সালথায় গরু চুরির হিড়িক, সর্বস্বান্ত হচ্ছেন কৃষক ও খামারিরা

ফরিদপুরের সালথায় একের পর এক গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের চন্ডীবরদী, চরবল্লভদী ও খালিশা বল্লভদী গ্রামের কৃষক ও খামারিরা এসব চুরির শিকার হচ্ছেন। সংসারের একমাত্র সম্বল চুরি হওয়ায় অনেকে সর্বস্বান্ত।
সংঘবদ্ধ চোরের দল গত এক সপ্তাহে রাতের আঁধারে খামারি ও কৃষকদের গোয়ালঘর থেকে অন্তত নয়টি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে দুজনের তিনটি করে গরু রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি আরও অন্তত আটটি গরু চুরি হয়েছে চার কৃষকের।
একের পর এক গরু চুরির ঘটনায় পুরো ইউনিয়নবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে রাত জেগে গরু পাহারা দিতে শুরু করেছেন।
ভুক্তভোগীদের দাবি, এভাবে গরু চুরি হতে থাকলে এলাকার মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং পুলিশের টহল বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, গত এক সপ্তাহে শুধু চন্ডীবরদী গ্রাম থেকেই চুরি হয়েছে অন্তত ছয়টি গরু। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) গভীর রাতে চন্ডিবরদী গ্রামের কৃষক সেলিম শেখের গোয়ালঘর থেকে তিনটি গরু চুরি হয়।
ভুক্তভোগী সেলিম শেখ বলেন,‘সারা জীবনের জমানো টাকায় কেনা আমার তিনটি গরু চোরে নিয়ে গেছে। এই গরুর দুধ বিক্রি করেই চলত আমার সংসার। চোরেরা আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। এখন আমি কী করব?’
এর আগে গত ২ জুলাই গভীর রাতে চন্ডীবরদী গ্রামের গ্রাম পুলিশ মিলন মিয়ার গোয়ালঘর থেকে তিনটি গরু চুরি হয়।
মিলন মিয়া বলেন,এই তিনটি গরু ছাড়া আমার আর কোনো সম্বল ছিল না। চোরের দল আমাকে একেবারে নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে। কে আমার এই ক্ষতি পুষিয়ে দেবে!’
এ ছাড়াও সম্প্রতি চন্ডীবরদী গ্রামের শাজাহান সরদারের তিনটি গরু, পিলি মুন্সির একটি গাভী এবং চরবল্লভদী গ্রামের হাসেম মোল্যার দুটি গরু ও খালিশা বল্লভদী গ্রামের কোবাদ মোল্যার দুটি গরু চুরি হয় হয়েছে।
ভুক্তভোগী কোবাদ মোল্যা বলেন, ‘আমার দুটি গরু চুরি হওয়ার পর থেকে গরু পালন বাদ দিয়েছি। এত কষ্ট করে গরু বড় করার পর যখন চোরে নিয়ে যায়, সেই কষ্টের কোনো সীমা থাকে না।’ চন্ডীবরদী গ্রামের বাসিন্দা শাজাহান শরিফ বলেন, ‘আমাদের এলাকাটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে হওয়ায় চোরেরা পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকে করে গরু নিয়ে সহজেই দ্রুত পালিয়ে যায়। এরা কোনো ছিঁচকে চোর নয়, এরা সংঘবদ্ধ বড় কোনো চোর চক্র। এদের হাত থেকে আমাদের সম্পদ রক্ষা করা না হলে সব হারিয়ে পতে বসতে হবে।’
চুরি প্রতিরোধে চন্ডীবরদী স্ট্যান্ড, চরবল্লভদী মোড় ও বাউশখালির মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কঠোর পাহারার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী মহিনুর শিকদার বলেন, একই সাথে মহাসড়কে ওঠার প্রধান পথ চন্ডীবরদী স্টান্ডে একটি সিসি ক্যামেরা বসালে চোর শনাক্তে সহায়ক হবে।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘গত রাতের গরু চুরির ঘটনাটি জানার পর ওই এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। কিছুদিন আগেও গ্রাম পুলিশ মিলন মিয়ার গরু চুরির ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। এসব চুরির ঘটনায় পুলিশ গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে। ইতিমেধ্য ওই এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। আশা করি, দ্রুতই চোর শনাক্ত করতে পারব।’
(ঢাকাটাইমস/৮জুলাই/মোআ)

মন্তব্য করুন