ইউনাইটেড গ্রুপের কর্ণধার হাসান মাহমুদ রাজার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ২২:৫৪| আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:১৬
অ- অ+

আওয়ামী লীগ আমলে সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর অন্যতম এই ইউনাটেড গ্রুপ। এই গ্রুপের কর্ণধার হাসান মাহমুদ রাজার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

রবিবার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (আমলি গুলশান) আদালত এ পরোয়ানা জারি করেন। মামলাটির বাদী ইউনাইটেড গ্রুপের এতদিনের অংশীদার ফরিদুর রহমান খান।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার গোলাম কিবরিয়া যোবায়ের ঢাকা টাইমসকে হাসান মাহমুদ রাজার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

হাসান মাহমুদ রাজা বর্তমানে ইউনাইটেড গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টা ও ইউনাইটেড হাসপাতালের পরিচালক। জাল-জালিয়াতি, প্রতারণা ও ব্যবসায়িক লেনদেনে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে রাজাসহ চারজনের বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়।

অন্য আসামিরা হলেন- ইউনাইটেড হাসপাতালের এফসিএ মোস্তাক আহমেদ, সাব্বির আহমেদ ও কোম্পানি সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে বলে ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন আইনজীবী গোলাম কিবরিয়া যোবায়ের।

এরইমধ্যে মামলাটির তদন্ত শেষে রবিবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সংস্থাটির তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। পরে শুনানি শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। শুনানিতে বিবাদিরা কেউ ছিলেন না।

এদিকে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই সংক্রান্ত কোনো পরোয়ানা এখনও গুলশান থানায় আসেনি।’

থানা সূত্রে জানা গেছে, বছরখানেক আগে প্রতারণার অভিযোগে আদালত থেকে হাসান মাহমুদ রাজার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি জামিন নিয়েছিলেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বাদি ফরিদুর রহমান খান ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেডের এক লাখ ৫৯ হাজার ৭৮৯ শেয়ারের মালিক। তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। করোনাকালীন ২০২০ সালের মে মাসে হাসান মাহমুদ রাজারসহ মামলা অন্য তিন আসামি ফরিদুর রহমানকে জোরপূর্বক তার পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করে। একসময় আসামিরা বেশ কিছু কাগজে সই করিয়ে নেয়।

পরবর্তীতে ইউনাইটেড হাসপাতালে ফরিদুর রহমানের থাকা শেয়ার হস্তান্তর করার জন্য নানাভাবে প্ররোচিত করে। ওইবছরের ডিসেম্বরে প্রতি শেয়ার একহাজার নির্ধারণ করে আসামিরা এক লাখ ২০ হাজার ১৬৫ শেয়ার ফরম-১১৭ তে স্বাক্ষর করতে বলে। যেখানে উল্লেখ করা হয়- যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরে গিয়ে শেয়ার হস্তান্তর বিষয়ে অবশিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।

এক্ষেত্রে ইউনাইটেড গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টা ও ইউনাইটেড হাসপাতালের পরিচালক হাসান মাহমুদ রাজাকে টাকা পরিশোধের নথিসহ আরজেএসসি-তে গিয়ে শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ করতে বলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এজাহারনামীয় আসামিরা কোনো ধরণের পদক্ষেপ নেননি।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ইউনাইটেড হাসপাতাল বার্ষিক মূলধনের বিবরণী রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে দাখিল করে। সেখানে হাসান মাহমুদ রাজা, আহমেদ ইসমাইল হোসেন, আক্তার মাহমুদ রানা নাম দেখিয়ে ওই রিটার্ন দাখিল করা হয়। এতে ফরিদুর রহমান খানের পাওনার বিপরীতে লভ্যাংশ না দিয়ে বিগত তিন বছর প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

এছাড়া ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ফরিদুর রহমান খানকে অবহিত না করে ইউনাইটেড হাসপাতালের পরিচালক পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে হাসান মাহমুদ রাজাসহ এজাহারনামীয় আসামিরা বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে। মামলায় ৪২০/৪০৬/১০৯ ও ৫০৬ ধারা অভিযোগ আনা হয়েছে।এর আগে শেয়ারের লভ্যাংশ নিয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ ওঠে ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে। ১ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা লাভের বিপরীতে দুই পরিচালক ফরিদুর রহমান খান ও আবুল কালাম আজাদকে দেওয়া হয় মাত্র ৩ কোটি টাকা। অথচ তাদের শেয়ার রয়েছে শতকরা ১০ ভাগ।

২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারিতে হাইকোর্টে শেয়ারের লভ্যাংশ নিয়ে নয়-ছয়ের এই অভিযোগ উত্থাপনের পর আদালত ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানির রেজিস্ট্রার্ড জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে থাকা নথি তলব করে হাইকোর্ট।

উল্লেখ্য যে, রাজধানীর ভাটারা থানাধীন মাদানী এভিনিউয়ে পাঁচতলা সুবিশাল ভবন নির্মাণ করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাচ্ছে ইউনাইটেড গ্রুপ। কিন্তু ভবন বানাতে রাজউক থেকে অনুমোদন নেয়নি তারা।

এরইমধ্যে রাজউক তাদেরকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে- কেন ওই ভবন ভেঙে ফেলা এবং ইউনাইটেডের কর্তা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সময় অতিবাহিত হলেও ইউনাইটেড ওই চিঠির জবাব দেয়নি।

৫ আগস্টের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা সরকারকে অর্থ দিয়ে সহায়তার অভিযোগ আছে ইউনাইটেড গ্রুপের বিরুদ্ধে। ওই আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই প্রগতি সরণির শাহজাদপুরের বাঁশতলা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বাহাদুর হোসেন মনির।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান থানায় মনির বাবার করা হত্যা মামলায় ইউনাইটেড গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টা হাসান মাহমুদ রাজা, চেয়ারম্যান ও এমডি মঈনউদ্দিন হাসান রশিদ ও গ্রুপের কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) আফজালও আসামি।

এছাড়া অবৈধভাবে বিদেশে বিপুল অর্থ-পাচারের অভিযোগে শিল্পগ্রুপটির কর্ণধারদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

(ঢাকাটাইমস/১৯নভেম্বর/এসএস/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন 
ক্রান্তিকালে দেশ, আয় কমছে শ্রমজীবী মানুষের: রিজভী
পিপিএম পদক পেলেন এসপি কুদরত-ই-খুদা
বিভেদের রাজনীতি আমাদের ঐতিহ্য নষ্ট করেছে: মির্জা ফখরুল 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা