টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যায় ডুবছে কুমিল্লার মানুষ, ছাড়ছেন বাড়িঘর

গত দুই দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আকস্মিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধের ভেতরে থাকা শতাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোমতি নদীর পাড়ে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষ বন্যা আতঙ্কে বাড়িঘর ছাড়ছেন।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোথাও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না সে বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সাময়িক মেরামতও করা হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারী বর্ষণ ও ভারতীয় ঢলে সীমান্তবর্তী চৌদ্দগ্রাম, বুড়িচং, দেবিদ্বার উপজেলা ও কাকড়ী এবং গোমতি নদীর পাড় সংলগ্ন বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে আছে সেখানকার প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। অন্যদিকে নাঙ্গলকোট উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের ডাকাতিয়া নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোও আজ দুই দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুর ৩টার দিকে পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনীর একাধিক টিম নদী রক্ষা বাঁধ পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘গোমতী নদী রক্ষা বাঁধের যেখানে সমস্যা দেখা দিচ্ছে সেখানে বালুর বস্তা দেওয়া হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এভাবে পানি প্রবাহ ক্রমাগত বাড়তে থাকলে বাঁধের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে। তবে নদীপাড়ের মানুষজনকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছি। বাঁধে ফাটল বা ঝুঁকি আছে এমন পরিস্থিতি দেখলে তা পাউবো কিংবা স্থানীয় প্রশাসনকে জানানোর জন্যও আহ্বান জানাচ্ছি।’
পাউবো সংশ্লিষ্টরা বলেন, জেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস ও দাউদকান্দি এলাকার গোমতী চর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার রাত থেকেই বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা জানান, বাঁধের কিছু অংশ ঝুঁকিপূর্ণ। সকাল থেকে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।
এদিকে জেলার আদর্শ সদর উপজেলায় গোমতী চরে পানিবন্দি লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের সহায়তায় ৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে জেলা প্রশাসন।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক বলেন, গোমতী নদীর বাঁধ রক্ষায় জেলা প্রশাসন, পাউবো, সেনাবাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ কাজ করছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সদর উপজেলার শালধর প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমড়াতলী প্রতিবন্ধী উচ্চ বিদ্যালয় ও ধনেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২১আগস্ট/পিএস)

মন্তব্য করুন