১১ বছরেও কার্যকর হয়নি জাবি শিক্ষার্থী জুবায়ের হত্যার বিচার

১১ বছর অতিবাহিত হলেও বিচার কার্যকর হয়নি জুবায়ের হত্যার। ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইংরেজি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদকে কুপিয়ে জখম করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পর দিন ভোরে হাসপাতালে জুবায়েরের মৃত্যু হয় । জুবায়ের পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মদিনাবাগনা বলাপাড়ার তোফায়েল আহমেদের ছেলে।
এ ঘটনায় ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হামিদুর রহমান বাদী হয়ে খন্দকার আশিকুল ইসলাম আশিক, রাশেদুল ইসলাম ও খান মো. রইসের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১০-১২ জনকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন।
এরপর ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলায় পাঁচজনকে ফাঁসি ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুজনকে খালাস দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র খন্দকার আশিকুল ইসলাম আশিক, খান মো. রইছ ওরফে সোহান, জাহিদ হাসান, দর্শন বিভাগের মো. রাশেদুল ইসলাম রাজু এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মাহবুব আকরাম।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় শিক্ষার্থী হলেন, দর্শন বিভাগের অরূপ ও কামরুজ্জামান সোহাগ, প্রাণ রসায়ন বিভাগের নাজমুস সাকিব তপু, পরিসংখ্যান বিভাগের অভিনন্দন কুণ্ডু ও সফিউল আলম সেতু এবং ইতিহাস বিভাগের মাজহারুল ইসলাম। এদের মধ্যে সোহাগ, মাজহারুল, সেতু, অভিনন্দন ও তপু আদালতে রায় ঘোষণার সময় হাজির ছিলেন। পরবর্তীতে এদের কারাগারে পাঠানো হয়।
এর প্রায় দুই সপ্তাহ পর ঢাকার আদালত জামিন নামঞ্জুর করে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিলে আশিক, আকরাম, অরূপ ও সোহান কাঠগড়া থেকে পালিয়ে যান। তখন থেকে পলাতক রয়েছেন তারা। পরবর্তীতে জানা যায়, তারা মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে রাজু ও জাহিদ সেদিন আদালতে হাজির হননি। রাজু পরবর্তীতে আত্মসমর্পণ করলেও জাহিদ এখনো পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পর ২০১৮ সালে পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং দুজনের যাবজ্জীবন সাজা বহাল রাখে হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন সাজার রায় পাওয়া ছয় আসামির মধ্যে বাকি চারজন আপিল করে খালাস পেয়ে যান।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কামরুজ্জামান সোহাগ, পরিসংখ্যান বিভাগের মাজহারুল ইসলাম, শফিউল আলম সেতুও অভিনন্দন কুণ্ডু অভি।
আদালত পাঁচজনকে ফাঁসির রায় ঘোষণা করলেও এখনো পর্যন্ত পলাতক আসামিদের খুঁজে বের করে এবং বিদেশে অবস্থানরত আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার কার্যকর না করার দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ শীর্ষক ব্যানারে একটি আলোচনা সভা ও ডকুমেন্টরি স্ক্রিনিংয়ের আয়োজন করে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, হত্যার ১১ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও বিচার কার্যকর না হওয়া নিঃসন্দেহে প্রশাসনের ব্যর্থতা। আদালতের ভেতর থেকে প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া পালিয়ে যাওয়া প্রায় অকল্পনীয়। ক্ষমতাসীন সরকারের সহযোগিতা পায় বলেই আসামিরা এখনো পর্যন্ত বিদেশে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত বিচার কার্যকর না হবে আমরা আমাদের আন্দোলন অব্যহত রাখব।
(ঢাকাটাইমস/০৯জানুয়ারি/এলএ)

মন্তব্য করুন