বিবিসি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীর ভয়াবহ ৩০ মিনিট

অনলাইন ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৯ জুলাই ২০২৫, ১১:১৬| আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:৪৫
অ- অ+

৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের দিন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হন বলে বিবিসি আই-এর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে। সেদিনের শত শত ভিডিও, ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য এবং সেগুলো বিশ্লেষণের পাশাপাশি সরেজমিনে বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদনটি তৈরি করে বিবিসি।

প্রতিবেদনটি করেছেন বিবিসি বাংলার প্রতিবেদক ক্রিস্টোফার জাইলস, ঋদ্ধি ঝা, রাফিদ হোসেইন, তারেকুজ্জামান শিমুল।

প্রতিবেদনে ভয়াবহ ওই হত্যাকাণ্ড কীভাবে ঘটেছিল তা তুলে ধরেছে বিবিসি। ওই হত্যাকাণ্ডের শুরু ও শেষ এবং তাতে কত মানুষ হতাহত হয়, সে সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য ও বিবরণ উঠে এসেছে, যা আগে সামনে আসেনি।

এগুলো উদ্ঘাটন করতে বিবিসির অনুসন্ধানী টিম সেদিনের শত শত ভিডিও, ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ এবং সেগুলো বিশ্লেষণের পাশাপাশি সরেজমিনে বেশ কয়েকবার যাত্রাবাড়ীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

অনুসন্ধান চলাকালে ঘটনার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও বিবিসি পায়, যেখানে ৫ আগস্ট বিকালে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিবর্ষণ শুরুর কিছু মুহূর্ত দেখা যায়। ভিডিওটি মেরাজ হোসেন নামের একজন আন্দোলনকারীর মোবাইল ফোন থেকে পাওয়া যায়, যিনি পুলিশের গুলিবর্ষণের সময় ধারণ করেন এবং নিজেও সেদিন পুলিশের গুলিতে মারা যান।

মিরাজের মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা তার মোবাইল ফোনটি খুঁজে পান এবং ফোনে সংরক্ষিত ভিডিওটি বিবিসিকে দেন।

ভিডির মেটাডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেদিন নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনাটি শুরু হয় দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে। তাতে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী থানার ভেতরের পুলিশ সদস্যরা ফটকের সামনে অবস্থানরত বিক্ষোভকারীদের ওপর হঠাৎ গুলিবর্ষণ শুরু করেন।

মিরাজের ধারণ করা ভিডিও থেকে হত্যাকাণ্ডটির সূত্রপাতের বিষয়ে স্পষ্ট একটা ধারণা পাওয়া যায়।

থানার উল্টো দিকে অবস্থিত একটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ গুলি চালানো শুরু করার পর প্রাণ বাঁচাতে গলির ভেতর দিয়ে ছুটে পালাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। থানার সামনে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল।

ঘটনার সময়ের কিছু ড্রোন ভিডিও বিবিসির হাতে এসেছে। ভিডিওর মেটাডেটার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিকাল ৩টা ১৭ মিনিটেও যাত্রাবাড়ী থানার সামনের মহাসড়কে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ।

এরপর তাদের বড় একটি দলকে থানার উল্টো পাশে অবস্থিত একটি অস্থায়ী সেনা ব্যারাকে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।

ড্রোন ভিডিওতে মহাসড়কের ওপর হতাহতদের একাধিক লাশ পড়ে থাকতেও দেখা যায়। ভ্যান-রিকশা এবং বাইকে করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা।

পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শাহবাগের দিকে চলে যান। আর যারা তখনও যাত্রাবাড়ীতে ছিলেন, তাদের মধ্যে বিক্ষুব্ধ একটি অংশ থানায় আগুন দেন। এ ঘটনায় পুলিশের কমপক্ষে ছয়জন সদস্য নিহত হন।

সেদিন যাত্রাবাড়ীতে অন্তত ৩০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছিল। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত তখনকার খবর, নিহতদের পরিবারের সাক্ষাৎকার, হাসপাতালের নথি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টের সত্যতা যাচাই করার পর বিবিসি দেখেছে, সেদিন যাত্রাবাড়ীতে কমপক্ষে ৫২ জন সাধারণ মানুষ নিহত হন।

৫ আগস্টের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। এর মধ্যে থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসানের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়েছে, যিনি হত্যাকাণ্ড চলাকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জুলাই আন্দোলনে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটি ফাঁস হওয়া অডিও কল যাচাই করে এটি নিশ্চিত হয় বিবিসি।

গত বছরের ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ওই ফোনালাপটি করেন শেখ হাসিনা। রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দাবি করা হয় প্রতিবেদনে।

একই সঙ্গে বিবিসিও নিজস্ব উৎস থেকে সত্যতা যাচাই করেছে এই রেকর্ডিংয়ের। এতে কোনো রকম এডিট করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরির সম্ভাবনাও খুবই কম বলে জানায় বিবিসি।

(ঢাকাটাইমস/৯জুলাই/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নোয়াখালীর সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষকদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ
মিরসরাইয়ের নিষিদ্ধ ট্রেইল মেলখুমে দুই পর্যটকের মৃত্যু, আহত ৩
টেকনাফে বিজিবির অভিযানে ইয়াবার বড় চালান জব্দ, স্ত্রী আটক— চোরাকারবারি পলাতক
তামাকের কারণে প্রতিদিন ৪৪২ মৃত্যু ঠেকাতে ঢাবিতে প্রতীকী কফিন র‍্যালি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা