সাদা না বাদামি চিনি, কোনটি খাবেন?

চিনি খাওয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে যাচ্ছেন নিয়মিতভাবে। তাদের মতে, ধীরে ধীরে খাবারে চিনি ব্যবহার কমাতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যে শর্করা জাতীয় খাবার থাকে, তাতে যে পরিমাণ চিনি থাকে, তা আমাদের দেহে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। পরে দেহে তা শক্তি উৎপাদন করে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চিনি গ্রহণ করলে দেহের জন্য তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ভেবে এখন অনেকেই সাদা চিনির চেয়ে বাদামি রংয়ের চিনি বেছে নিচ্ছেন। সাদা ভাতের চেয়ে বাদামি ভাত, সাদা পাউরুটির চেয়ে বাদামি পাউরুটি বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বলে যে ধারণা ও বিতর্ক চলছে, তারই মতো সাদা ও বাদামি চিনির পার্থক্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে এখন।
তুলনামূলকভাবে কম শোধন করা হয় বলে সাদা চিনির চেয়ে বাদামি চিনি দেখতে আলাদা হয়। তাই সাদা চিনির চেয়ে আসলেই কি বাদামি চিনি বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।
ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এক টেবিল চামচ বাদামি চিনিতে ১৭ কিলো ক্যালরি থাকে। আর একই পরিমাণ সাদা চিনিতে থাকে ১৬ কিলো ক্যালরি।
আখ থেকে প্রস্তুত করার পর কাঁচা-চিনির রং থাকে বাদামি। কারণ এতে গুড়য়ের অস্তিত্ব থাকে। আখ থেকে রস বের করে গরম পানিতে ধোয়া এবং শোধন করার পর যে তরল পাওয়া যায় তাতে শতকরা ৯৬ভাগ সুক্রোজ থাকে। আর শতকরা চারভাগ থাকে উদ্ভিজ্জ উপাদান।
এই তরল শুকিয়ে যে চিনি পাওয়া যায় সেটার রং হয় সোনালি বা বাদামি। পুষ্টি উপাদানের মধ্যে দ্রবিভূত অবস্থায় শতকরা ৪৬ ভাগই থাকে সুক্রোজ ও চিনির অন্যান্য উপাদান। এছাড়া শতকরা তিনভাগ থাকে প্রোটিন। অন্যান্য উপাদানের মধ্যে খুব অল্প পরিমাণে থাকে ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার। এছাড়াও পাওয়া যায় কপার, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক ও ভিটামিন বি।
এই বাদামি চিনি থেকে পরিশোধিত করে যে সাদা চিনি প্রস্তুত করা হয় তাতে ৯৯.৯ শতাংশই থাকে সুক্রোজ।
গুড়ের অস্তিত্ব থাকার কারণে বাদামি চিনি একটু ভেজা ভেজা হয়। আর এই চিনিতে ৩.৫ শতাংশ গুড় থাকলে হালকা এবং ৬.৫ শতাংশ গুড় থাকলে গাঢ় বাদামি রং হয়। গুড়ের অস্তিত্বের কারণে সাদা চিনির চাইতে বাদামি চিনিতে মিষ্টির পরিমাণ বেশি থাকে।
বাদামি চিনি দিয়ে কোন খাবার তৈরি করলে সেটার রং পরিবর্তন করে দিতে পারে। সাদার চাইতে বাদামি চিনির উপকারিতা বেশি, তবে সত্যি বলতে দুটোর পুষ্টি উপাদানে মোটা দাগে তেমন কোন পার্থক্য নেই।
সাদা চিনিতে শতকরা ৯৯.৯ ভাগই থাকে সুক্রোজ। আর বাদামি চিনিতে শতকরা ৯৭ ভাগ সুক্রোজ, দুইভাগ পানি ও একভাগ অন্যান্য উপাদান থাক।
এক চা-চামচে সাদা চিনিতে থাকে প্রায় ১৬ কিলো-ক্যালোরিজ। আর একই পরিমাণ বাদামি চিনিতে থাকে ১৭ কিলো-ক্যালোরিজ।
তবে বাদামি চিনিতে গুড়ের কারণে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।
আর সাদার চিনির পরিবর্তে বাদামি চিনি খাওয়ার অভ্যেস করলে পরিমাণে কম ব্যবহার করলেও হবে। কারণ সাদার চাইতে বাদামি চিনির মিষ্টি বেশি।
তাই বলা যায় বাদামি চিনি স্বাস্থ্যের জন্য আলাদা কোন উপকার বয়ে আনেনা। ওজন কমাতে বাদামি চিনি খাওয়ার অভ্যাস মোটেই খুব স্বাস্থ্যকর নয়।
(ঢাকাটাইমস/২সেপ্টেম্বর/আরজেড/এজেড)

মন্তব্য করুন