শীতে ফুসফুসের সংক্রমণে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৩৬

শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে শ্বাসতন্ত্র সংক্রমণজনিত রোগীর সংখ্যা। শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। এর সঙ্গে ধুলাবালি বাড়ে। এতে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, কোল্ড অ্যালার্জি, ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্টের বাধাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ে। বিশেষ করে শিশু থেকে বয়স্ক, সকলেরই শীতের মরসুমে ফুসফুসের সমস্যা বেড়ে যায়। তার উপর যদি দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টের রোগ সিওপিডি-র মতো রোগের ইতিহাস থাকে। অন্যদিকে রয়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ।

তবে করোনাভাইরাসের সব থেকে খারাপ দিক হলো এই ভাইরাস শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে সরাসরি আক্রমণ করে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠা কিছু মানুষের ফুসফুস অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানা যায়। ফুসফুস সুস্থ রাখা একান্ত জরুরি। যেহেতু মানবদেহের একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ ফুসফুস। মানবদেহে লালচে বাদামি রঙের এই অঙ্গটি থাকে। পেটের ওপর বুকজুড়ে হৃৎপিণ্ডের দুই পাশে ফুসফুসের অবস্থান।

ফুসফুসজনিত অন্য কারণগুলোর মধ্যে নিউমোনিয়া, ভাইরাসজনিত জ্বর, ফুসফুসের ক্যানসার অন্যতম। নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী সাধারণত কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত পড়া, উচ্চমাত্রার জ্বর ও আক্রান্ত দিকে তীব্র বুকের ব্যথা নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারে। শিশু ও বয়স্ক রোগীরা এ রোগে অধিকহারে আক্রান্ত হয়। ভাইরাসজনিত ফুসফুস আক্রান্ত হলে প্লুরিসির সৃষ্টি হয় এবং রোগী শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় তীব্র ব্যথা অনুভব করে।

অনেকেরই ধূমপান করার অভ্যাস থাকে। যা ফুসফুসের জটিলতাকে আরও গুরুতর করে তোলে। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে তাই চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ, সকলেই এই শীত মৌসুমে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেন। এ ছাড়াও এমন কিছু খাবার আছে, যা ফুসফুসের সংক্রমণ রোধ করতে পারে।

কীভাবে আপনার ফুসফুসকে পরিষ্কার করবেন দেয়া হল কিছু পদ্ধতি:

ফুসফুসের ভিতর থেকে টক্সিনগুলো যাতে বের হয়ে যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।

সকালে নাশতা করার আগে ৩০০ মিলিলিটার পানির সঙ্গে ২টি লেবুর রস চিপে পানির সাথে মিশিয়ে পান করুন।

আঙুর, আপেল বা আনারসের জুস বানিয়ে পান করুন, কারণ এসব ফলের জুসে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহের শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার পদ্ধতিকে উন্নত করে।

সকালের নাশতায় ও দুপুরে খাওয়ার সময়ে খাদ্য তালিকায় রাখুন গাজরের জুস। গাজরের জুস দেহের রক্তে ক্ষারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় কলার জুস, নারকেলের শ্বাস, পালংশাক খেতে পারেন কারণ এই খাবারগুলোর মধ্যে আছে পটাশিয়াম যা দেহের বিষাক্ত টক্সিন পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

রাতে ঘুমানোর আগে আপনি ১ কাপ গ্রিন টি পান করুন। এই চা পানের মাধ্যমে আপনার দেহ থেকে সমস্ত টক্সিন বের হয়ে যাবে যা দেহের জন্য ক্ষতিকর। এই পদ্ধতি মেনে চলার সময় এমন কোন কাজ করা যাবেনা যা ফুসফুসের ওপরে চাপ প্রয়োগ করে।

ঠান্ডা লাগলে আদা-চা খেতে নিদান দেন বাড়ির সকলেই। এই আদা হল ফুসফুসের সুরক্ষা কবচ। শুধু ঠান্ডা লাগা নয়, শ্বাসযন্ত্রের যে কোনও সমস্যাতেই আদা প্রাকৃতিক ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ হিসাবে কাজ করে।

ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর গোলমরিচ, ফুসফুসের প্রদাহ রোধ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও, আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে যে সংক্রমণজনিত সমস্যা হয়, তার সঙ্গে মোকাবিলা করতেও সাহায্য করে।

