ফেনীবাসীর ভালোবাসায় উচ্ছ্বসিত একুশে পদকপ্রাপ্ত দুই ভাষা সৈনিক

ফেনী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:৫৯| আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২০:১১
অ- অ+

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য একুশে পদকপ্রাপ্ত ফেনীর আলোকিত সন্তান বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ও অধ্যাপক ড. শরিফা খাতুনকে শুক্রবার সকালে নিজ জেলা ফেনীতে সংবর্ধনা দিয়েছে দৈনিক ফেনীর সময় ও আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশন।

জেলা পরিষদ ভবনের ড. সেলিম আল দীন মিলনায়তনে সংবর্ধিতরা ছাড়াও অতিথি হিসেবে ছিলেন- জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজ আহম্মদ চৌধুরী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম, বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক রফিক রহমান ভূঁইয়া, সোনাগাজী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহম্মদ মহীউদ্দিন চৌধুরী, পিপি হাফেজ আহম্মদ।

দৈনিক ফেনীর সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন- জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা নুরুল আবছার ভূঁইয়া।

সংবর্ধিত বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেছেন, এখানে আমাকে সংবর্ধনা প্রদান করায় আমি আপ্লুত। অনুষ্ঠানের শুরুতে ছোট ছোট শিশুরা নেচে-গেয়ে আমাদের অভ্যর্থনা দিয়েছে। এরা আমাদের শিশু, আপনাদের সন্তান। এরা বড় হয়ে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিবে। শিশুদের সুশিক্ষা দেবেন। সন্তানের মাঝে পিতা বেঁচে থাকবেন। সন্তানকে সুসন্তান গড়ে তুলতে পারলে একুশের চেতনা সমুন্নত হবে।

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, প্রয়াত খাজা আহম্মদ সাপ্তাহিক সংগ্রাম পত্রিকার মাধ্যমে ফেনীতে ভাষা আন্দোলনকে জাগ্রত করেছিলেন। আমরা এই আন্দোলনে শরিক হয়েছি। সংগঠিত করেছি।

এছাড়া ডা. তোফাজ্জল হোসেন, মাওলানা আবদুল ওহাব, আবুল কাসেম, লুৎফুর রহমান, আমির হোসেন, জিয়াউদ্দিন আহমদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন বিচারপতি।

তিনি বলেন, তখন আমির হোসেন ও জিয়াউদ্দিন আহমদ ফেনী কলেজের ছাত্রসংসদের জিএস ছিলেন। আমি ছিলাম সাহিত্য সম্পাদক। আরো অনেক বন্ধু ফেনীতে ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করেছিলেন। আমাদের আন্দোলনে পুলিশ বাধা দিতে সাহস করেনি।

তিনি আরো বলেন, ভাষা আন্দোলনের বড় সাফল্য হচ্ছে বাঙালির জাতীয় স্বত্তা। বাংলা ভাষার মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে। আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে দেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের উপর। ব্যক্তিগত স্বার্থ পরিহার করে দেশকে গড়ে তুলতে পারি তাহলে জাতি হিসেবে আমরা উপকৃত হব। কারো কাছে মাথা নত করব না। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আছে বলে পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছি। আমরা পরনির্ভর থাকব না, স্বনির্ভর হব। নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করে দেশকে গৌরবান্বিত করব।

অধ্যাপক ড. শরিফা খাতুন বলেছেন, ২১ ফেব্রুয়ারি রক্তঝরা দিন ছিল। সেই রক্তঝরা দিনের স্মৃতি এখনো আমার মনে গেঁথে আছে। ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরে জনগণ এ দেশকে স্বাধীন করেছে। আমরা পেয়েছি একটি সার্বভৌম বাংলাদেশ। ভাষার জন্য সবার সংগ্রাম ছিল, সবাই জয়ী হয়েছে। এখন বাংলাদেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিকভাবে দেশের অবস্থান অনেক সুদৃঢ়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভাষায় বলা, লিখা, শোনা ও প্রকাশের দক্ষতা আছে এ ধরনের শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। যাতে করে ভবিষ্যত প্রজন্ম ভালো করে বাংলা ভাষা আয়ত্ব করতে পারে। তাহলে বাংলা ভাষার আরো উন্নত হবে। বিশ্বের কাছে আরো প্রতিষ্ঠিত হব।

তিনি আরো বলেন, আমি ফেনীর মেয়ে, ফেনীর বউ। আপনারা আমাকে আজ যেভাবে সম্মানিত করেছেন এটা আমার জন্য ঐতিহাসিক পাওনা। মানুষকে ভালোবাসার, মূল্যায়ন করার, সম্মানিত করার আপনাদের যে আবেগ এটা লক্ষ্যণীয়।

শরিফা খাতুন আরো বলেন, ফেনীবাসী অনেক কৃতি সন্তানের জন্ম দিয়েছে। এখনো জন্ম দিচ্ছে, লালন করছে। মাতৃস্থানে এসে এ ধরনের সংবর্ধনা পাব- এটা আমার কল্পনাতীত ছিল। তবু আজকে আমাদের এত শুভেচ্ছা আমি কল্পনাও করতে পারি নাই। আমরা আপনাদের দেখছি, আপনারা আমাদের দেখছেন। এটা বড় সৌভাগ্যের। আমার মন ভরে গেছে। অন্যকে সম্মান করলে নিজেও সম্মানিত হওয়া যায় এই কথাটা স্মরণ রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে দৈনিক ফেনীর সময় পরিবারের পক্ষ থেকে সংবর্ধিত দুই অতিথিকে ক্রেস্ট তুলে দেন সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনসহ পরিবারের সদস্যরা।

এছাড়া ফেনী জেলা পরিষদ, ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শিল্পকলা একাডেমি, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ), বালিগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ, দৈনিক ফেনীর সময় লেখক-পাঠক ফোরাম, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা), দৈনিক যুগান্তর স্বজন সমাবেশ, ছাগলনাইয়া প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ভাষা শহীদ সালাম স্মৃতি পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, আর্য্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, পায়রা শিশু কিশোর সংগঠন, পঞ্চবটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, রোটারি ক্লাব অব ফেনী অপূর্ব, রোটার‌্যাক্ট ক্লাব অব ফেনী অপূর্ব, সাহিত্য সাময়িকী শিল্পতীর্থ, জেলা কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশন, ডেফোডিল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল, ফেনী সরকারি কলেজ সমাজকর্ম বিভাগের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৪ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/এলএ)

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে, আশাবাদ নজরুল ইসলাম খানের
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির ৮৮৭তম সভা অনুষ্ঠিত 
হেলমেট বাহিনী যুগের অবসান ঘটেছে: ডিএমপি কমিশনার
মিশা সওদাগরের বোনের বাসা থেকে ৬০ ভরি স্বর্ণ চুরি, বাড়ির মালিক গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা