জেনেভায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস এবং জাতীয় প্রবাসী দিবস উদযাপন

সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস এবং জাতীয় প্রবাসী দিবস ২০২৩ উদযাপন করা হয়েছে। শনিবার জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মো. সুফিউর রহমানের সভাপতিত্বে এবং কাউন্সেলর (শ্রম) মোহাম্মদ কামরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই উপস্থিত সকল প্রবাসীদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন দ্বিতীয় সচিব আব্দুল্লাহ বিন মাহবুব, প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন প্রথম সচিব মাসুদ পারভেজ, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকা শীর্ষক পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন প্রথন সচিব (বাণিজ্যিক) রাজীবুল ইসলাম খান, অভিবাসীদের মর্যাদা ও কল্যাণ শীর্ষক পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন কাউন্সেলর (শ্রম) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ড. আমিন আহম্মেদ খোন্দকার ও ড. কাজী মনিরুল ইসলাম।
মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জমাদার নজরুল ইসলাম, সাধারন সম্পাদক শ্যামল খান, ডা. শেখ দিল আফরোজ, শাহনেওয়াজ রহমান, কামাল হোসেন প্রমুখ।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ২০২৩ এবং প্রথমবারের মতো জাতীয় প্রবাসী দিবস ২০২৩ উপলক্ষে আলোচনা সভায় জেনেভায় নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মো. সুফিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা নিশ্চিতকল্পে অনিবাসী বাংলাদেশিদের থেকে আর্থিক রেমিট্যান্সের পাশাপাশি প্রয়োজন নলেজ রেমিট্যান্স।
স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার সকল পর্যায়ে অভিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, দেশের চলমান উন্নয়নে অধিকতর অবদান রাখতে হলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন শ্রমবাজার উপযোগী ও দক্ষ কর্মসংস্থানের জন্য বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের অধিকতর ও নতুনতর দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে তৈরি হতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি স্ব স্ব ক্ষেত্রে সম্মানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত প্রবাসীদের বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নয়নে অধিকতর অবদানের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার প্রবাসীদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৩০ ডিসেম্বরকে ‘জাতীয় প্রবাসী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বৈদেশিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির বাইরে প্রবাসীদের কল্যাণের বিশেষ গুরুত্বের আলোকে জাতীয় ডায়াসপোরা নীতি প্রণয়নে সচেষ্ট রয়েছে। এক্ষেত্রে, প্রচলিত আইনসমূহকে প্রবাসীবান্ধব করা, দ্বৈত ট্যাক্স অবলোপন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিভিন্ন মহলের মতামত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা ও বিশেষ প্রাধিকার প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করেন। অনিবাসী বাংলাদেশিদের প্রথম প্রজন্ম বাংলাদেশের সঙ্গে অতীতের অভিজ্ঞতা ও স্মৃতির মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করলেও পরবর্তী প্রজন্মকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে আমাদেরকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রবাসীদের বাংলাদেশে আরও অধিক বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে প্রবাসীদের সম্পত্তি ও বিনিয়োগের নিরাপত্তা ও তাদের অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি প্রদানে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ।
তিনি বলেন, অভিবাসী কর্মীদের স্বার্থ, নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় সরকার দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশ ও আর্ন্তজাতিক সংস্থাসমূহের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছে।
আলোচনাপর্বে সুইজারল্যান্ডে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রবাসীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। তারা দ্বৈত নাগরিকদের ব্যাংক ঋণ সুবিধা, নিয়মিত কন্স্যুলার ক্যাম্প আয়োজন, বৈধপথে অর্থপ্রেরণের সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ, পেনশন স্কিমে অর্থ প্রেরণের বাধা ইত্যাদি বিষয়ে সরকারেরকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
রাষ্ট্রদূত তাদের পরামর্শ, সুপারিশ ও নানাবিধ সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হন এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। প্রবাসীরা তাদের কল্যাণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের উদ্যোগে ২০২২ ও ২০২৩ সালে পরপর দুবছর সিআইপি (এনআরবি) মনোনীত হওয়ায় ড. আমিন আহম্মেদ খোন্দকারকে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ ড. কাজী মনিরুল ইসলামকে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, আশরাফুল ইসলাম আজাদ, মাসুম খান দুলাল, মোহাম্মদ আকবর আলী, শফিকুল জুনায়েদ আইয়ানসহ আরও অনেকে।
(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

মন্তব্য করুন