মিরপুরে প্রকাশ্যে ২২ লাখ টাকা ডাকাতি: অস্ত্রসহ ৬ জেলা থেকে গ্রেপ্তার ৬

রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে দিনের আলোয় মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর ২২ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় ছয় জেলা থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত টাকা, বিদেশি অস্ত্র, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, জাল টাকা ও অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (১৮ জুন) মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, চক্রের মূলহোতা জলিল মোল্লা, মোস্তাফিজ (৫০), পলাশ (২৮), দিপু (৫০), সোহাগ (৩৫) ও মাইক্রোবাস চালক জাফর (৩৩)।
ঢাকা, গাজীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ ও যশোরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পেশাদার ডাকাত চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ ডাকাতির সঙ্গে জড়িত।
চক্রটি মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী রাসেল ও তার ভগ্নিপতি জাহিদুল হক চৌধুরীর গতিবিধি নজরদারির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে এবং সুযোগ বুঝে ডাকাতির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।
গত ২৭ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাসেল ও জাহিদুল মিরপুর ১১ সি-ব্লকের বাসা থেকে ২১ লাখ টাকা ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বরের অফিসে যাচ্ছিলেন। পথে শেরে বাংলা স্টেডিয়াম ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝামাঝি গলির মুখে মোটরসাইকেলে আসা মুখোশধারী ৭-৮ জন ডাকাত তাদের গতিরোধ করে। এ সময় একজন ডাকাত পিস্তল ঠেকিয়ে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।
এ সময় জাহিদুল বাধা দিলে ডাকাতরা গুলি ছোড়ে এবং চাপাতি দিয়ে আঘাত করে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়।
ঘটনার ভিডিও একজন পথচারী মোবাইল ফোনে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে তা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
পরে আহত জাহিদুল বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মামলার পরপরই ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে ডিবির একাধিক টিম তদন্তে নামে। প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি হাই-এস মাইক্রোবাস শনাক্ত করে চালক জাফরকে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
এরপর তথ্য বিশ্লেষণ করে একযোগে ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ ও যশোরে অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে ডাকাতি, হত্যা ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ৫ লাখ ৩ হাজার টাকা, ১০৬টি বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, ২ লাখ ১২ হাজার টাকার জাল নোট, একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি গুলি, একটি চাপাতি এবং তিনটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
ডিবির দাবি, এই চক্র আরও কয়েকটি বড় ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি কামরাঙ্গীরচর এলাকায় ৫০ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই এবং গত বছরের ২০ অক্টোবর ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে গুলি চালিয়ে ৫২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা। এসব ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে গ্রেপ্তারকৃতরা।
ডিবি আরও জানায়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ ডাকাতি কাজে চক্রটি আধুনিক প্রযুক্তি, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার এবং ছদ্মবেশ ধারণ করতো। অন্য অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং লুণ্ঠিত সম্পদ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৮জুন/এলএম/মোআ)

মন্তব্য করুন