ইউনাইটেড গ্রুপ আ.লীগের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী ও বহুল বিতর্কিত তবু কেন ধরাছোঁয়ার বাইরে?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৮| আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫৮
অ- অ+

বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট, তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ, বেষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে পৃষ্ঠপোষকতা এমনকি হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামলার আসামি- এমন বিস্তর কালিমা লেপটে আছে আওয়ামী লীগ আমলে বড় সুবিধাভোগী শিল্পগোষ্ঠী ইউনাইটেড গ্রুপের কর্তাদের গায়ে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের এমন নানা প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির অভিযোগে আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিলেও এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ইউনাইটেড গ্রুপের কর্তারা।

ভূরি ভূরি অভিযোগ থাকার পরেও তাদের বিরুদ্ধে এখনো প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। বরং লুটপাট-অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও দাপট কমছে না এই শিল্পগোষ্ঠীর। এর রহস্য কোথায়?

নানাজনের বক্তব্যে আসছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতিত হওয়ার পর তাদের সুবিধাভোগী আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো ইউনাইটেডও ম্যানিপুলেট করছে ক্ষমতাপ্রত্যাশী গোষ্ঠীগুলোকে। বিএনপি নেতা মেজর (অব.) ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন তো সোজাসাপ্টা বললেন, অনেকে ম্যানিপুলেটেড হয়ে গেছেন। পুলিশও রাজনৈতিক নিরাপত্তা খুঁজছে। তারা এ ধরনের আসামিদের ধরতে গড়িমসি করছে।

গত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে একরকম মাফিয়া হয়ে ওঠে ইউনাইটেড। বেসরকারি অন্য বিদ্যুৎ কোম্পানির চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে সরকারি গ্যাস নেয় তারা। উৎপাদিত বিদ্যুৎ বেসরকারি খাতে বিক্রির অনুমতি না থাকলেও তারা উচ্চমূল্যে তা বিক্রি করে ইপিজেডে। কম দামে গ্যাস নিতে বিইআরসিতে ইউনাইটেডের আবেদন নাকচ, রিভিউতে সফল না হয়ে এমনকি উচ্চ আদালতে তাদের আপিল খারিজ হলেও ইউনাইটেড ঠিকই কম দামে গ্যাস ব্যবহার করে নিজেদের প্ল্যান্টে।

ইউনাইটেড পাওয়ারের চেয়ারম্যান সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুল মুবীন আরও কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে বিইআরসিতে গিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ এই সেক্টরে বহুল চর্চিত।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ঘটনার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠে শিল্পগ্রুপটি। কেননা খালেদা জিয়াকে মইনুল রোড থেকে অমানবিকভাবে বের করে দেওয়ার কাজে যার অতিউৎসাহী ভূমিকা ছিল, তিনি ইউনাইটেডের আত্মীয়। আওয়ামী আমলের ১৬ বছর ধরে বিএনপিকে ধ্বংস করতে যারা সক্রিয় ছিল, তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসায় ইউনাইটেড। এমনকি গত বছরের ২১ জুন খালেদা জিয়ার জরুরি চিকিৎসায়ও সহায়তা করেনি গ্রুপটির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড হাসপাতাল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যখন স্বৈরাচারের দোসর লুটেরা-দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান, সেখানে ইউনাইটেড ও তার কর্তাব্যক্তিদের অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকাটা বিস্ময়কর। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা মামলা থাকলেও তাদের ধরছে না পুলিশ। মামলায় নানা অছিলায় আদালতে গরহাজির থাকছেন তারা।

বিএনপির নেতা মেজর (অব.) ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, বাংলাদেশে একধরনের জঙ্গল রুলস চলছে। ইউনাইটেড গ্রুপের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা মামলা রয়েছে, কিন্তু পুলিশ তাদের ধরছে না। যারা ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে, তারা এসব ব্যবসায়ীর দ্বারা ম্যানিপুলেটেড হয়ে গেছে। বিক্রি হয়ে গেছে। তারাই তাদের রক্ষার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর পুলিশ খুঁজছে রাজনৈতিক নিরাপত্তা। তাই তারা আসামি ধরতে গড়িমসি করছে। সেই লক্ষ্যে তারা একটা চিঠি ইস্যু করে, তাদের নির্দেশ ছাড়া কাউকে ধরা যাবে না। আইন হলো- কগনেবল অফেন্স আছে, পুলিশের কাজ আসামি ধরা। আসলে দেশ এখন আইনহীন দেশে পরিণত হয়েছে।

খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ ও হাসান রাজার বিয়াই

ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাড়ি থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দুল মুবীন। তিনি সম্পর্কে ইউনাইটেড গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টা হাসান মাহমুদ রাজার বেয়াই। মুবীন পরে ইউনাইটেড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের চেয়ারম্যান হন।

জেনারেল মুবীন আওয়ামী লীগ আমলে ইউনাইটেডের হয়ে বিভিন্ন তদবির নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ঘুরে বেড়াতেন। তার মাধ্যমেই নামমাত্র মূল্যে হাসিনা সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র কিনে গ্যাসভিত্তিক দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করে ইউনাইটেড। তাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাজারে বিক্রির অনুমতি না থাকলেও তা এখনও অব্যাহত আছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ইউনাইটেড গ্রুপ গত সরকারের আমলে নানাভাবে সুবিধাভোগী। তারা কৌশলে সরকারের পাওয়ার প্লান্ট কিনে নিয়েছে। ওই সরকারের নানা দুর্নীতির সঙ্গেও তারা জড়িত।

তৎকালীন বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, কীভাবে ইউনাইটেড কম দামে গ্যাস পেল বুঝতে পারি না। তারা আমাদের কাছে আবেদন নিয়ে এলে আমরা তা নাকচ করে দেই। পরে রিভিউয়ের আবেদন করলে সেটাও নাকচ হয়ে যায়। এরপর উচ্চ আদালতে গেলে সেখানেও তাদের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, তখন বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নিতে প্রায়ই কমিশনে আসতেন ইউনাইটেড পাওয়ারের বর্তমান চেয়ারম্যান জেনারেল আব্দুল মুবীন। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা থাকতেন। তারা কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি দিতেন। কিন্তু তাদের চোখরাঙানি আর বন্দুকের নল উপেক্ষা করে কমিশন। এরপরও ইউনাইটেড পাওয়ার কীভাবে নিয়মবহির্ভূত সুবিধার অনুমতি পেল সেটা বের করা উচিত বর্তমান সরকারের।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় অস্বীকৃতি: কী বলেন বিএনপির নেতারা

গত বছরের ২১ জুন হঠাৎ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শরীর গুরুতর খারাপ হলে তার চিকিৎসকরা জরুরি ইনজেকশন ও অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা চান ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে। কিন্তু সহায়তা দেয়নি হাসপাতালটি। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারকে খুশি করতে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হয়নি বলে তখন অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে।

ইউনাইটেডের এই অমানবিক আচরণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। তারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বয়কটের পাশাপাশি বিচারও দাবি করেন। এ ছাড়া ইউনাইটেডের দুর্নীতির প্রসঙ্গও তোলেন কেউ কেউ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ইউনাইটেড গ্রুপের এমন আচরণের পর থেকে আজ পর্যন্ত সেখানে কখনো চিকিৎসা নেইনি; ভবিষ্যতেও কোনো দিন নেবো না। তিনি আরও বলেন, ইউনাইটেড গ্রুপ গত সরকারের আমলে নানাভাবে সুবিধাভোগী। তারা কৌশলে সরকারের পাওয়ার প্লান্ট কিনে নিয়েছে। ওই সরকারের নানা দুর্নীতির সঙ্গেও তারা জড়িত।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক ঢাকাটাইমসকে বলেন, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে অ্যাম্বুলেন্স, ইনজেকশন, ওষুধ চাইলে কোনো হাসপাতালের তা প্রত্যাখ্যান করা চরম অমানবিকতা ও নির্মমতার প্রকাশ। রাজনীতি অন্য বিষয়, কিন্তু মানবিক দিক থেকে তারা অবহেলার পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে।

সাবেক এই চিফ হুইপ বলেন, একটা দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুবারের বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসনকে তার অসুস্থতায় ওষুধপত্র ও অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়নিযারা এসব ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল, যারা অগণতান্ত্রিক কাজে সরকারকে সহায়তা করেছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা উচিত।

শেখ হাসিনার বেআইনি আদেশে ইউনাইটেডকে কম দামে গ্যাস ও ডিস্ট্রিবিউশন লাইসেন্স!

আইন ও নিয়মের বাইরে ইউনাইটেডকে কম দামে গ্যাস ও ডিস্ট্রিবিউশন লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার‌্যালয়ের হস্তক্ষেপের কথা বলেছেন অনেকে। তাদের প্রশ্ন শেখ হাসিনা আইনের ঊর্ধ্বে ছিলেন কি না।

বিইআরসির তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, আইনগতভাবে ইউনাইটেডের ১৬ টাকায় গ্যাস পাওয়ার সুযোগ নেই। তার পরও তারা কম মূল্যে গ্যাস নিচ্ছে, এটা বিস্ময়কর।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে বলেন, ইউনাইটেড গ্রুপকে দেওয়া লাইসেন্স রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থি। রাষ্ট্রের সংবিধান, আইন ও নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বেসরকারি কোনো কোম্পানিকে ডিস্ট্রিবিউশন লাইসেন্স দেওয়ার এখতিয়ার নেই। কিন্তু ইউনাইটেড গ্রুপ বিদ্যুৎ ডিস্ট্রিবিউশন করছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি আইনের ঊর্ধ্বে ছিলেন? প্রধানমন্ত্রী বললেই এটা কেউ দিতে পারে না। এটা দেওয়ার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর নেই। ক্যাপটিভ শ্রেণির গ্রাহককে আইপিপির রেটে গ্যাস দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

জুলাই আন্দোলন দমনে ইউনাইটেডের পৃষ্ঠপোষকতা, পাঁচ মামলা

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ইউনাইটেড গ্রুপের কর্ণধার হাসান মাহমুদ রাজা, চেয়ারম্যান ও এমডি মঈনউদ্দিন হাসান রশিদ ও গ্রুপের কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) আফজালের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলা হয়। আন্দোলনের সময় ঢাকার প্রগতি সরণিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বাহাদুর হোসেন মনিরের বাবা আবু জাফরের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এই তিনজনও আসামি। তাদের বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা আছে।

অনুমতি ছাড়া ইউনাইটেডের গ্রুপের প্রধান কার্যালয় ও ইউনিভার্সিটি

মাদানি এভিনিউয়ে ইউনাইটেড গ্রুপের প্রধান কার্যালয় ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। ইউনাইটেড গ্রুপ এসব স্থাপনা গড়ে তোলায় অনুমোদন নেয়নি রাজউকের। এ নিয়ে রাজউক থেকে বিভিন্ন সময় নকশা ও নথি চেয়ে একাধিকবার চিঠি দিলেও তা সরবরাহে গড়িমসি করে ইউনাইটেড।

নসরুল হামিদ বিপুকে ৮০ কাঠা জমি ঘুষ

আওয়ামী লীগ সরকারের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বেনামে ইউনাইটেড গ্রুপের একাধিক প্রকল্পের অংশীদার এমন কথাও চাউর আছে। পতিত শেখ হাসিনা সরকারের এই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি-এপিএসসিএলের তৎকালীন চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আলম মিলে ইউনাইটেডকে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ করে দেয়। আর নেপথ্যে থেকে সবাইকে সহায়তা করেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, যিনি আওয়ামী লীগ আমলের বিদ্যুৎ খাত নিয়ন্ত্রণ করতেন।

আওয়ামী লীগ আমলে বিদ্যুৎ খাতে মাফিয়া হয়ে উঠেছিল ইউনাইটেড গ্রুপ। তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী বিপুকে ঘুষ হিসেবে রাজধানীর মাদানি অ্যাভিনিউর ১০০ ফুট সড়কের পাশে ৮০ কাঠা জমি দেওয়া হয়, যার বর্তমান মূল্য দেড় শ কোটি টাকার বেশি।

পানামা পেপার কেলেংকারি

পানামা পেপার কেলেংকারির ফাঁস হওয়া খবরে প্রকাশিত হয়েছিল বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন ইউনাইটেড গ্রুপের হাসান মাহমুদ রাজা ও মইনউদ্দিন হাসান রশিদ ওরফে সানজারী।

হাজার কোটি কর ফাঁকি ইউনাইটেডের

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর গোয়েন্দা বিভাগের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে শিল্পগ্রুপটি। এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ে গ্রুপের কয়েকজন পরিচালক কর ফাঁকি দিয়েছেন ৪০ কোটি টাকা। তারা হলেন মঈনুদ্দিন হাসান রশিদ, হাসান মাহমুদ রাজা, খন্দকার মঈনুল আহসান শামীম ও ফরিদুর রহমান খান।

ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

এই গ্রুপের ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধেও নানা সময়ে চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ উঠেছে রোগীর স্বজনদের তরফে। সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যায় শিশু আয়ান। শিশুটির বাবা শামিম আহমেদ ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দিন হাসান রশিদ এবং সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনাইটেড মেডিকেল হাসপাতালের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজাসহ আটজনের বিরুদ্ধে ডিবিতে অভিযোগ করেন।

এছাড়া ২০২০ সালের ২৭ মে রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনে করোনা আইসোলেশন সেন্টারে পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় হওয়া মামলায় কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার অভিযোগ পায় পুলিশ। তবে এখনও পর্যন্ত মামলাটি বিচারিক আদালতে ওঠেনি।

ইউনাইটেডের হেলমেট বাহিনী

সম্প্রতি একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর গুলশানের সেন্টার পয়েন্টে ইউনাইটেড গ্রুপের হেলমেট বাহিনীর হামলায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এই ঘটনায় ইউনাইটেড গ্রুপের সিইওসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

তাছাড়া ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান, প্রধান উপদেষ্টা ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে পাঁচটির মতো মামলা হয়েছে। এসব হত্যা মামলা এজহারনামীয় অন্যান্য আসামিরা গ্রেপ্তার হলেও অজ্ঞাত কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে ইউনাইটেড গ্রুপের কর্তাব্যক্তিরা।

অভিযোগ আছে, জুলাই আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা সরকারকে টাকা দিয়ে সহায়তা করে ইউনাইটেড গ্রুপ। হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি ছাড়াও ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের তদন্তে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এরই মধ্যে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/এসএস/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতিতে সরকারের সংশ্লিষ্টতা? যা বললেন উপদেষ্টা ফারুকী
ভেষজ ঔষধি ঢেঁড়স ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
গরমে স্বাস্থ্য রক্ষায় কোন পাত্রে কতটুকু পানি পান করা নিরাপদ
ইলন মাস্কের স্টারলিংকের অনুকূলে লাইসেন্স হস্তান্তর করল বিটিআরসি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা