চিলমারীতে অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলছে ধান-চাল সংগ্রহ

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় সরকারি খাদ্যগুদামে নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলছে ধান-চাল সংগ্রহ। লটারিতে বিজয়ী কৃষকদের তালিকায়ও রয়েছে নানা অসংগতি। আইনজীবী, পুলিশ সদস্যসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যক্তির মোবাইল নম্বর রয়েছে বিজয়ী কৃষকদের তালিকায়। ধান ক্রয়ের পদ্ধতি আধুনিকায়ন করা হলেও তালিকায় অনিয়ম ও ভুয়া কৃষকের নাম যুক্ত হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে স্থানীয়ভাবে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করার অসৎ উদ্দেশে এমন করা হয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ছয় ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার কৃষকের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ২২৯ জন কৃষককে নির্বাচিত করা হয়। এ মৌসুমে ৩২ টাকা কেজি দরে ৬৮৮ মেট্রিক টন ধান, ৪৫ টাকা কেজি দরে উপজেলার ৪০ জন মিলারের (চাতাল ব্যবসায়ীর) মাধ্যমে এক হাজার ৯৬ মেট্রিক টন চাল ও ৩৪ টাকা কেজি দরে ৯০ মেট্রিক টন গম ক্রয় করার কথা।
কিন্তু লটারিতে বিজয়ী কৃষকদের তালিকায় উল্লিখিত বেশির ভাগ নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে। আবার অনেকে কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা নয় বলেও জানিয়েছেন।
রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের নির্বাচিত কৃষক লাইলী খাতুন, যার ক্রমিক নম্বর এক। লাইলী বেগমের তালিকায় যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে সেটি মূলত নরসিংদী জেলার এক আইনজীবীর।
থানাহাট ইউনিয়নের কৃষক জিল্লুর রহমান। যার ক্রমিক নম্বর ৩৩, তালিকায় যে ফোন নম্বরটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি চিলমারী থানার এক পুলিশ সদস্যের।
উপজেলা খাদ্য গুদাম কার্যালয় সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ২০ জন কৃষকের কাছ থেকে ৬০ মেট্রিক ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সেখানেও রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি।
থানাহাট ইউনিয়নের বালবাড়িরহাট এলাকার আবুল হক। বসতভিটা ছাড়া আবাদি জমি নেই তার। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা শহরে রিকশা চালাচ্ছেন। আবুল হোসেন এলাকায় না থাকলেও তার নামে ধান দিয়েছে সিন্ডিকেট চক্র। আবুল হোসেনের মা নছিমন বেওয়া বলেন, 'আমাদের বাড়ি ভিটা ছাড়া অন্য কোনো আবাদি জমি নেই। আমার ছেলের নামে কে ধান দিল জানি না।'
চিলমারী ইউনিয়নের কড়াই বরিশালের এলাকার জহুরদ্দিন। তার ক্রমিক নম্বর ২৭। জহুরুদ্দিনের ছেলে শহিদুল জানান, তারা কোনো ধান দেননি। কিন্ত এই ব্যক্তির নামে খাদ্য গুদামে ধান দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানায়, লটারিতে বিজয়ী কৃষক কখনও ধান দেয় না। মূলত ধান দেয় ব্যবসায়ীরা। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে ধান সংগ্রহ হয়ে আসছে। এটা নতুন নয়।
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আরেফিন বলেন, প্রকৃত কৃষক ছাড়া ধান ক্রয় করার সুযোগ নেই। তাছাড়া তালিকা তৈরি করে উপজেলা কৃষি অফিস। ভুল ফোন নম্বরগুলো কিভাবে আসল তারাই ভালো জানবে।
চিলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুমার প্রণয় বিষাণ দাস বলেন, অ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন করার সময় কৃষকরা ভুল নম্বর দিয়েছে। ফলে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলাউদ্দিন বসুনিয়া তালিকায় ফোন নম্বরের অসংগতির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় ধান সংগ্রহের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে যাদের নাম্বার ভুল তাদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে না।
সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে।
(ঢাকাটাইমস/০৬জুন/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন