‘ফুটবল সম্রাট’ পেলের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ক্রীড়া ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:০৪

আসল নাম এডিসন অ্যারান্তিস দ্য নাসিমেন্তো। তবে সবার কাছে তিনি পরিচিত পেলে নামেই। ফুটবলের কালো মানিক হিসেবেও পরিচিত তিনি। গোটা বিশ্ব যাকে ফুটবলের রাজা হিসেবে চেনে, ভক্তরা যাকে ভালোবেসে ফুটবল সম্রাট বলে থাকে, তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

গত বছরের এই দিনে সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮২ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে যান এই কিংবদন্তি। তার বিদায়ে শোকের ছায়া নেমে আসে বিশ্বে। সেই শোকের ধাক্কা যেন এখনো রয়ে গেছে গ্রহের ফুটবলে।

পেলে লম্বা সময় কিডনি এবং প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে রুটিন চেকআপের অংশ হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকে আর ঘরে ফেরা হয়নি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২০২২ বিশ্বকাপে তার জন্য প্রার্থনায় বসেন ভক্তরা। পেলে বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখে যেতে পারলেও নতুন বছরের আগে কাঁদিয়ে যান সবাইকে।

১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর সাও পাওলো শহরের ট্রেস কোরাকয়েসে জন্ম নেন তিনি। ওই সময় সেই এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা ও জীবনযাত্রার মান ভয়ংকর ছিল। তখনকার ব্রাজিলীয় সমাজের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী সেখানে বসবাস করত।

মজার বিষয় হচ্ছে, যে বছর পেলে জন্ম নেন, সেই বছরই ট্রেস কোরাকয়েসে পৌঁছে বিদ্যুৎ। তাই বাবা ডনডিনহো বৈদ্যুতিক বাতির (বাল্ব) আবিষ্কারক টমাস আলভা এডিসনের নামের সঙ্গে মিল রেখে ছেলের নাম রাখেন এডিসন অ্যারান্তিস দ্য নাসিমেন্তো। অবশ্য বস্তির বন্ধুরা পেলেকে চিনত ‘ডিকো’ নামে। তবে তিনি ‘কালোমানিক’ নামেও বিখ্যাত।

নাম এডিসনের সঙ্গে মিললেও পেলে ছিলেন খেলার জগতের মানুষ। সম্ভবত তাকে দেওয়া হয়েছিল ফুটবল খেলার সর্বোচ্চ গুণাগুণ। ফুটবলটা ব্রাজিলে ধর্মের মতই। মুখের কথা ফোটার আগেই সেখানে বাচ্চাদের সখ্যতা হয় গোলাকার ওই বলের সঙ্গে। সাও পাওলোর ছেলে পেলের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি ব্যতিক্রম ছিল না।

বাল্যকাল থেকেই ফুটবল সম্রাটকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। যথেষ্ট কষ্ট পোহাতে হয়েছে। তবুও ফুটবল আঁকড়ে ছিলেন। একটি ফুটবল ছিল নিত্যসঙ্গী। রক্তে মিশে ছিল ফুটবল। খেলাটির প্রতি তার ভালোবাসা থাকাটাও স্বাভাবিক। কারণ, বাবা ছিলেন তখনকার শীর্ষস্থানীয় ক্লাব ‘ফ্লুমিনেসের’ ফুটবলার। তার নাম জোয়াও রামোস দ্য নাসিমেন্তো। যিনি ‘ডনডিনহো’ নামেই বেশি পরিচিত। পেলের মায়ের নাম ডোনা সেলেন্তেস আরেন্তেস। বস্তির অলিতে-গলিতে ফুটবল খেলে খুব ছোট বেলাতেই দৃষ্টিকাড়েন পেলে। অর্থাভাবে অনুশীলনের জন্য একটি বলও কিনতে পারতেন না তিনি। তাই পুরোনো মোজায় খবরের কাগজ মুড়িয়ে ফুটবল বানিয়ে খেলতেন। তার প্রতিভা দেখে চোখে পড়ে যায় সান্তোসের গ্রেট ওয়ালডেমার ডি ব্রিটোর। পেলে জীবনের মোড় ঘুরে যায় তখনই। সে সময় পেলের বয়স ছিল ১৫ বছর। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সান্তোস ক্লাবে, যোগ দেন ‘বি’ টিমে। সহজাত প্রতিভা দেখিয়ে এক বছরের মধ্যেই মূল দলে নিজের জায়গা করে নেন পেলে। আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

কথিত আছে, পেলের আবির্ভাবের আগে ‘১০’ নম্বর জার্সি ছিল নিতান্তই একটা সংখ্যা। কিন্তু পেলের আবির্ভাবের পর এই ‘১০’ সংখ্যাটি অন্য রকম এক মহিমা পেয়েছে। ফুটবলে পরবর্তীতে ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলেছেন অনেক কিংবদন্তিই।

মাত্র ১৬ বছর বয়সেই পেলের জাতীয় দলে অভিষেক হয়। প্রথম ম্যাচ খেলেন চিরশত্রু আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। সেই ম্যাচে ব্রাজিল পরাজিত হয় ২-১ গোলে। অভিষেক ম্যাচেই গোল পান পেলে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পান তিনি। ১৯৫৮ সুইডেন বিশ্বকাপে করেন ৫ গোল।

ব্রাজিল এই শিরোপার মাধ্যমে দক্ষিণ আমেরিকার বাইরে ল্যাটিন কোনো দেশ হিসেবে ইউরোপ থেকে বিশ্বকাপ জয় করে। ১৯৬২ সালে গ্রুপ পর্যায়ে মাত্র এক ম্যাচ খেলে পায়ে আঘাত পাওয়ায় বিশ্বকাপের পরবর্তী ম্যাচগুলোতে আর খেলতে পারেননি। ১৯৬৬ সালে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ব্রাজিল। ওই বিশ্বকাপে মাত্র এক গোল করেন ফুটবল সম্রাট।

১৯৭০ মেক্সিকো বিশ্বকাপে ব্রাজিলের দলটি ছিল ইতিহাসের সেরা আক্রমণাত্মক দল। দলে পেলে ছাড়াও ছিলেন রিভেলিনো, জোয়ারজিনহো, কার্লোস আলবার্তো, ফ্যালকাও, গ্যারিঞ্চার মতো তারকারা। পেলে এই বিশ্বকাপে ৪ গোল করেন। ব্রাজিলের হয়ে তিনি বিশ্বকাপে মোট ১২ গোল করেন।

১৯৭৭ সালে পেলে ক্লাব ফুটবল থেকেও অবসর নেন। নিজের হাজারতম গোলটি ব্রাজিলের বস্তিবাসী শিশুদের জন্য উৎসর্গ করেন।

ব্রাজিলের পক্ষে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা পেলে। ২০০৭ সালে ফিফা ৬২ বিশ্বকাপের ফাইনালের পদকটি তার হাতে তুলে দেন। ফলে পেলেই হয়ে যান তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনাল জয় করা একমাত্র ফুটবলার। ফিফার পক্ষ থেকে তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় ঘোষণা করা হয়।

ক্যারিয়ারে এক হাজার ৩৬৬ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন এক হাজার ২৮৩টি। আর ব্রাজিলের জার্সিতে ৯২ ম্যাচে ৭৭টি গোল করেন তিনি। কদিন আগেই যে রেকর্ড ভেঙেছিলেন নেইমার।

অনেকেরই ধারণা, পেলে ইচ্ছে করেই ইউরোপের প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে যাননি। তবে বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। পেলের অনন্য ফুটবলশৈলীর কথা বিবেচনায় নিয়ে তাকে জাতীয় সম্পত্তি ঘোষণা করেছিল নিজ দেশের সরকার। আশঙ্কা ছিল, ইউরোপিয়ানদের কড়া ট্যাকেলের কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে তার ক্যারিয়ার।

কিংবদন্তি এই ফুটবলার পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন গত বিশ্বকাপের সময়ে। চিরবিদায়ের আগে দেখেছেন ব্রাজিলের হার। একরাশ কষ্ট নিয়েই বিদায় বলেছিলেন পৃথিবীতে।

পেলের শেষ ঠিকানা হয় বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু সমাধিক্ষেত্র সাও পাওলোর মেমোরিয়াল নেক্রোপোল একুমেনিকায়। ১৪ তলার আকাশচুম্বী অট্টালিকার এই কবরস্থানকে দেখে মনে হবে একটুকরো ঘন সবুজ বন। ব্রাজিল ফুটবলে তো বটেই, বিশ্ব ফুটবলেও পেলের শূন্যস্থান কখনো পূরণ হওয়ার নয়। রবিনহো, নেইমারসহ অনেককে ভাবা হয়েছিল পেলের উত্তরসূরি। হালের এন্ডরিককেও বলা হচ্ছে নতুন পেলে। ১৭ বছর বয়সী এ তারকাই বলেছেন, ‘কেউ পেলের পায়ের সমান হতে পারবে না।’

(ঢাকাটাইমস/২৯ডিসেম্বর/এনবিডব্লিউ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :