বেতন-ভাতার দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ

গাজীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২০, ১৬:২৫ | প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল ২০২০, ১৬:২৩

গাজীপুরে একদিকে বকেয়া বেতন ভাতার দাবিতে আন্দোলন বিক্ষোভ, চলছে লাগাতার আর অন্য দিকে করোনা ঝুঁকির মধ্যেই হাজার হাজার শ্রমিক ফিরছেন গাজীপুরে। পেটের দায়ে কাজ করার জন্য কর্মস্থলে ফেরা আর বেতন না পেয়ে রাস্তায় দাঁড়ানো ছাড়া হতভাগ্য এসব শ্রমিকদের যেন আর কিছুই করার নেই। গত ১৬ এপ্রিল বেতন ভাতা দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের পর বকেয়া বেতনের দাবিতে প্রায় প্রতিদিন গাজীপুরে বাড়ছে শ্রমিক অসন্তোষ। এই শ্রমিক বিক্ষোভ ও আন্দোলনের মধ্যেই মালিক পক্ষের বার্তা পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে ফিরছেন শ্রমিকরা।

শিল্প পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, প্রায় প্রতিদিন গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ হচ্ছে। এতে লকডাউনের মধ্যে শ্রমিকদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের। ঘটছে বিক্ষোভ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং সড়ক অবরোধের মতো ঘটনা। গত দুই সপ্তাহে অন্তত অর্ধশতাধিক কারখানা শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছে।

শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ার ফলে জেলায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে লকডাউন। আর এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়েছে কয়েকগুণ। এছাড়া অব্যাহতভাবে কাজে যোগদানের জন্য দলে দলে গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরছেন শ্রমিকরা। এ নিয়ে স্থানীয় অধিবাসী ও জনপ্রতিনিধিরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্বাস উদ্দিন খোকন বলেন, ২৬ তারিখের পর কারখানা খোলার খবর পেয়ে দলে দলে শ্রমিকরা গাজীপুরে আসছেন। তাদের কে করোনা আক্রান্ত, কে সুস্থ- সেটি বলা যাচ্ছে না। এমনিতে করোনা সংক্রমণের হটস্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে গাজীপুর। এই অবস্থায় বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকদের আগমনের কারণে করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করতে পারে।

জানা গেছে, বেতন ভাতার দাবিতে অব্যাহত আন্দোলনের মধ্যেই বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ি এলাকায় দুরন্ত গামের্ন্টসের শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। এছাড়া সকাল ১০টা থেকে গাজীপুরের টঙ্গী বিসিকে একটি ও চেরাগ আলী এলাকায় পার্লপ্রিন্স এপারেলস নামক অপর একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই ও বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করেন শ্রমিকরা। এসময় তারা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ঢাকা টাঙ্গাইল ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে কিছু সময় যানজট সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কোনাবাড়ির দুরন্ত গামের্ন্টসের শ্রমিকরা জানান, তাদের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মার্চের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। একাধিকবার তারিখ দিয়েও কারাখানা কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ না করে টালবাহানা করছে। ধার-দেনা করে কতদিন চলা যায়, এখন কেউ ধারও দিতে চায় না। এছাড়া বাড়ি-ভাড়া, দোকান বাকি পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার সাংবাদিকদের বলেন, দুরন্ত গার্মেন্টসের শ্রমিকরা দুই মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা পাশের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নেন। পরে কারখানা মালিকের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনার পর কর্তৃপক্ষ ৭ মে বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিলেও দুপুর দেড়টার দিকে তারা সড়ক থেকে চলে যায়। একই দাবিতে টঙ্গীর বিসিক এলাকা ও চেরাগআলী এলাকায় দুটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। এসময় শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস লকডাউনের মধ্যেই গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে ৬৯১টি পোশাক কারখানা তাদের উৎপাদন কাজ শুরু করেছে। এসব কারখানা মধ্যে বিজিএমইএ এর ৩৯৬, বিকেএমইএ এর ৪০টিসহ অন্যান্য কারখানা রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ৮৩৪টি কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের শ্রমিকদের বেতনভাতা পরিশোধ করেছে। এখনো শ্রমিকদের বকেয়া বেতন রয়েছে ২৩৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের। বকেয়া বেতন ভাতার দাবি ও কারখানা লে অফ প্রত্যাহার চেয়ে ঘটছে শ্রমিক অসন্তোষ।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই সীমিত পরিসরে কাজ চলছে গাজীপুরের বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানায়। কর্মস্থলে যোগ দিতে গ্রামের বাড়ি থেকে শ্রমিকরা এখনো আসছেন গাজীপুরে। পথের ভোগান্তি ও পুলিশের বাধা সহ্য করে পেটের দায়ে তারা নিজ কর্মস্থলে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন আগত এসব শ্রমিকরা।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুরের জৈনা বাজার এলাকা দিয়ে গত কয়েক দিনের মতো আজও দলে দলে শ্রমিকরা গাজীপুর এবং ঢাকায় প্রবেশ করছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভেঙে ভেঙে ট্রাক, পিকআপ ও অন্যান্য হালকা যানবাহনে চড়ে শ্রমিকরা আসছেন কর্মস্থলে। যাত্রাপথে সড়ক মহাসড়কে পুলিশের বাধা ও তল্লাশির মুখে পুড়ে তাদের ভেঙে ভেঙে আসতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

এদিকে, গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে ৬ শতাধিক খোলে দেয়া কারখানায় কাজে ফিরছেন শ্রমিকরা। সকাল থেকে দলে দলে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন তারা। করোনা ভাইরাস সুরক্ষায় কারখানার ভেতরে শ্রমিকদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে কারখানা কর্তৃপক্ষ নিয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি মঞ্জুরুল হক বলেন, লকডাউন মানার জন্য মহাসড়কে চেকপোস্টে গাড়িগুলোতে তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। এখন গত কয়েকদিনের তুলনায় অনেক কম শ্রমিক বিভিন্ন মহাসড়ক দিয়ে গাজীপুরে প্রবেশ করছে।

(ঢাকাটাইমস/৩০এপ্রিল/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :