ক্যানসারজয়ী সাবিনা ইয়াসমিনের বর্তমান হাল কী? গানেই বা কেন অনুপস্থিত

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০৩| আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪৩
অ- অ+

উপমহাদেশের অন্যতম সেরা কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। বাংলা গানের ইতিহাসে তিনি চির অম্লান। ক্যারিয়ারে কণ্ঠ দেয়ছেন ১২ হাজার গানে। অর্জন করেছেন নামিদামি দেশি-বিদেশি বহু সম্মাননা। কিন্তু বহুদিন গানের জগতে অনুপস্থিত জীবন্ত এই কিংবদন্তি। কেমন আছেন ক্যানসারজয়ী এই শিল্পী?

জানা যায়, ২০০৭ সালে সাবিনা ইয়াসমিনের শরীরে মারণ ব্যাধি ক্যানসার ধরা পড়ে। সংবাদটি জানার পর ভেঙে পড়েননি তিনি। তবে মনকে শক্ত রেখে, অসংখ্য ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীর দোয়া ও ভালোবাসায় সেই ক্যানসার থেকে সেরে ওঠেন। সিঙ্গাপুরে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরেন।

এক যুগেরও বেশি সময় আগে ক্যানসার জয়ের পর তার বর্তমান দিনকালই কীভাবে কাটছে। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ক্যানসার থেকে সেরে উঠেছি তো এক যুগ পার হয়ে গেল। কিন্তু এখনো নিয়মিত চেকআপ করাই। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলি।’

বর্তমানে সুস্থ আছেন জানিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার সমসাময়িক অনেকেই তো চলে গেছেন। এন্ড্রু কিশোর, সুবীর দা (সুবীর নন্দী)। তাই কিছু নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করি। বাসায়ই সময় কাটে। নামাজ কালাম পড়ি। পাশাপাশি গানের চর্চাটাও চালু রেখেছি। যেহেতু আমি গানের মানুষ।’

একসময়ের তুমুল ব্যস্ত কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকে কয়েক বছর ধরে প্রায় দেখাই যায় না মাইক্রোফোনের সামনে। কারণটা কী?

সাবিনা ইয়াসমিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখনকার সিনেমায় যে ধরনের গান হয় তাতে আমাকে বা আমার সমসাময়িক শিল্পীদের খুব একটা প্রয়োজন হয় না। আমাদের সংগীত জীবনে আমরা যে ধরনের গান গেয়ে এসেছি, সেই ধরনের সামাজিক সিনেমা এখন তৈরি হচ্ছে না। তাই গান গাওয়াও তেমন হচ্ছে না।’

কিংবদন্তি এই শিল্পীর জন্ম ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরায়। তিনি আজ ৭০ বছরে পা দিয়েছেন। কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান ও নীলুফার ইয়াসমিন তার আপন বোন। বড় বোন ফরিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে ছোট থেকেই দুর্গাপ্রসাদ রায়ের কাছে গান শিখতেন সাবিনা ইয়াসমিন। পরবর্তীতে ওস্তাদ পি সি গোমেজের কাছে একটানা ১৩ বছর তালিম নেন।

মাত্র ৭ বছর বয়সে স্টেজ প্রোগ্রামে অংশ নেন সাবিনা ইয়াসমিন। ছোটদের সংগঠন খেলাঘরের সদস্য হিসেবে রেডিও-টেলিভিশনে গান করতেন নিয়মিত। ১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা এবং ‘মধুর জোছনা দীপালি’ গান দুটির মাধ্যমে তিনি প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তারও আগে ‘নতুন সুর’ নামে ছবিতে প্রথম গান করেন শিশুশিল্পী হিসেবে।

পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে গানের ভুবনে বিচরণ করছেন সাবিনা ইয়াসমিন। বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র রুনা লায়লা ছাড়া তার সমকক্ষ হয়ে আর কেউই এত লম্বা সময় ধরে আধিপত্য বজায় রাখতে পারেননি।

মরমী শিল্পী আব্দুল আলীম থেকে শুরু করে একালের উঠতি গায়কদের সঙ্গেও তিনি একের পর এক গান গেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন উপমহাদেশের বরেণ্য সুরকার আর ডি বর্মণের সুরে গান গাওয়ার। উপমহাদেশের বিখ্যাত দুই কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমার ও মান্না দে’র সঙ্গেও গান গেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন।

খ্যাতিমান এই গায়িকা তার মায়াবী কণ্ঠ দিয়ে বাংলা সংগীতকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন, পুরস্কারও পেয়েছেন দুহাত ভরে। সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেয় একুশে পদক। ১৯৯৬ সালে পান স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার। সেরা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন রেকর্ড ১৪ বার। বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন ছয়টি। জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন দুইবার। ১৯৮৪ সালে বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ থেকে সংগীতের ওপর লাভ করেন ডক্টরেট ডিগ্রি।

এছাড়া ১৯৯০ সালে শেরে বাংলা স্মৃতি পদক, ১৯৯১ সালে বিএফজেএ পুরস্কার ও উত্তম কুমার পুরস্কার, ১৯৯২ সালে অ্যাস্ট্রোলজি পুরস্কার এবং একই বছর নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে পান ‘বেস্ট সিঙ্গার’ পুরস্কার। ২০১৭ সালে দশম স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-দ্য ডেইলি স্টার জীবনের জয়গান উৎসব থেকে পান আজীবন সম্মাননা।

সাবিনা ইয়াসমিন শেষ প্লেব্যাক করেছেন প্রয়াত চিত্রনায়িকা ও নির্মাতা কবরী পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবির ‘দুটি চোখে ছিল কিছু নীরব কথা’ শিরোনামের একটি গানে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি। এছাড়া কবরীর ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবির চারটি গানে সুরও দেন সাবিনা ইয়াসমিন।

(ঢাকাটাইমস/০৪সেপ্টেম্বর/এজে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা