মুরাদনগরে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন মামলার মূলহোতা শাহপরান ৫ দিনের রিমান্ডে

কুমিল্লার মুরাদনগরে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনায় আলোচিত মূলহোতা শাহপরানের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার (৯ জুলাই) কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ১১ নম্বর আমলী আদালতের বিচারক মমিনুল হক এই আদেশ দেন। তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে শুনানি শেষে বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শাহপরান শুধু ধর্ষণ মামলার আসামি নন, বরং নির্যাতনের দৃশ্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগেও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। র্যাবের তথ্যমতে, এই শাহপরান ধর্ষণ মামলার মূল আসামি ফজর আলীর ছোট ভাই। ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কয়েক দিন পর বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকালে কুমিল্লার বুড়িচং থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন ঢাকায় র্যাবের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শাহপরানের সংশ্লিষ্টতার কথা জানানো হয়। পরে তাকে কুমিল্লা থানায় হস্তান্তরের পর আদালতে তোলা হয়।
এর আগে শনিবার (৫ জুলাই) শাহপরানকে কুমিল্লার ১১ নম্বর আমলী আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. সাদেকুর রহমান।
উল্লেখ্য, পুরো ঘটনাটি ঘটে গত ২৬ জুন রাতে। মুরাদনগরের একটি গ্রামের টিনশেড ঘরে। অভিযোগ অনুযায়ী, সুদের টাকার খোঁজে ফজর আলী নির্যাতিতা নারীর বাড়িতে গিয়ে কাউকে না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় কয়েকজন যুবক ওই নারীকে বিবস্ত্র করে মারধর করে এবং সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
ঘটনার পরদিন, ২৭ জুন ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী নারী। ২৮ জুন তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেসময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় তিনি ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে রাজি হননি। পরে নিজের আগ্রহেই আবার পরীক্ষা করাতে সম্মতি দেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমীন।
এদিকে, নির্যাতন ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামি—মোহাম্মদ আলী ওরফে সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিক—তিন দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার আদালতে হাজির হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশের ভাষ্যমতে, রিমান্ডে থাকা অবস্থায় সুমন ও রমজান আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার আগ্রহ দেখালেও পরে তারা সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলোর সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
ধর্ষণের মামলার মূল অভিযুক্ত ফজর আলী বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাকে ধরে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়। ২৯ জুন ভোরে ঢাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ফজর আলীর অস্ত্রোপচার প্রয়োজন এবং পুরোপুরি সুস্থ হতে অন্তত দুই মাস সময় লাগবে।
পুলিশ জানায়, এই ঘটনার পর দুইটি পৃথক মামলা হয়েছে—একটি ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় এবং অন্যটি পর্নোগ্রাফি আইনে। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সামাজিকভাবে ন্যায়বিচারের দাবিতে স্থানীয়রা প্রতিবাদও জানিয়ে আসছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
(ঢাকা টাইমস/০৯জুলাই/এসএ)

মন্তব্য করুন