ভাজা নাকি কাঁচা বাদাম, কোনটির কী গুণ? জানুন

পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অনেকেই সকালে এক মুঠো পানিতে ভেজানো কাঁচা বাদাম খেয়ে থাকেন। চিনা বাদাম সহজলভ্য। তাই সেটি খাওয়ার চলই বেশি। কিন্তু চিনা বাদাম ভাজা খেলে কি আর সেই উপকারগুলো পাওয়া যায় না? কী মনে করেন পুষ্টিবিদরা?
চিনা বাদামে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। এটি শরীরে কোনও রোগকে বাসা বাঁধতে দেয় না। তাই প্রতিদিনই চিনা বাদাম খেতে পারেন। শরীরে মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকলে চিনা বাদাম খুবই উপকারী। কারণ এটি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। চিনা বাদাম শরীরে ফ্যাট জমতে সাহায্য করে। এটি রক্তের উচ্চচাপ কমায়। অবিসিটি কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকলে তা কমাতে সাহায্য করে।
গবেষকরা দেখেছেন, যারা নিয়মিত কাঁচা বাদাম খেয়ে থাকেন, তাদের শরীরে নানা পুষ্টিকর উপাদান প্রবেশ করে। তার প্রভাবে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কাঁচা বাদামের পুষ্টিগুণ হাড়ের জোর বাড়ায়। পাশাপাশি, মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়, ক্যানসারের আশঙ্কাও দূরে রাখে।
কাঁচা বাদামে থাকে ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিনের মতো নানা উপাদান। এ সব মিলে কাজের ক্ষমতাও বাড়ায়। প্রতিদিন যদি অল্প করে কাঁচা বাদাম খাওয়া যায়, তা হলে কর্মক্ষমতা এক বারে অনেকটা বেড়ে যেতে পারে।
ভাজা নাকি কাঁচা- কোন বাদাম খাব বা কোনটা খেলে বেশি উপকারিতা? প্রায়শই অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যায়। সত্যি বলতে, দুই ধরনের বাদামেই রয়েছে উপকারিতা। কাঁচা বাদামে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া থাকে যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আবার ভাজা বাদাম হারিয়ে ফেলে কিছু পুষ্টিগুণ। তবে ভাজা বাদামের বদলে যদি কাঁচা বাদাম খেতে পারেন, যদিও স্বাদ একইরকম লাগবে না কিন্তু এটি বেশি উপকারী।
কীভাবে খাবেন?
কাঁচা বাদাম খেয়ে ঠিকভাবে হজম করতে পারেন না এমন লোকের সংখ্যা নেহাতই কম নই। এক্ষেত্রে পরামর্শ হল- অন্তত মিনিট দশেক জলে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর বাদামের উপরের পাতলা আবরণ উঠে যাবার পর তা খেতে পারেন যা সবার জন্যই উপকারী।
কাঁচা বাদামে যেসব উপকারিতা মিলবে
কাঁচা বাদামে মিলবে প্রোটিন
বাদামে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন যা মাংসপেশী তৈরি ও শরীর গঠনে কাজ করে। তাছাড়া নিয়মিত বাদাম খেলে হার্টের সমস্যা, ব্রেস্ট ক্যানসার, কোলন ক্যানসার ইত্যাদি মারাত্মক সমস্যা থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে।
হাড়ের সমস্যায় কাঁচা বাদাম
নিয়মিত কাঁচা বাদাম খাওয়ার অভ্যাস আপনার হাড় ভালো রাখবে। তাছাড়া বয়স বাড়ার সাথে সাথে নানারকম অসুখ দেখা দেয়। এর মধ্যে একটি হল হাড়ের সমস্যা। আর এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে নিয়মিত বাদাম খান।
আয়রনের অভাব পূরণ
নিয়মিত কাঁচা বাদাম খাওয়ার অভ্যাস আপনার বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করবে। তাছাড়া চিনা বাদামে থাকা প্রয়োজনীয় আয়রন রক্তে লোহিতকণিকার কার্যক্রমে সাহায্য করে। পাশাপাশি বাদামে থাকা ক্যারোটিন ও ভিটামিন ই ত্বক ও চুল সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
এ সব পুষ্টিগুণ কি নষ্ট হয়ে যায় ভাজা বাদাম খেলে? তেমনও নয়, বলে বক্তব্য গবেষকদের। ভাজা বাদামেও মিলবে উপকারিতা। ভাজা বাদামে থাকে ভাল কোলেস্টেরল। সঙ্গে থাকে প্রোটিন এবং ফাইবার। তাই ভাজা বাদাম খেলে বদহজমের সমস্যা দূর হয়। রক্তের শর্করার মাত্রা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ভাজা বাদাম খেলে দাঁতের ক্ষয়ও কমে।
সুপার শপ থেকে ভাজা বাদাম সরাসরি না কিনে কাঁচা বাদাম কিনে ভেজে খেতে পারেন। অতিরিক্ত লবণ, চিনি কিংবা তেল থাকে সংরক্ষণ করা ভাজা বাদামে।
চিনা বাদাম খাওয়ার নিয়ম
প্রতিদিন রাতে ১০-১৫টি চিনা বাদাম ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে সেগুলো খান। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রতিদিন যদি খাদ্য তালিকায় একমুঠো বাদাম রাখেন তাহলে অবশ্যই কম ওজন। বাদাম শরীরে শক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
চিনা বাদাম আমন্ডের মতই মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে। কারণে বাদামে প্রচুর পরিমাণে বি৩ রয়েছে। এটি স্মৃতি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। চিনা বাদামের মাখন বা পি-নাট বাটারও শরীরের জন্য খুব উপকারী। চিনা বাদাম ভেজেও খেতে পারে। শুকনো কড়াইয়ে রোস্ট করে নিতে পারে। তাতে স্বাদ অনেকটাই বেড়ে যাবে। এছাড়া যে কোনও রান্না যেমন আলু ভাজা, সুজি, পায়েস - ব্যবহার করতেই পারেন। চিনা বাদাম পোলাওতেও দেওয়া যায়। অনেকে মাংসেও ব্যবহার করে থাকেন। প্রতিদিন কাঁচা বা ভাজা খেলেও কোনও সমস্যা নেই। এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। চিনা বাদাম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

মন্তব্য করুন