সংগীত পরিচালক মহিদুল হাসান মনের উত্থানের গল্প

ছোটবেলা থেকে গানের প্রতি প্রবল ইচ্ছা এবং ভালোবাসা থেকেই সংগীত জগতে আসা সুরকার ও সংগীত পরিচালক মহিদুল হাসান মনের। পারিবার থেকে তেমন সাপোর্ট ছিল না। নিজের চেষ্টা এবং মেধা দিয়ে আজকের অবস্থানে তিনি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন তার হারমোনিয়ামে হাতেখড়ি। শিখেছিলেন ফুফাতো ভাই মাহমুদুর রহমান মামুনের কাছে।

এসএসসি এবং এইচএসসিতে প্রথম বিভাগে পাস করে ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে। হতে পারতেন ব্যাংক কর্মকর্তা বা কোনো করপোরেট অফিসের হিসাবরক্ষক। কিন্তু তিনি পেশা হিসেবে সংগীতকে বেছে নেন। পড়াশোনা চলাকালীনই সংগীতের তালিম নেন প্রখ্যাত গীতিকার এবং সুরকার মিল্টন খন্দকারের কাছে।

প্রায় ১০ বছর মিল্টন খন্দকারের সংস্পর্শে থাকেন মহিদুল হাসান মন। হয়ে ওঠেন প্রিয় ছাত্র। এরপর ধীরে ধীরে অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু করেন। তার পথচলাকে আরও মসৃণ করে দেন প্রখ্যাত সুরকার এবং সংগীত পরিচালক সুবল দাসের ভাগ্নে সংগীত পরিচালক সোহেল নিজামী। তিনিই মহিদুলকে অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে দেন।

এরপর বিভিন্ন শিল্পীর মাধ্যমে একের পর এক নতুন গান বাজারে নিয়ে আসতে থাকেন মহিদুল হাসান মন। জনপ্রিয় শিল্পী মনির খানের ‘যে ব্যথা দিয়েছো আমায়’ গানটির মাধ্যমে তার প্রথম কাজ শুরু হয়। এরপর তিনি সাজু, মহসিন খান, সাথী, সুমন বাপ্পি, ইমন খানসহ অনেকের গানই কম্পোজ করেন। ধীরে ধীরে তার নাম প্রচার হতে শুরু করে। তিনি সফলতার দেখা পান।

এরপর মিউজিক কম্পোজিশন এবং সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর একটি কোর্স সম্পন্ন করেন মহিদুল হাসান মন। পাশাপাশি মেধাবী সংগীত পরিচালক মুশফিক লিটুর কাছ থেকে নেন নানা পরামর্শ। পরবর্তীতে তিনি রাজধানীর বনশ্রীতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘অফ ট্রাক’ নামে একটি অডিও রেকর্ডিং স্টুডিও। বর্তমানে সেই স্টুডিওর নাম ‘মন মিউজিক স্টুডিও’।

এরই মধ্যে অনেক জ্ঞানীগুণী সুরকার এবং সংগীত পরিচালকের সঙ্গে মিউজিক কম্পোজার হিসেবে কাজ করেছেন মন। সৈয়দ আব্দুল হাদী, সাবিনা ইয়াসমিন, ন্যান্সি, পড়শীসহ ‘চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ’, ‘ক্লোজআপ ওয়ান’, ‘খুদে গানরাজ’-এর শিল্পীদের সঙ্গেও তার অনেকগুলো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিউটি, বিন্দুকনা, ঝুমা, শাহিন খান, আশিক, গামছা পলাশ, কামরুজ্জামান রাব্বি, রিংকু, শফি মন্ডলসহ অনেকের সঙ্গে কাজ করেছেন।

মহিদুল হাসান মনের হাত ধরেই বর্তমান সময়ের আলোচিত শিল্পী রাজু মন্ডল অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন। রাজুর ‘সাই রাব্বানা’ গানটি দেশ-বিদেশে ভালো সাড়া ফেলে। এটির সুর এবং সংগীত করেন মহিদুল হাসান মন। এছাড়া ফজলুর রহমান বাবুর ‘মিছে মায়া’, ‘ইন্দুবালা’ মুভির ‘কৃষ্ণ জানে রাধা জানে’, কাজী শুভর ‘তুই বড় বেইমান’, আতিফ আহমেদ নিলয়ের ‘বুক পিঞ্জিরার পাখি’, ফারদিন খানের ‘লাশ’সহ অসংখ্য গান রয়েছে মনের সৃষ্টির ঝুড়িতে।

বর্তমানে তিনি তার নিজের প্রতিষ্ঠান এবং ইউটিউব চ্যানেল ‘মন মিউজিক স্টুডিও’তে বেশি যত্নের সঙ্গে কাজ করছেন। সুরকার এবং সংগীত পরিচালক হিসেবে বিটিভিতে সংগীত পরিচালনার কাজ করছেন। বেশ কিছু মুভির গানের সংগীত পরিচালনা করেছেন শরীয়তপুরের ছেলে মহিদুল হাসান মন। বর্তমানে পারিবারিক সাপোর্ট, উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা সফলতার সঙ্গে তিনি তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন।

(ঢাকা টাইমস/১৯ জুলাই/এএইচ)