ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
| আপডেট : ০৬ জুলাই ২০১৭, ০৮:২৬ | প্রকাশিত : ০৬ জুলাই ২০১৭, ০৮:২০

দিনাজপুরের ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। মসজিদটিতে দেখা দিয়েছে ফাটল, ছাদ চুঁয়ে পড়ছে পানি, খুলে খুলে পড়ছে পলেস্তরা ও ভাস্কর্য শিল্প। মসজিদটি ধ্বংস হলে মুছে যাবে প্রায় ৩০০ বছরের মুসলিম ঐতিহ্য। প্রত্নতাত্বিক বিভাগের অবহেলা আর উদাসীনতায় অন্ধকারের গহীনে হারিয়ে যাবে প্রাচীন মুসলিম সভ্যতার এক ইতিহাস।

আইনি জটিলতার কারণে স্থানীয়ভাবে মসজিদটি মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ ইতোমধ্যে কোটি টাকা ব্যয় করে সাজানো হয়েছে মসজিদের সীমানা প্রাচীরসহ চারপাশ।

নয়াবাদ মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, চারিদিকে সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে। আরও তৈরি করা হয়েছে সুদৃশ্য উদ্যান, মাদ্রাসা এবং পর্যটকদের বসার স্থান। পর্যটকদের জন্য মনোরম বসার জায়গা, ওজুখানা, গোসলখানা, ল্যাট্রিন, বাহারি ছাউনী, ফুল ফলে শোভায়িত করা হয়েছে চারিধার। ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদকে নিয়ে চারিধারে সব দারুণ আয়োজন।

কিন্তু দুঃখের বিষয় মসজিদের মূল অবকাঠামোর বিন্দুমাত্র সংস্কার ও মেরামত করেনি প্রত্নতাত্বিক বিভাগ তথা বাংলাদেশ সরকারের ঐতিহাসিক সংরক্ষণ বিভাগ। ইতোমধ্যে মসজিদের ছাদসহ দেয়াল ও গম্বুজে দেখা দিয়েছে ফাটল। টেরাকোটা ভাস্কর্যগুলো খুলে খুলে পড়ছে। ছাদ চুঁয়ে পড়ছে পানি। ভেতরের পশ্চিম দেয়াল জুড়ে সবুজ শেওলার দাগে ভর্তি। বাইরের দেয়ালে প্লাস্টারগুলোতে লোনাধরে খুলে খুলে পড়ছে চুন সুড়কির প্রলেপগুলো। মসজিদের তিনটি গম্বুজে ও দেয়ালের প্রায় স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঝড়ের দিনে বাতাসের সঙ্গে মসজিদের মিনারগুলো নড়াচড়া করে। যেকোনো সময় মসজিদটি ভেঙে পড়তে পারে এই ভয়ে বর্ষার দিন মুসল্লিরা ঐতিহাসিক মসজিদটির ভেতরে নামাজ আদায় না করে বাইরের বারান্দায় নামাজ আদায় করেন।

মন্ত্রণালয়ের আইনে উল্লেখ আছে, ঐতিহাসিক নির্দশনের মূল অবকাঠামো স্থানীয়ভাবে কোনো মতেই মেরামত করা যাবে না।

দিনাজপুর জেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তরে ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে ঢ্যাপা নদীর কোল ঘেঁষে নয়াবাদ গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ। ইসলামি ট্যারাকোটা ভাস্করসমৃদ্ধ এই মসজিদটি কবে কার আমলে স্থাপিত হয় তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। মসজিদের শিলালিপি ফারসি ভাষায় অস্পষ্ট থাকায় সঠিক অনুবাদ সন তারিখ উদ্ধার করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। নির্মাণ কারিগরদের বংশধর বর্তমানে মসজিদের রক্ষনাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত।

বর্তমানে কারিগরদের বংশধর মসজিদের মোতয়াল্লি সভাপতি মো. আব্দুল মান্নানের মতে-মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ্ আলম এর সময় বিশিষ্ট ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব শায়খ মুজিব আলার তত্ত্বাবধায়নে কান্তজিউ মন্দির নির্মাণের কারিগররা তাদের শৈল্পিক হাতের ছোঁয়ায় এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের নির্মাতা মিস্ত্রিদের মধ্যে নিয়াজ নেওয়াজ ওরফে কালু মিস্ত্রি প্রসিদ্ধ। এদের বংশধর এই পর্যন্ত মসজিদের দেখভাল করে আসছে।কান্তনগর মন্দিরের নির্মাণকারী মুসলমান মিস্ত্রিরা নামাজ আদায়ের জন্য মন্দিরের এক কিলোমিটার দূরে নয়াবাদ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদ নির্মাণের অনুমতি, জমি ও খরচা মহারাজার কাছ থেকে পান।

এ ব্যাপারে দিনাজপুর প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন বোর্ডে’র সভাপতি দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম ঢাকাটাইমসকে জানান, ইতোমধ্যে মসজিদটির বেশ কিছু সংস্কার কাজ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে আরও কাজ করা হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জনশীল গোপাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, দিনাজপুরের ঐতিহ্য শিল্প, সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কান্তজীউ মন্দিরের পাশাপাশি নয়াবাদ মসজিদের সংস্কার করা হয়েছে। আগামীতে আরও কাজ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৬জুলাই/এসএস/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

অর্থ উদ্ধারে পুলিশের সহায়তা চেয়ে পাননি, পরে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার গার্মেন্টস কর্মী

ফরিদপুর জেলা বাস মালিক সমিতির নতুন কমিটির শপথ

সিলেটে ২ কোটি টাকার ১৪ ট্রাক ভারতীয় চিনি জব্দ

মির্জাপুরে ব্যারিস্টার সীমান্ত চেয়ারম্যান, বাকি দুই পদে জিতলেন যারা

চোরাই পথে লক্ষ্মীপুরে ঢুকছে ভারতের নিম্নমানের চিনি

বোয়ালমারীতে টানা চতুর্থবার উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন মুশা মিয়া

লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল-ক্লিনিক নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি

ভালুকা উপজেলায় চেয়ারম্যান রফিক, বাকি দুই পদে বিজয়ী যারা

শরীয়তপুরে প্রাক্তন স্বামীর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত অন্তঃসত্ত্বা নারী

দিনাজপুরের তিন উপজেলায় হাফিজুর, মিল্টন ও ফাহিম চেয়ারম্যান নির্বাচিত

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :