পায়রা নদীতে ভেসে এলো ৩৫ ফুট লম্বা মৃত তিমি মাছ

উপকূল জেলা বরগুনার পায়রা নদীর তীরে জোয়ারে ভেসে এসেছে ৩৫ ফুট লম্বা একটি মৃত তিমি মাছ। তিমি মাছের মরদেহটি জোয়ারে ভেসে এলে বনের মধ্যে আটকে যায়। সোমবার শেষ বিকালে মৃত তিমিটি স্থানীয়রা দেখতে পায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে এবং খবর পেয়ে বনবিভাগ, পরিবেশকর্মী ও স্থানীয়রা একনজর দেখতে ভিড় জমায় সেখানে।
স্থানীয়রা জানান, দুপুরে সদর উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের ছোনবুনিয়ার চর এলাকায় অর্ধগলিত মাথাবিহীন তিমিটি আটকে যায়।
তারা জানান, রাতে জোয়ারের পানিতে মৃত তিমি মাছের দেহটি ভেসে এসে আটকে যেতে পারে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, বন বিভাগ, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন।
স্থানীয় ইউনুস মৃধা বলেন, মাছটির যে অংশটুকু ভেসে এসেছে এটা অনেক বড়। এত বড় তিমি আমরা কখনো দেখিনি। এটার শরীরের বিভিন্ন স্থান পচে যাওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জোয়ারের পানি নেমে গেলে সংরক্ষিত বনের চর থেকে মৃত তিমিটি দৃশ্যমান হয়। তিমির মুখের দিকের অংশ পচে গন্ধ ছড়াচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে কোনো কারণে মৃত্যুর পর সাগরে ভাসতে ভাসতে এটি উপকূলীয় জেলা বরগুনায় চলে এসেছে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, বন বিভাগ, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসছেন।
আমতলী-তালতলী ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও টেংরাগিরি সুরক্ষা কমিটির সমন্বায়ক আরিফুর রহমান বলেন, মৃত তিমি মাছটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫ ফুট। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাছটির হাড় সংরক্ষণ করে গবেষণার কাজে ব্যবহার করতে পারে। মঙ্গলবার পটুয়াখালী থেকে বিশেষজ্ঞ টিম আসবে, তারপর বলা যাবে এর সার্বিক অবস্থা কী। মাছটির হাড় সংরক্ষণ করে মাংস মাটিতে পুঁতে ফেলা সম্ভব।
সমুদ্রের নীল অর্থনীতি, উপকূলের পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-২ বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, এটি মূলত কুঁজো তিমি (মেগাপ্টেরার নোভায়েংলিয়া)। বালীন তিমির একটি প্রজাতি। বৃহত্তর রোরকুয়েল তিমির প্রজাতি, প্রাপ্তবয়স্কদের দৈর্ঘ্য ৩৯-৫২ ফুট এবং ওজন প্রায় ২৫-৩০ মেট্রিক টন হয়ে থাকে। কুঁজো তিমির দেহের একটি স্বতন্ত্র আকার রয়েছে, দুটি লম্বা বুক পাখনা এবং একটি নিচু করা মাথা। এদের চেনা যায় আচরণ দিয়ে। এরা পানির উপরিভাগে নিঃশ্বাস নিতে আসে। এরা তিমি পর্যবেক্ষকদের মাঝে জনপ্রিয়। পুরুষরা ১০ থেকে ২০ মিনিট স্থায়ী একটি জটিল গান উৎপন্ন করতে পারে, যা তারা একসঙ্গে কয়েক ঘণ্টা ধরে গাইতে পারে। একটি গ্রুপের সমস্ত পুরুষ একই গান তৈরি করে, যা প্রতিটি মৌসুমে আলাদা। এর উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয়, যদিও এটি উত্তেজনাকে প্ররোচিত করে সঙ্গমের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।
এই গবেষক মৃত্যুর কারণ হিসেবে জানান, এরা বছরে ১৬০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে, প্রবল জোয়ারে এসে ভাটায় অনেক সময় আটকে যায়। এ কারণে গতিপথ আটকে মারা যেতে পারে। এর যে দৈর্ঘ্য দেখে মনে হচ্ছে এটি একটি পুরুষ প্রজাতির তিমি।
বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা বলেন, পায়রা নদীর ছোনবুনিয়ার চরে অর্ধগলিত একটি তিমি মাছের মরদেহ পাওয়া গেছে। কী কারণে তিমিটি মারা গেছে সঠিকভাবে তা এখনো জানা যায়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(ঢাকা টাইমস/০২জুলাই/এসএ)

মন্তব্য করুন