আওয়ামী পরিবারের ছাত্রদল সভাপতি: আলোচনার নতুন মোড়

যে কোনো সময় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি হতে পারে এমন গুঞ্জন চলছিল বেশ কিছুদিন ধরে। শীর্ষ পদে কারা আসতে পারেন তা নিয়েও আলোচনা ছিল সংগঠনের ভেতরে বাইরে। পদ পেয়েছেন আলোচনায় থাকা নেতারাই। কিন্তু বিপত্তি ঘটেছে নতুন কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণকে ঘিরে। কারণ তার বাবাসহ পরিবারের একাধিক সদস্য আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের উপজেলা পর্যায়ের পদধারী নেতা। ফলে বিষয়টি নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের ভেতরে বাইরে আলোচনা-সমালোচনা চলছে রবিবার কমিটি ঘোষণার পর থেকে।
যদিও শ্রাবণের পরিবার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তিনি পরিবার থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন। পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কও নেই। গ্রামের বাড়িতেও যাওয়া আসা নেই।
রবিবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণকে। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে সাইফ মোহাম্মদ জুয়েলকে।
এছাড়া সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয়েছে রাশেদ ইকবাল খান, ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়াকে মনোনীত করা হয়েছে।
এদিকে শ্রাবণ যখন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বোচ্চ পদে আসীন তখন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই তার পরিবারের সদস্যদের।
শ্রাবণের ভাই কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম বলেছেন, ‘শ্রাবণ ছাত্রদলের দায়িত্ব পেয়েছে শুনেছি। আসলে এ নিয়ে আমাদের পরিবারের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। কারণ, আমরা সবাই আওয়ামী পরিবারের সদস্য, একমাত্র সে ছাড়া। ভিন্ন রাজনীতি করার কারণে আমাদের সঙ্গে তার ১২-১৩ বছর কথা হয় না।’
শ্রাবণ বাড়িতেও যান না বলে জানান কাজী মুস্তাফিজ।
অবশ্য শ্রাবণ বিপরীত মেরুর রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হলেও এতে কোনো সমস্যা নেই বলে ২০১৯ সালেই জানিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সদ্য বিলুপ্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ এর আগেও আলোচনায় এসেছেন।
২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন শ্রাবণ। সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী হওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। ওই সম্মেলনে ভোটে হেরে তিনি সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোনীত হন।
শ্রাবণ যখন প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রার্থী হন, সেই সময় তার বাবা রফিকুল ইসলাম ও ভাইয়েরা যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, ‘ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শনের কারণে শ্রাবণের সঙ্গে তাদের পারিবারিক কোনও সম্পর্ক নেই। সে (শ্রাবণ) বাড়িতে আসে না এবং পরিবারের কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে না।’ শ্রাবণের বাবা কাজী রফিকুল ইসলাম যশোরের কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান।
ওইসময় বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শ্রাবণের বিষয় কথা বলতে গিয়ে নিজের উদাহরণ দিয়ে মির্জা ফখরুল তখন বলেছিলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে বাবা-ছেলের আলাদা দলের রাজনীতি করাটা দোষের কিছু না। ছাত্রজীবনে বাবা একটা দলের রাজনীতি করতেন আর আমি করতাম অন্য দলের। এতে কোনো সমস্যা হয়নি।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাজী রফিকুল ইসলামের বড় ছেলে কাজী মুস্তাফিজুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। মেজো ছেলে কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। সেজো ছেলে কাজী আজাহারুল ইসলাম মানিক উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক।
স্থানীয় নির্বাচনে দলের বিপরীতে প্রার্থী হওয়ায় শ্রাবণের ভাইয়েরা পদ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে।
কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘শ্রাবণের বাবা কাজী রফিকুল ইসলাম আমাদের দলের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান। তার (শ্রাবণ) এক ভাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ইউপি নির্বাচন করায় দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন। একই কারণে আরেক ভাই উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পদ থেকে বহিষ্কার হয়েছেন।’
তবে শ্রাবণের ছাত্রদলের রাজনীতি করায় দোষের কিছু দেখছেন না কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার রুহুল আমি। তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও শ্রাবণ ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতে দোষের কিছু নেই।’
ঢাকাটাইমস/১৮এপ্রিল/এফএ

মন্তব্য করুন