সিরাজদিখান-কেরানীগঞ্জে অবৈধ বালু উত্তোলন, প্রতিবাদে ড্রেজার ভাঙচুর গ্রামবাসীর

পুরনো মেয়াদোত্তীর্ণ অনুমোদনের কাগজ দেখিয়ে সিরাজদিখান ও কেরানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী ধলেশ্বরী নদীতে বিশাল এলাকাজুড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিল প্রভাবশালী একটি চক্র। এভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তেলনের প্রতিবাদে ধলেশ্বরী নদীতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত ড্রেজার ভাঙচুর করেছে গ্রামবাসী।
আজ মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুরে সিরাজদিখানের সৈয়দপুর ও কেরানীগঞ্জের সোনাকান্দা এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে একাধিক ড্রেজার ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোনো ধরনের প্রশাসনিক বাধা না পেয়ে চক্রটির অবৈধভাবে মাটি কাটা দিনে দিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তাই এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিবাদে নামেন। উত্তেজিত জনতা অবৈধভাবে বালু তোলা ও মাটি কাটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। একসময় তারা ওই ড্রেজারগুলোর পাইপ ভেঙে ফেলেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী দুই ব্যক্তি আয়ুব আলী ও আশকর আলী সিরাজদিখানের একটি সীমিত এলাকার জন্য বিআইডব্লিউটিএ থেকে বহু আগে একটি অনুমতিপতহ্র জোগাড় করেছিল। সেটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু সেই কাগজটিই বালু তোলায় হাতিয়ার করে চক্রটি। তারা স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতার সহযোগিতায় সিরাজদিখান ও কেরানীগঞ্জের বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে অবৈধভাবে ড্রেজিং কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। স্থানীয়রা এই অনুমতির যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন।
জানা যায়, আওয়ামী সরকারের আমলে একই গ্রুপ এই মাটি কেটে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। সে সময়ে ওদের অত্যাচারে এলাকাবাসী মুখ খুলতে সাহস পায়নি। যারাই প্রতিবাদ করত, প্রশাসন দিয়ে তাদের হয়রানি করা হতো।
এ বিষয়ে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের (চক্র) প্রদর্শিত অনাপত্তিপত্র (NOC) সঠিক নয়। বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি অনুমতির সীমা লঙ্ঘন করা হয়েছে। অনুমতি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও তারা ড্রেজার জোরপূর্বক চালিয়ে গেছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।’
পরিবেশবিদরা জানান, ড্রেজিংয়ের ফলে নদীর স্বাভাবিক গতি ও গঠন নষ্ট হচ্ছে, নদী ভাঙন বাড়ছে এবং নদীপাড়ের কৃষিজমি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া ধলেশ্বরী নদীতে কাছাকাছি দুটি সেতুর অনেক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় সাবেক মেম্বার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে অবৈধ ড্রেজিংয়ের বিষয়ে বহুবার জানিয়েছি, কিন্তু তারা শুধু বলেছে কাগজ যাচাই হচ্ছে। এই সুযোগে চক্রটি মাটি কেটে শেষ করে দিচ্ছে নদী ও নিকটতম জমি। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি দ্রুত এই মাটি কাটা বন্ধ করে আমাদের রক্ষা করুন এবং পরিবেশ বাঁচান।’
অভিযুক্তদের মধ্যে আয়ুব আলীকে একাধিকবার ফোন করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। আর আশকর আলীর পক্ষ থেকেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গ্রামবাসী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, প্রশাসন যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তবে তারা নিজেরাই এলাকায় বড় পরিসরে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। অবৈধ মাটি কাটার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা চেয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন নদীর দুই পারের মানুষ।
(ঢাকাটাইমস/৮জুলাই/মোআ)

মন্তব্য করুন