কেন সরানো হলো ডিবিপ্রধানকে? নেপথ্যে যা জানা গেল

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিককে। তবে পুলিশের এই কর্মকর্তাকে কী কারণে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।
সূত্র বলছে, আলোচিত মডেল মেঘনা আলম ইস্যুতে সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি ডিবিপ্রধানকে সরিয়ে দিতে ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেন। তারপরই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে ডিএমপির একাধিক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মডেল মেঘনাকে আটকের পর তার সহযোগী দেওয়ান সামিরকে আটক করা হয়। পরে তাকে ভাটারা থানায় হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ বাদী হয়ে সামির বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা দিয়ে আদালতে পাঠায়। সেই মামলায় পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। রিমান্ড শুনানির তারিখ ছিল আজ (রবিবার)।
ভাটারা থানা সূত্রে জানা গেছে, মেঘনার সহযোগী দেওয়ান সামিকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এদিকে দেওয়ান সামির কয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে, বিষয়টি শুক্রবার রাতে ডিবিপ্রধানের কাছে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী। এসময় তিনি জানান, পুলিশ মামলা দিয়ে আসামিকে আদালতে পাঠিয়েছে। আদালত রিমান্ড শুনানি রবিবার করবেন। এটা শুনে ক্ষিপ্ত হন খোদা বখস চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি কমিশনারকে বলে এখনই ডিবিপ্রধানকে সরিয়ে দিচ্ছি।’
এরপর শনিবার আইজিপি বাহারুল আলম ও ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বিষয়টি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। তবে খোদা বখস তার অবস্থানে অনড় থাকেন। এই ঘটনার পর ডিবিপ্রধানকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তিনি যেন আর ডিবিতে না যান। পরে শনিবারের তারিখ দেখিয়ে রবিবার অফিস আদেশ জারি করা হয়।
ওই আদেশে বলা হয়, ‘ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিককে ডিএমপির সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক স্বার্থে রেজাউল করিম মল্লিককে তার নামের পাশে উল্লেখিত স্থানে পদায়ন করা হলো। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির একাধিক অতিরিক্ত কমিশনার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই ঘটনায় ডিবিপ্রধানের কোনো দোষ ছিল না। রিমান্ডের ব্যাপারটা দেখবেন আদালত। সম্পূর্ণ আক্রোশের মাধ্যমে তাকে সরানো হয়েছে। এটা নিয়ে পুলিশের মধ্যে নানা কানাঘুষা চলছে।’
বিষয়টি নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তার (রেজাউল করিম মল্লিক) বদলি তো ডিএমপি কমিশনার করেছেন। আপনি উনার সাথে কথা বলতে পারেন।’ এর বেশি কিছু বলতে চাননি পুলিশপ্রধান।
বিষয়টি নিয়ে ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলীকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
গত ১ সেপ্টেম্বর রেজাউল করিম মল্লিককে ডিবিপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ডিবিকে ঢেলে সাজাতে কাজ করেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তারে ভূমিকা রাখেন।
জানা গেছে, পুলিশে কর্মজীবন শুরুর মাত্র দেড় বছরের মধ্যে রেজাউল করিম মল্লিককে বরখাস্ত করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি চাকরি ফিরে পান।
পরে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এলে বিভিন্নভাবে নির্যাতন, অবহেলার শিকার হন পুলিশের এই কর্মকর্তা। প্রায় ১৮ বছর তাকে পুলিশের কম গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়। দেওয়া হয়নি পদোন্নতি। সর্বশেষ তিনি টাঙ্গাইল ও সিলেটে সিআইডি এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। সরকার পতনের পর তাকে ডিআইজি করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিতে পদায়ন করা হয়। পরবর্তীতে তাকে ডিএমপিতে আনা হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৩এপ্রিল/এসএস/এজে)

মন্তব্য করুন