতো প্রতিরক্ষামূলক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে এর একক ব্যবহারে ‘সাফল্য’ অনিশ্চিত।
(ঢাকাটাইমস/১৯ জুন/আরজেড)

মন্তব্য করুন