শরীরে যে কোনও রকম সংক্রমণ কমাতে হলুদ অব্যর্থ। হলুদের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান ফুসফুসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হলুদে থাকা ‘কারকিউমিন’ ক্যানসার রোধ করে। এমনকি, ক্যানসার দ্রুত ছড়িয়ে পড়াও আটকায়।

শীত পড়ার আগে থেকেই অনেকে সকালে উঠে খালি পেটে এক কোয়া রসুন খেতে শুরু করেন। মনে করেন, রসুন খেলে বোধ হয় গা গরম থাকে। আসলে রসুনের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান ফুসফুসের সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে।

ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর আখরোট, শুধু মস্তিষ্কের নয়, ফুসফুসের সংক্রমণও রোধ করতে পারে। পাহাড়ি এই বাদামের প্রদাহ রোধকারী ক্ষমতার গুণেই ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়াতে পারে না।

টাটকা সবুজ শাক, যে কোনও রোগের সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষমতা জোগায়। তবে ফুসফুসের জন্য আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম এবং ভিটামিনে ভরপুর পালং, কালে, বকচয় খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা।

ফাইবারে সমৃদ্ধ এই দানাশস্যটি ফুসফুসের জন্য বিশেষ ভাবে উপকারী। আগে জ্বর হলে চিকিৎসকরা ভাতের বদলে বার্লি খাওয়ার নিদান দিতেন। তবে এখন আর শুধু জ্বর হলে নয়, ফুসফুসের সংক্রমণ কমাতেও বার্লির ভূমিকা রয়েছে।

ফুসফুস ভালো রাখতে ব্যায়াম

নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসকে সুস্থ রাখে। বিশেষত হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রংকাইটিসের রোগীদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম উপকারী। এছাড়া এতে শিথিলায়ন হয় বা মানসিক চাপ কমে। এ রকম কয়েকটি ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নিন:

৪-৭-৮ রিলাক্সিং ব্রিদিং: পিঠ সোজা রেখে আরাম করে বসুন। ‘হুস’ আওয়াজ করে মুখ দিয়ে ফুসফুসের সবটুকু বাতাস বের করে দিন। এবার চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে নাক দিয়ে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। সেটা ভেতরে আটকে রাখুন, মনে মনে ৭ পর্যন্ত গুনুন। এবার ঠোঁট গোল করে আবার ‘হুস করে পুরোটা বাতাস বের করে দিন ৮ পর্যন্ত গুনতে গুনতে। কয়েক সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পর পর চারবার এভাবে শ্বাস নিন। এই ব্যায়াম দিনে দুবার করা ভালো। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক চাপ কমে। ঘুমও ভালো হয়।

শ্বাস গোনার ব্যায়াম: এই ব্যায়ামে ক্রমান্বয়ে প্রশ্বাসের সময় ধীর করে আনতে হয়। মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। চোখ বন্ধ করে পর পর কয়েকবার গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ধীরে ধীরে এর গতি কমে আসবে। প্রথমে প্রশ্বাস ছাড়ার সময় এক গুনবেন, তার পরের বার দুই, এভাবে পাঁচ পর্যন্ত। তারপর আবার নতুন করে এক দিয়ে শুরু করুন। এই ব্যায়ামটি দিনে ১০ মিনিট করবেন। এটি এক ধরনের মেডিটেশন বা ধ্যান। এটি মস্তিষ্ককে সজাগ করে ও মনঃসংযোগ বাড়ায়। মানসিক চাপ কমায়।

বেলো ব্রিদিং: মুখ বন্ধ করে চটপট নাক দিয়ে ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ব্যায়াম এটি। প্রতি সেকেন্ডে তিনবার শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার চেষ্টা করুন। শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সময়টি সমান থাকবে। এতে বুকের ও বক্ষচ্ছদার মাংসপেশির দ্রুত ব্যায়াম হবে। তারপর কিছুক্ষণ স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ১৫ সেকেন্ডের বেশি নয়। এটি যোগব্যায়ামের একটি কৌশল। এতে ক্লান্তি ঝরে যায় এবং কর্মস্পৃহা ও উদ্যম বাড়ে।

ঢাকাটাইমস/১১ জানুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :