মুহূর্তেই পদ্মায় বিলীন দোতলা মসজিদ, ঝুঁকিতে ৬০০ পরিবার ও ২০০ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান

‎কাজী জিহাদ, ‎জাজিরা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
  প্রকাশিত : ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২০:১৪| আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২০:১৮
অ- অ+

পদ্মার ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিল। ঘরবাড়ি পাশাপাশি এবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেল দ্বিতল আলম খাঁর কান্দি জামে মসজিদ।

মঙ্গলবার ( আগস্ট) ভোরে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্বনাওডোবা ইউনিয়নের জিরোপয়েন্ট এলাকায় ভাঙনের ঘটন ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, সোমবার রাতেই মসজিদের সামনের দুটি দোকান পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তখনই মসজিদের দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। তবু পরদিন (মঙ্গলবার) ফজরের নামাজ যথারীতি মসজিদেই আদায় করেন স্থানীয় মুসল্লিরা। কিন্তু নামাজের কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ বিকট শব্দে মুহূর্তের মধ্যে মসজিদটি ধসে পড়ে পদ্মার প্রবল স্রোতে বিলীন হয়ে যায়।

মসজিদটির ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ তাহাজ্জুদ আলী বলেন, ‘আলম খাঁর কান্দি জামে মসজিদটি ছিল এলাকার ধর্মীয় সামাজিক মিলনের অন্যতম কেন্দ্রস্থল। এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, শিশুদের মক্তব ইসলামি আলোচনা হতো। মুহূর্তের ঘটনায় এখন সে স্মৃতি শুধু অতীত। পদ্মাগর্ভে বিলীন মসজিদটি।

জানা যায়, জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকেই শুরু হয়েছে পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত। এই এলাকাতেই গড়ে উঠেছে সার্ভিস এরিয়া-, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো।

২০১২ সালে ভূমি অধিগ্রহণের সময় প্রথম নদী ভাঙন দেখা দেয়। সেতু এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষার জন্য সেতু থেকে ভাটির দিকে কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। পরে সেটির সঙ্গে নদীশাসনের বাঁধ যুক্ত করা হয়।

এরপর গত বছরের নভেম্বর মাসে জিরো পয়েন্ট এলাকায় বাঁধে প্রথম ভাঙন দেখা দেয়। বছরের জুন ১০০ মিটার, জুলাই ২০০ মিটার, জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার, ৩১ জুলাই ১১০ মিটার সবশেষ আগস্টের কয়েক দফা ভাঙনে পর্যন্ত ৭৫০ মিটার বাঁধের এলাকা ভেঙে পদ্মায় বিলীন হয়েছে। ‎‎পদ্মার এই ভাঙ্গনে মসজিদ ছাড়াও ৫০টি ঘরবাড়ি, ৩০টির বেশি দোকান মাঝিরঘাট এলাকার বিশাল অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

আতঙ্কে শতাধিক পরিবার অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে তাদের বসতি। বর্তমানে প্রায় ৬০০ পরিবার ২০০-এর বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।

এদিকে ভাঙন রোধে পর্যন্ত ওই এলাকায় লাখ ২০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে কোটি টাকা। তবে ভাঙনের ফলে সেগুলো কোনো কাজে আসেনি।

মাঝিরঘাটের স্থানীয় বাসিন্দা বাদশা শেখ বলেন, ‘জিওব্যাগে কাজ হচ্ছে না। মসজিদটাই চলে গেল চোখের সামনে। এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কী হতে পারে! সরকারকে অতি দ্রুত স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ তারেক হাসান বলেন, “আমরা আপৎকালীন ব্যবস্থা নিচ্ছি, তবে স্রোতের তীব্রতায় কাজ হচ্ছে না। স্থায়ী, টেকসই প্রতিরক্ষা ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’

বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছি, স্থানীয়ভাবে সহায়তা চলছে। পাশাপাশি বিষয়টি জেলা প্রশাসন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা তৎপর।

(ঢাকাটাইমস/৬আগস্ট/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ফি বাড়াল থাইল্যান্ড 
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের দিনই হবে বিএনপির চূড়ান্ত বিজয়: আমিনুল হক
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে ইসিকে চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
জুলাই পূনর্জাগরণ ও তারুণ্যের উৎসব, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের কর্পোরেট কার্যালয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা