মেঘনায় ডুবে ছিলেন কারা? চলছে সেই তদন্তও

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:১০| আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৩৩
অ- অ+

‘হানি ট্র্যাপ’ — যাকে বাংলায় বলা হয় ভালোবাসার ফাঁদ। দেশজুড়ে শব্দটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সম্প্রতি মডেল মেঘনা আলম গ্রেপ্তারের পর ফের আলোচনায় হানি ট্র্যাপ।

বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি এক রাষ্ট্রদূতকে ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মেঘনা আলম। পরে বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করেন ওই রাষ্ট্রদূত। এরপরই গ্রেপ্তার হন মেঘনা ও তার সহযোগী দেওয়ান সমির। এই সমির সানজানা ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠানের মালিক। সমির ভাটারা থানার একটি মামলায় পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন। সেখানে মেঘনা ও তাকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। যা যাচাই-বাছাই করছে গোয়েন্দারা।

সূত্র ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছে, মেঘনা বরিশাল থেকে এসএসসি পাসের ঢাকায় এসে ভিকারুন্নেসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে এইচএসসির পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করেন। ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার পর পরিচিতি লাভ করেন। সেটাকে কাজে লাগিয়েই প্রভাবশালীদের পেছনে ছুটতে শুরু করেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তা জানান, ইংরেজিতে কথা বলতে পারদর্শী মেঘনা। তার এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সহজেই বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন তিনি।

অভিযোগ আছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, বিদেশি কূটনীতিক, রাষ্ট্রদূতদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করতেন। এখন মডেল থেকে আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্কের মধ্যেও ঢুকে গেছেন এই নারী। গেল সপ্তাহে মেঘনা আলমকে আটকের পর নতুন করে ধানমন্ডি মডেল থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সূত্র বলছে, মেঘনার সঙ্গে একটি উন্নত ও প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূতের সম্পর্ক ছিল। যিনি গত বছর বাংলাদেশ থেকে নিজ দেশে ফেরত যান। ওই রাষ্ট্রদূত পরবর্তীতে আবার বাংলাদেশে এসেছেন নিজ দেশের একটি কোম্পানির প্রতিনিধি হয়ে। তাছাড়া সার্কভুক্ত একটি দেশের রাষ্ট্রদূতকেও মেঘলা প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিলেন। তিনিও নিজ দেশে ফিরে যাবার পর আবারও বাংলাদেশে এসেছেন এবং অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন। এই দুই রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কথিত এই মডেল। তারা দু'জনই মৌখিক ভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থাকে বিষয়টি বলেছেন। প্রয়োজনে লিখিত অভিযোগ দিতে রাজি আছেন বলে একটি সূত্র ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন।

এর বাইরে মেঘনার সঙ্গে একাধিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকের সুসম্পর্ক ছিল। তাদের দিয়েও অনেক ফাঁদ পেতেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের চক্রে বেশকয়েকজন সুন্দরী নারী আছে। যারা টার্গেট ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে নিজেরা বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে নেন।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক:

সূত্র বলছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলে রাশেদুল হোসেন চৌধুরী সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাছাড়া নিচের সারির অনেকের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। তাদের ব্যবহার করে বিপুল সম্পদের মালিক হন এই মডেল। অল্পদিনেই পরিচিতি পান বিভিন্ন মহলে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সহজেই ঢুকে যেতে পারতেন মেঘনা আলম। সেখানে সখ্যতা গড়তে মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান করতেন। এরপর ফাঁদে ফেলতো টার্গেট ব্যক্তিদের। মেঘনার সঙ্গে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ আরও অনেকের সম্পর্ক রয়েছে এমন বেশকিছু নাম পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাছাড়া মেঘনা ইস্যুতে বড় কোনো চক্র জড়িত রয়েছে, এ কারণে অনেক তথ্যই এখন প্রকাশ করছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

অন্যদিকে, মেঘনা ব্যক্তিগত সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধনের অপচেষ্টা করছিলেন। তিনি আরও কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিকের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাদের অনেকে এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলতে পার্শ্ববর্তী দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা মেঘলাদের ব্যবহার করে নানান পরিকল্পনা করছে। যার বেশ কিছু প্রমাণ গোয়েন্দারা পেয়েছেন। তাদের টার্গেট বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে ধস নামানো।

পুলিশ জানায়, আসামিরা বাংলাদেশে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসেফ আলদুহাইনকে টার্গেট করে গত বছরের জানুয়ারি মাস হতে এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে প্রতারক দলের সদস্যরা সখ্যতা তৈরি করে। এক পর্যায়ে ব্যক্তিগত যোগাযোগ স্থাপন করে ফাঁদে ফেলে পাঁচ মিলিয়ন ডলার দাবি করে। দেওয়ান সমির এ টাকা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে। এ ঘটনার বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে জানাজানি হওয়ায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হুমকির সম্মুখীন হয়। এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত ১০ এপ্রিল ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ধানমন্ডি থানায় হওয়া একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৮এপ্রিল/এসএস/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতিতে সরকারের সংশ্লিষ্টতা? যা বললেন উপদেষ্টা ফারুকী
ভেষজ ঔষধি ঢেঁড়স ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
গরমে স্বাস্থ্য রক্ষায় কোন পাত্রে কতটুকু পানি পান করা নিরাপদ
ইলন মাস্কের স্টারলিংকের অনুকূলে লাইসেন্স হস্তান্তর করল বিটিআরসি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা