কেমন চলছে মাগুরা জেলা কারাগার?

আব্দুল আজিজ, মাগুরা
 | প্রকাশিত : ০৮ জুন ২০২২, ২০:২৯

দেশের কারাগারগুলো নিয়ে অনিয়ম, দুর্নীতিও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ হরহামেশাই দেখা মেলে। শোনা যায় জেল ফেরত লোকজনদের মুখেও। কিন্তু মাগুরা জেলা কারাগারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বন্দিদের শিষ্টাচার, মার্জিত, সুন্দর ও মানবিক জীবনে ফেরাতে মাগুরা জেলা কারাগার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলা চলে। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখনও চাহিদা মাফিক হয়নি। এ কারণে বেশকিছু অভিযোগ পরোক্ষভাবে উঠে আসে।

মাগুরা জেলা কারাগারটি সাব জেল হিসেবে মাগুরা শহরের মধ্যবর্তী স্থানে মাত্র ১.৭৯ একর জমির ওপর একতলা দালান বিশিষ্ট ছিল। তৎকালীন এই সাবজেলের ধারণ ক্ষমতা ছিল পুরুষ ৩৬ জন মহিলা ৬ জন, মোট ৪২ জন। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে এই কারাগারটি জেলা কারাগারে রুপান্তরিত হয়। ২০০১ সালে মাগুরা শহর থেকে ৩ কি.মি. পশ্চিমে ঢাকা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক সংলগ্ন রাস্তার উত্তরপার্শ্বে ৬.৩৯৪ একর জমির ওপর নির্মিত হয়। কারাগারটি সাবজেল থেকে জেলা কারাগারে রুপান্তরিত হয়েছে। আয়তন বেড়েচে ৫ গুণ। কিন্তু জনবল বাড়েনি। ফলে ৩৬ জন কয়েদির জনবল নিয়ে ৩০২ জন বন্দিদেরকে সেবা দিতে কারারক্ষীদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এদিকে কারা হাসপাতালে চিকিৎসক অবস্থা সংকটের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদককে মাগুরা জেলা কারাগারের জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা জানান, মাগুরা জেলা কারাগারে ২৫ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল রয়েছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী আছে। স্থায়ী কোনো চিকিৎসক নেই। মাগুরা সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি হিসেবে একজন চিকিৎসক মাঝে মাঝে আসে। এ কারণে বন্দিরা সময় মত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পায় না। বন্দিদের চিকিৎসার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনেক বেগ পেতে হয়। কারা হাসপাতালে যদি একজন চিকিৎসক থাকতো তাহলে কয়েদিদের সময় মতো সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো।

মাগুরা জেলা কারাগার নিয়ে ইতোপূর্বে প্রায় অভিযোগ আসতো-ক্যাশ টেবিলে অত্যাচার, ভিজিটর বাণিজ্য, খাবারের মান খারাপ, বন্দি স্থানান্তর ও হাসপাতালে সিট বাণিজ্য করা হয়। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে বেশ কয়েকজন জেল ফেরত ব্যক্তির সঙ্গে খোলামেলা আলাপ হয়। তাদের মধ্যে কবির হোসেন (ছদ্মনাম) সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়- তিনি (৫৮) স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। হত্যা মামলায় জেলে যেতে হয়েছিল তাকে। কারা অভ্যান্তরের পরিবেশ নিয়ে তিনি জানান- যে ধরণের অনিয়মের কথা আমরা বাহির থেকে শুনে থাকি । আসলে কারাগারের ভেতরে ওই ধরনের কোনো অনিয়ম নেই। স্বাভাবিকভাবে ঘরোয়া পরিবেশ ছেড়ে আসামি হয়ে ভিন্ন একটি জায়গায় এলে স্বাভাবিকভাবে মনে হবে খুব অশান্তিতে আছি। বিষয়টি তেমনই। মাগুরা জেলা কারাগারের যে অবস্থা তাতে মনে হয় যেন আমি শ্বশুর বাড়ি ছিলাম।

কারা অভ্যান্তরে মাদক সেবনের বিষয়ে জানতে চাইলে জেল ফেরত কয়েদিরা জানান, মাদকের বিষয়ে জেলার অনেক কঠোর। তিনি প্রায়ই কারারক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে মাদক অভিযান চালান এবং মাদক সেবনের কুফল তুলে ধরে বক্তব্য দেন।

ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দির বিষয়টি মূলত মাগুরা জেলা কারাগারের অন্যতম একটি দুর্ভোগের বিষয়। আর খাবার দেয় খুব মেপে মেপে। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের আরও বেশি যত্নবান হওয়া উচিত।

অন্যদিকে কারা অভ্যন্তরে পরিপাটি পরিবেশ, সুন্দর সুন্দর দেয়াল লিখন, বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কাজের দৃশ্য এবং শিক্ষণীয় নানা আলপনা, বন্দিদের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় পানির সুব্যবস্থা, শিশুপার্ক, রান্নাঘর, কেন্টিন, পতাকা মঞ্চসহ সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত চমৎকার এবং সন্তোষজনক। এক কথায় একটি মানবিক কারাগারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

বন্দি এবং কারা ফেরত লোকজনদের বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাগুরা জেলা কারাগারের জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাগুরা জেলা কারাগারে ধারণ ক্ষমতা ১৬২ জন (পুরুষ) ১০ জন (মহিলা) মোট ১৭২ জন। কিন্তু বন্দি আছে ৩০২ জন। কখনও কখনও আরো অনেক বেশি হয়ে যায়। বিধায় তাদেরকে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে।

আলাপের একপর্যায়ে খাবারের মান নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বন্দিদের খাবার সরকারকর্তৃক নির্ধারিত মাত্রার ওপর ভিত্তি করেই দেওয়া হয়। এখানে কমবেশি করার কোনো সুযোগ নেই। টাকার ওপর ভিত্তি করে খাবার দেওয়া হয় না। একজন বন্দি কতটুকু খাবার পাবে তার একটা পরিমাণ কারা অধিদপ্তর কতৃক নির্ধারিত আছে। এই নির্ধারিত পরিমাণের কম বা বেশি করার কোনো সুযোগ নেই কর্তৃপক্ষের। কয়েদিদের ২ দিন খিচুড়ি, ২ দিন সবজি রুটি, ২ দিন হালুয়া রুটি আর ১ দিন অন্য খাবার দেওয়া হয়। এ কারণেই মূলত বন্দিরা কর্তৃপক্ষকে দারুণভাবে ভুল বুঝে থাকে।

এছাড়াও বন্দি স্থানান্তরে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন বন্দীর সংখ্যা ধারণ ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুনের বেশি । কখন ও কখনও তিন-চার গুণও হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে বন্দি স্থানান্তর করতে হয়। এখন এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে অনেকেই মনে করে থাকেন এখানে কোন অনিয়ম হচ্ছে। আসল বিষয়টি কিন্তু ভিন্ন।

মাগুরা জেলা কারাগারের বিশেষ একটি আকর্ষণ হচ্ছে মহিলা বন্দিদের সঙ্গে থাকা শিশুদের জন্য দোলনাসহ বিভিন্ন রকমের খেলনা সমগ্রী যা মহিলা বন্দিদের সঙ্গে থাকা শিশুদের জন্য শুধু বিনোদনই নয়; এটি প্রতিটি নিরপরাধ শিশুকে মুক্ত জীবনের ছোঁয়া পেতে সহায়তা করে।

বন্দিদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের আচরণগত বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার জানান, বন্দিদের সঙ্গে তিনি প্রতিদিন অন্তত দুইবার কথা বলেন। তাদের অপরাধ প্রবণতা কমাতে নিয়মিত ধর্মীয় দীক্ষাসহ সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকার্যের ব্যবস্থা আছে।

তিনি আরও বলেন, বন্দিদের তিনি এটা বোঝাতে চেষ্টা করেন; কারাগার কখনওই আপন নিবাস নয়; এটি সংশোধনের একটি রাস্তা মাত্র।

মাগুরা জেলা কারাগারের জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা জানান, কারাগারের চারদিকে রোপণ করা হয়েছে আম, কাঁঠাল, মাল্টা, পেয়ারা, লেবু, বরই ,উন্নত জাতের পেঁপে গাছ। বাগানে উৎপন্ন মৌসুমি ফল আম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি তিনি নিজে উপস্থিত থেকে বন্দিদের (পুরুষ ও মহিলা) মাঝে সমহারে বণ্টন করেন।

( ঢাকাটাইমস/৮জুন/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :