জিহ্বা বলে দেবে আপনি কতটা সুস্থ

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৭ জুলাই ২০২১, ১২:৪২| আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২১, ১২:৪৪
অ- অ+

অসুস্থতা কিংবা সুস্থতা প্রকাশ করার জন্য জিহ্বার ভূমিকা অপরিসীম। জিহ্বাকে স্বাস্থ্যের সূচক বলা হয়। কেননা জিহ্বা একজন ব্যক্তির সুস্থতার লক্ষণ কিংবা অসুস্থতার লক্ষণ খুব স্পষ্টভাবেই জানান দেয়। এই কারণে চিকিৎসকরা প্রাথমিক পর্যায়ে সুস্থতা পর্যবেক্ষণ শুরু করেন জিহ্বা দিয়ে। জিহ্বা না থাকলে কিন্তু আপনি কথা বলতে পারতেন না।

জিহ্বা আমাদের খাদ্য গিলতেও সাহায্য করে। জিহ্বার দুই পাশে থাকা লালা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে এনজাইম খাদ্যবস্তুকে পিচ্ছিল করতে সহায়তা করে। অতঃপর সেই খাদ্য জিহ্বাই কিন্তু পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার রাস্তার সহজ করে দেয়।

জিহ্বার মাধ্যমে আমরা খাদ্য গ্রহণ করে থাকি। খাদ্য গ্রহণ করার সময় জিহ্বাতে খাবারের কণা, তেল-মসলা, বিভিন্ন বস্তু লেগে যায়। তাই একে যথাসময় পরিষ্কার করা জরুরি। দাঁত পরিষ্কার করার পাশাপাশি একেও পরিষ্কার রাখতে হয়। কিন্তু কোনো কারণে যদি পরিষ্কার করা না হয় তবে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয় এবং ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের কারণে ধীরে ধীরে জিহ্বা কালো হয়ে যেতে থাকে এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

দাঁত মাজার মতোই পরিষ্কার করা দরকার জিহ্বা। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দিনে দু’বার সঠিক নিয়মে জিভ পরিষ্কার করা উচিত। না হলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে শরীরে।

প্রতিদিন জিহ্বা পরিষ্কার না করলে তার উপর সাদা রঙের আস্তরণ জমা হয়ে যেতে পারে। তা যেমন দেখতে অস্বস্তিকর, তেমনই অস্বাস্থ্যকরও। কারণ সেখানে জন্মাতে থাকে নানা ধরনের ব্যাকটিরিয়া। আর সেগুলো বহু সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে হজমের সমস্যা থেকে শুরু করে বেশ কিছু অঙ্গের কাজকর্মেও ব্যাঘাত ঘটে।

প্রতিদিন জিহ্বা পরিষ্কার করার উপকার

হজমের সুবিধা: হজমের প্রক্রিয়াটি শুরু হয় মুখ থেকেই। জিহ্বা ময়লা জমলে সব পাচনরস ঠিক করে খাবারে মিশতে পারে না। ফলে হজমের সমস্যা হয়। জিহ্বা পরিষ্কার থাকলে হজমশক্তি বাড়ে।

দূষণমুক্ত শরীর: রাতে ঘুমের সময়ে মুখের মধ্যে নানা ধরনের ‘টক্সিন’ বা দূষিত বস্তু জমতে থাকে। সকালে জিহ্বা পরিষ্কার করলে সেগুলো সাফ হয়। এগুলি জমে থাকলে তার প্রভাব পড়ে শরীরের নানা অঙ্গের উপর। সেই সব অঙ্গের কাজে ব্যাঘাত ঘটে।

পরিষ্কার জিহ্বা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ

মুখের দুর্গন্ধ কমে: অনেকেরই মুখে দুর্গন্ধ হয়। তার প্রধান কারণ হতে পারে অপিরষ্কার জিহ্বা। নিয়মিত জিভ পরিষ্কার করলে দুর্গন্ধের সমস্যা কমে।

স্বাদ নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে: ময়লা জমে থাকলে জিহ্বার স্বাদকোরকগুলো ঢাকা পড়ে যায়। ফলে স্বাদ নেওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকে। জিহ্বা পরিষ্কার থাকলে খাবারের স্বাদ বেশি পাওয়া যায়।

দাঁতের ক্ষয় কমে: জিহ্বার ময়লায় এক ধরনের ব্যাকটিরিয়া জন্মায়, যা দাঁতের ক্ষতি করে। তাই দাঁতের ক্ষয় আটকাতেই প্রতিদিন জিহ্বা পরিষ্কার করা উচিত।

চিকিৎসকের মতে, জিভে নানারকম ব্যাকটেরিয়া জমে। এই সমস্ত ব্যাকটেরিয়া মুখের স্বাস্থ্যের ক্ষতির পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে। এই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রতিদিন অবশ্যই জিহ্বা পরিষ্কার করা দরকার।

জিহ্বায় যেমন ব্যথা হয় তেমনি নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধও হয়ে থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ যারা নিয়মিত খান তাদের ক্ষেত্রে জিহ্বায় এ ধরনের ফাঙ্গাস পড়তে পারে। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে আপনি ভরসা রাখতে পারেন ঘরোয়া তিন উপায়ে। জেনে নিন জিহ্বার ফাঙ্গাস দূর করার সঠিক উপায়-

লবণ পানি

লবণে রয়েছে অ্যান্টিসেপ্টিক এবং ক্লিঞ্জিং উপাদানসমূহ। মুখের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতে তাই লবণ পানির জুড়ি মেলা ভার। এজন্য হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে মুখে নিয়ে কুলকুচি করতে হবে কিছুক্ষণ। অতঃপর মুখ থেকে পানি ফেলে আবারো একই নিয়মে কুলকুচি করুন কয়েকবার।

বেকিং সোডা

দাঁতের ময়লা পরিষ্কারেও বেকিং সোডার তুলনা হয় না। ঠিক তেমনই জিহ্বার ফাঙ্গাস দূর করতে বেকিং সোডা হতে পারে ঘরোয়া এক মোক্ষম দাওয়াই। এক গবেষণায় জানা যায়, বেকিং সোডায় রয়েছে সোডিয়াম বাইকার্বোনেট যা ফাঙ্গাস সংক্রমণ দূর করে। এজন্য এক কাপ গরম পানিতে বেকিং সোডা মিশিয়ে মুখে নিয়ে কুলি করুন।

টকদই

প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক রয়েছে টকদইয়ে। ওরাল ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে প্রোবায়োটিক কাজ করে। এতে মুখে ভালো ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঘটে, ফলে খারাপগুলো ধ্বংস হয়। এজন্য জিহ্বায় ফাঙ্গাস সংক্রমণ হলে প্রচুর টকদই খেতে হবে। এ সমস্যার সমাধানে দিনে অন্তত তিনবার টকদই খাওয়া উচিত।

লেবুর রস

লেবুর রস মুখের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কাজ করে। মুখের সাদাভাব দূর করে। লেবুর রস মুখে দিন। এরপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

রসুন

রসুনের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান। এটি মুখ থেকে ব্যাকটেরিয়া দূর করে। মুখের সাদাভাব দূর করতে রসুনের কোয়া চিবাতে পারেন।

অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল ও প্রদাহরোধী উপাদান জিহ্বা সাদা হওয়া প্রতিরোধে কাজ করে। অ্যালোভেরার রস মুখে দিন। কিছুক্ষণ রেখে কুলি করুন।

জিহ্বা স্ক্র্যাপার এবং টুথব্রাশ

জিহ্বা স্ক্র্যাপার এবং টুথব্রাশ উভয়ই জিহ্বার ব্যাকটিরিয়া নির্মূল করতে পারে। তবে বেশিরভাগ গবেষণায় দেখা গেছে যে দাঁত ব্রাশ ব্যবহারের চেয়ে জিহ্বার স্ক্র্যাপার ব্যবহার আরও কার্যকর।

(ঢাকাটাইমস/২৭জুলাই/আরজেড/এজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ফকিরাপুলে ৯ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ৩, মাদক কারবারিদের গুলিতে ডিবির দুই সদস্য আহত
৪৯৫ রানে থামল টাইগাররা
যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী বোমা জিবিইউ-৫৭ /বি, ইরানকে কাবু করতে পারবে না
পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না ইরান, ট্রাম্প বলছেন উল্টো: মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা