টানা ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে ফেনী শহর, ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা

ফেনীতে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও নদী ভাঙনে ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। ফলে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে শহরবাসীর জীবন। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ফেনী শহরে ৩৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ। এর ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকা হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে।
সোমবার থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক, ডাক্তারপাড়া, মিজান রোড, কলেজ রোড, একাডেমী রোড, শাহীন একাডেমি এলাকা, পাঠানবাড়ি, নাজির রোড, পেট্রোবাংলোসহ একাধিক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর পাড় ভেঙে দুটি দোকান নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে।
জলাবদ্ধতা ও নদীভাঙন—দুই বিপর্যয়ের মুখে ফেনীর জনগণ। স্থানীয়রা বলছেন, পরিকল্পনার অভাব, দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও নালার অচলাবস্থা এই দুর্ভোগের মূল কারণ। প্রতিবছরই বর্ষাকালে একই চিত্রের পুনরাবৃত্তি ঘটে।
স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষেরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে। সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় অধিকাংশ মানুষকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে।
পৌর হকার্স মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানান, “সকাল থেকে দোকানে পানি ঢুকে সব মালপত্র ভিজে গেছে। গেল বছরের ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক থাকলে আমাদের এমন অবস্থার মুখোমুখি হতে হতো না।”
ছাগলনাইয়ার আবদুল হক ডিগ্রি কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, “দুপুর ২টা থেকে পরীক্ষা। কিন্তু এই বৃষ্টি ও পানির মধ্যে কেন্দ্রে যাওয়া কঠিন। কর্তৃপক্ষ যদি পরীক্ষা স্থগিত করতো, তাহলে উপকার হতো।”
গাড়িচালক বেলায়েত হোসেন জানান, গত বছরের আগস্টে ফেনীতে ভয়াবহ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এখনো ফেনীর মানুষ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বৃষ্টি পরিস্থিতিতে আবার বন্যা শুরু হতে পারে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যাওয়ার চিন্তা করছি৷
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, “গত দুই দিন ধরে জেলায় মাঝারি ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২-৩ দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।”
এদিকে ফেনী পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম মো. বাতেন বলেন, “অতিরিক্ত বৃষ্টি ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে পানি দ্রুত নেমে যাবে। ইতোমধ্যে পৌরসভার ৭টি টিম মাঠে কাজ করছে।”
চলমান বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/৮ জুলাই/আরজেড)

মন্তব্য করুন