শুক্রবার ছুটির দিনে ১২ ঘণ্টায় সড়কে ঝরল ১৬ প্রাণ

ঈদুল আজহার লম্বা বন্ধ শেষে প্রথম কর্মসপ্তাহের প্রথম ছুটির দিনে ১২ ঘণ্টায় দেশের চার জেলায় সড়কে ঝরেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ১৬ প্রাণ। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত সময়ে ময়মনসিংহ, নাটোর , লালমনিরহাট ও মানিকগঞ্জে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ময়মনসিংহে ৯ জন, নাটোরে চারজন, লালমনিরহাটে দুজন ও মানিকগঞ্জে একজন মারা যান।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহে দুটি দুর্ঘটনা ঘটে ফুলপুর ও তারাকান্দায়। এতে মারা যান ৯ জন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৫ জন।
ফুলপুরে শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ফিশারির সামনে ঢাকাগামী শ্যামলী বাংলা পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে ফুলপুর থেকে হালুয়াঘাটগামী যাত্রীবাহী মাহেন্দ্রের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ছয়জন নিহত হয়। আহত হয় ১৫ জন। আহতদের ফুলপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বাসটিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল হাদি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সংঘর্ষে মাহেন্দ্রটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থল পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে ৬টি মরদেহ উদ্ধার করে। হতাহতরা সবাই মাহেন্দ্রর যাত্রী।
এর আগে এদিন বিকালে জেলার তারাকান্দায় সিএনজি ও অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই সিএনজির দুই যাত্রী নিহত হন। আহত হন আরও চারজন। আহতদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
এই দুই ঘটনায় পুলিশ সুপার আখতার উল আলম দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, বেপরোয়া যান চলাচলের কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি বাস ও সিএনজি চালকদের আরও সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দেন।
নাটোর
এদিকে বিকাল সোয়া চারটার দিকে নাটোরে যাত্রীবাহী বাস-সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন চারজন। নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আহত আরও দুইজনের রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ জন।
নিহতদের মধ্যে একজন দুর্ঘটনাকবলিত সিএনজি চালক মো. বাবু (৪০)। তিনি নাটোর সদর উপজেলার হারিগাছা গ্রামের আহাদ আলীর ছেলে। অপর তিনজন হলেন- ঢাকার মিরপুর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাগর (৩৫) ও তার আত্মীয় রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা মো. শহিদুল ইসলাম (৪৫) এবং একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি (৪০)।
হাইওয়ে পুলিশের ঝলমলিয়া ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আবুল কালাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, নাটোর শহরের বেলঘরিয়ায় রাজশাহী থেকে নাটোরগামী সিএনজির সঙ্গে সিরাজগঞ্জ থেকে রাজশাহীগামী রাব্বি পরিবহনের বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
দুর্ঘটনায় সিএনজিটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ সময় ঢাকার মিরপুর এলাকার বাসিন্দা সিএনজি যাত্রী মো. সাগর ঘটনাস্থলেই মারা যান। অপর তিনজন গুরুতর আহত হন। নাটোর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে সিএনজি চালক বাবুর মৃত্যু হয়। আহত দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টার দিকে তাদের মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পরপরই বাসের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। তবে ঘটনাস্থল থেকে বাসটিকে জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
লালমনিরহাট
শুক্রবার দুপুরে পাটগ্রামে পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হন। লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কের উপজেলার বাউরা নবীনগর সরকারপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- পাটগ্রাম পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের মির্জারকোর্ট এলাকার আলিউল ইসলামের ছেলে মেরাজ হোসেন (২২) ও একই এলাকার একরামুল হকের ছেলে অনিক ইসলাম (২৩)। এর মধ্যে মিরাজ হোসেন ঘটনাস্থলে মারা যান। আর সন্ধ্যায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অনিক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে মেরাজ হোসেন ও তার বন্ধু অনিক ইসলাম পাটগ্রাম পৌরসভার মির্জারকোর্ট গ্রামের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলে হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের বড়মসজিদে (ভাঙ্গা মসজিদ) জুমার নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন অনিক ইসলাম।
পথে লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কের বাউরা নবীনগর সরকারপাড়া মোড়ে নীলফামারী থেকে আসা একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল আরোহী মেরাজ হোসেন নিহত হন।
মানিকগঞ্জ
শুক্রবার সকালে মানিকগঞ্জের সিংগাইর পৌরসভার কাশিমনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাকচালক নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন চালকের সহকারীসহ আরও তিনজন।
নিহত ট্রাকচালকের নাম বিল্লাল (৪৫)। তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌফিক আজম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মরদেহ উদ্ধার করে সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
(ঢাকাটাইমস/২১জুন/মোআ)

মন্তব্য করুন