প্রধান নির্বাহী শেখ ওমর ফারুককে নিয়ে ইউনাইটেড গ্রুপেই বিতর্ক, নানা গুঞ্জন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ২১:০৫| আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ২১:০৯
অ- অ+

দেশের অন্যতম বড় ও বিতর্কিত ইউনাইটেড গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শেখ ওমর ফারুককে নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে খোদ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেই। শেখ ফারুকের দাপটে ইউনাইটেড গ্রুপের পুরোনো ও অভিজ্ঞ অনেক কর্মকর্তা রীতিমতো কোণঠাসা এমনটাই খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

এছাড়াও ইউনাইটেড গ্রুপকে বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে শেখ ফারুককেই ভেতরে ভেতরে দায়ী মনে করছেন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এমন অনেক কর্মী । গ্রুপের বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ও চেয়ারম্যানের কানভারী করে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকদের মধ্যে আস্থাহীনতার পরিবেশ সৃষ্টিতে শেখ ফারুকের ভূমিকাই সর্বাধিক এটাই ইউনাইটেড গ্রুপে ভেতরে ভেতরে সবার বদ্ধমূল বিশ্বাস। নিজের অবস্থান সুসহংত করতে শেখ ফারুক বহুমুখী তৎপরতায় পরিচালকের মধ্যে ফাটল ধরাতে পেরেছেন বলেও মনে করা হয়।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও হুইপ মির্জা আজমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শেখ ফারুক কোন এজেন্ডা বাস্তবায়নে ইউনাইটেড গ্রুপে ঢুকেছেন এই কানাঘুষা শুরু থেকেই গ্রুপে আছে-এমনটাই ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ।

সূত্রে জানা যায়, এই শেখ ফারুক বিতর্কিত এইচএসবিসি ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। যেই ব্যাংকটিকে অর্থপাচারে জড়িত অভিযোগে একদা ২ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

ব্যাংকটির সঙ্গে ইউনাইটেড গ্রুপের ব্যবসায়িক সম্পর্ক, লেনদেন রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, এইচএসবিসি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তাই ভালো ভাবে জানেন কীভাবে বিদেশে অর্থপাচার করতে হয়। আলোচনা আছে এই ব্যাংকের সহায়তায় সিঙ্গাপুরে প্রতিষ্ঠান চালু করেছে ইউনাইটেড গ্রুপ। যাতে সহায়তা করেছেন ব্যাংকেটির সাবেক কর্মকর্তা শেখ ওমর ফারুক। আর এই বিনিয়োগে দেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

ইউনাইটেড গ্রুপের পুরোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন— শেখ ওমর ফারুক উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। তিনি অতিমাত্রায় ক্ষমতাচর্চা করছেন। অতি সুবিধাভোগী হয়ে উঠেছেন। এতে অনেকের সন্দেহ, দেশের বাইরে ইউনাইটেড গ্রুপের গোপন বিনিয়োগের বিষয়ে শেখ ফারুকের হাত থাকায় তার গুরুত্ব অনেকের চেয়ে বেশি ।

সূত্র বলছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন হাসান রশীদ। তার জায়গায় দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন পরিচালক নিজামউদ্দিন রশিদ। বর্তমানে তিনি উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন। পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্ব না বোঝা নিজামউদ্দিনকে বিপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছেন সিইও শেখ ওমর ফারুক। তিনি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিজের আধিপত্য অতিমাত্রায় ব্যবহার করছেন। অনেকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের মতোও ঘটনা ঘটিয়েছেন। যাতে প্রতিষ্ঠানটি হুমকির সম্মুখীন হতে পারে বলে মত পুরাতন কর্মীদের।

ধারণা করা হয়, এইচএসবিসি ব্যাংকে থাকাকালে শেখ ফারুক ইউনাইটেড গ্রুপকে ভালো সুবিধা দেন। এরই পুরস্কার হিসেবে তাকে শিল্পগ্রুপটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা—সিইও পদে চাকরি দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন যারা ইউনাইটেড গ্রুপে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন তাদের মধ্যে অসন্তুষ্টি রয়েছে। তারা মনে করেন, শেখ ওমর ফারুক উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন।

সূত্র বলছে, নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে গ্রুপে একটি নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছেন শেখ ওমর ফারুক। তার কথার বাইরে গেলে সেখানে চাকরি করা দুরূহ হয়ে যায়। অতিমাত্রায় ক্ষমতাচর্চা করেন তিনি। মালিকপক্ষের আস্থাভাজন হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারেন না। ইউনাইটেডকে ব্যবহার করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন তিনি। এসব নিয়ে গ্রুপে রয়েছে নানান গল্প। তবে একসময় মালিকপক্ষকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা।

এদিকে ইউনাইটেড গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান চেইন সুপারশপ ইউনিমার্ট পরিচালনার দায়িত্বেও রয়েছেন শেখ ফারুক। সম্প্রতি শেখ ফারুকের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গুলশানের ‘সেন্টার পয়েন্ট’ নামের ভবনটিতে শেখ ফারুকের হেলমেট বাহিনীর অফিস রয়েছে। যেখানে রয়েছে সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য। যাদের আছে- পুলিশ-প্রেস লেখা বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, আত্মরক্ষার্থে ঢাল, অবৈধ অস্ত্র। ইউনাইটেড গ্রুপের যেকোনো দখলদারিত্ব বা কাউকে প্রতিহত করতে এই হেলমেট বাহিনী সরাসরি কাজ করে। সম্প্রতি এই ক্যাডার বাহিনীর হামলায় এসএস বিল্ডার্সের কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী আহত হন। এরমধ্যে মোহাম্মদ জনি নামে একজন নিরাপত্তারক্ষী এখন জীবন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

তাছাড়া ইসরায়েলি পণ্য বিক্রির অভিযোগে সম্প্রতি ইউনিমার্টের সিলেট আউটলেটে হামলা ও ভাঙচুর চালায় তৌহিদি জনতা। একই আশঙ্কা ছিল ঢাকার বিভিন্ন আউটলেটে। তবে বিভিন্ন সুপারশপ ইসরায়েলি পণ্য বিক্রি বন্ধ করলেও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শেখ ফারুকের নির্দেশ রয়েছে, তারা (ইউনিমার্ট) ইসরায়েলি পণ্য নিজেদের আউটলেটে প্রদর্শনী করে বিক্রি করবে। সিলেটের মতো ঢাকায় তাদের ওপর হামলার চেষ্টা হলে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে বলে সরাসরি ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। কারণ, ইউনাইটেড গ্রুপের সশস্ত্র হেলমেট বাহিনী রয়েছে; যারা যেকোনো দখলদারিত্বে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলে পড়ে।

(ঢাকাটাইমস/২৬এপ্রিল/এসএস/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতিতে সরকারের সংশ্লিষ্টতা? যা বললেন উপদেষ্টা ফারুকী
ভেষজ ঔষধি ঢেঁড়স ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
গরমে স্বাস্থ্য রক্ষায় কোন পাত্রে কতটুকু পানি পান করা নিরাপদ
ইলন মাস্কের স্টারলিংকের অনুকূলে লাইসেন্স হস্তান্তর করল বিটিআরসি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা