মুছাপুর রেগুলেটর দিয়ে দ্রুত নামছে পানি, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

নোয়াখালী ও ফেনীর ভয়াবহ বন্যার পানি নামার জন্য নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর রেগুলেটরের ২৩টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। যেখান দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৭৫৬ ঘনমিটারের বেশি পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত দুদিনের বৃষ্টির কারণে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে ফের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
গত ১২ আগস্ট (সোমবার) রেগুলেটরের গেটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। টানা ১৪দিন খোলা রয়েছে গেটগুলো।
বিষয়টি ঢাকা টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মুন্সি আমির ফয়সাল।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ ভুঁইয়া জানান, রেগুলেটরের তিন মিটার বাই তিন মিটার আয়তনের ২৩টি গেটের সবগুলো খোলা রয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় জোয়ার হলে এটি নিজে থেকে নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়।
সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল আলম জানান, রেগুলেটর দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৭৫৬ ঘনমিটারের বেশি পানি নেমে যাচ্ছে। জোয়ার-ভাটার কারণে কয়েক ঘণ্টা পানি নিষ্কাশন বন্ধ থাকলেও অল্প সময়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সি আমির ফয়সাল বলেন, চৌদ্দগ্রামের গুনবতি থেকে মুছাপুর ক্লোজার পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার হেক্টর নদী এলাকার পানি এখান দিয়ে নির্গত হচ্ছে।
ভারতের ত্রিপুরা থেকে উজানের পানি আন্তঃসীমান্ত কাকড়ি ও ডাকাতিয়া নদী হয়ে ছোট ফেনী নদীর মুখে মুছাপুর ক্লোজার গেটের মাধ্যমে সন্দ্বীপ চ্যানেল হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, কাকড়ী নদীর পানি ডাকাতিয়া নদীতে মিশেছে। ডাকাতিয়া নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লা জেলার বাগসারা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি পরবর্তীতে চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি কুমিল্লা-লাকসাম চাঁদপুর হয়ে মেঘনা নদীতে মিশেছে। যা লক্ষ্মীপুরের হাজিপারা পর্যন্ত বিস্তৃত।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ প্রকৌশলী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর ১৫ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ৪০ মিলিমিটার পানি কমেছে। সর্বশেষ ৩ ঘণ্টায় পানি কমেছে ১০ মিলিমিটার। অর্থাৎ পানি দ্রুতই কমে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাত কমে আসলে এবং এভাবে ক্লোজার দিয়ে পানি নামতে থাকলে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্যার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে এবং মানুষ অনেকটাই স্বস্তি পাবে।
এদিকে বন্যার কারণে জেলার ৪৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও মুছাপুর ক্লোজারের কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানান তিনি।
তবে গত দু-দিন জেলায় বন্যার পানি ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি নেমে গেলেও শনিবার রাতের বৃষ্টিতে আবারও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত জেলায় ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিক থেকে ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদিন বৃষ্টি হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন আরা জানান, জেলার ৯০২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ৬৫ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এতে সকল মানুষকে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইনসহ গোখাদ্য সরবরাহ চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২৫আগস্ট/পিএস)

মন্তব্য করুন