বাংলাদেশিদের গোল্ডেন ভিসা দেবে দুবাই, দূর থেকে আবেদন করার সুযোগ

বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর। এখন থেকে উপযুক্ত যোগ্যতা থাকলে তারা দূর থেকেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বহুল কাঙ্ক্ষিত গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সাধারণত বিশাল ব্যবসা বা সম্পত্তিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) গোল্ডেন ভিসা পাওয়া কঠিন। তবে এবার দেশটি নতুন এক মনোনয়নভিত্তিক গোল্ডেন ভিসা চালু করেছে, যা পেতে বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়বে না। বিশেষ এই ভিসাটি মূলত ভারতীয় ও বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইর প্রতিবেদনে জানা গেছে, আগে দুবাই গোল্ডেন ভিসার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে হতো বা কমপক্ষে ২ মিলিয়ন দিরহাম (প্রায় ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা) মূল্যের সম্পত্তি কিনতে হতো। কিন্তু নতুন এই ভিসায়, মাত্র ১ লাখ দিরহাম (প্রায় ৩৩ লাখ টাকার সামান্য বেশি) ফি দিয়ে আবেদন করা যাবে।
ঢাকায় ভিএফএস গ্লোবাল ও বাংলাদেশভিত্তিক রায়াদ গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে চালু করা হয়েছে বিশেষ ইমিগ্রেশন অ্যাডভাইজরি সার্ভিস, যা বাংলাদেশি নাগরিকদের ইউএই গোল্ডেন ভিসা প্রাপ্তিতে সহায়তা করবে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে উদ্যোক্তা, পেশাজীবী, বিনিয়োগকারী, সৃজনশীল ব্যক্তি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন ছাড়াই ১০ বছর মেয়াদি ইউএই রেসিডেন্সি পেতে পারবেন।
যোগ্য প্রার্থীরা সরকারিভাবে মনোনীত হয়ে সহজ ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার সুযোগ পাবেন। ব্যবসায়ী, বিজ্ঞানী, পেশাজীবী, উদ্যোক্তা, সৃজনশীল ও অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সাররা এখন One Vasco UAE Golden Visa পোর্টাল কিংবা নির্ধারিত হেল্পলাইনে যোগাযোগ করে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিতে পারবেন।
ভিএফএস গ্লোবাল জানিয়েছে, ঢাকায় নব গঠিত “Center of Excellence”-এর এটি প্রথম কার্যক্রম, যেখানে জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ও আইনি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সহজ ও নিয়মমাফিক করা হচ্ছে।
ইউএই গোল্ডেন ভিসা ধারকরা তাদের স্ত্রী/স্বামী, সন্তান (প্রাপ্তবয়স্ক সহ) ও বাবা-মাকে স্পন্সর করে দেশটিতে নিয়ে যেতে পারবেন, যা দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের জন্য পরিবারগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
ভিএফএস গ্লোবালের দক্ষিণ এশিয়া প্রধান অপারেটিং কর্মকর্তা ইউম্মি তালওয়ার বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি ইউএই গোল্ডেন ভিসা নিয়ে ইমিগ্রেশন পরামর্শ সেবার চাহিদা অনেক বেশি। গ্রাহককেন্দ্রিক নীতির আওতায় এমন সেবা চালু করতে পেরে আমরা আনন্দিত, যা প্রার্থীদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।”
রায়াদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রায়াদ কামাল আয়ুব বলেন, “ইউএই-এর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, কর সুবিধা এবং বিলাসবহুল জীবনধারা এটিকে উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিদের জন্য আদর্শ গন্তব্যে পরিণত করেছে। বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধির সময়ে এই সেবা সময়োপযোগী।”
তিনি আরও বলেন, “নিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থাও ইউএই-কে বাংলাদেশের উচ্চ আয়ের মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।”
ভিএফএস গ্লোবাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই নতুন সেবার মাধ্যমে তারা এবং রায়াদ গ্রুপ বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ইউএই গোল্ডেন ভিসা সহজলভ্য করে তুলছে, যা দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক চলাচল ও ব্যবসায়িক সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।
এই নতুন মনোনয়নভিত্তিক ভিসা সম্পত্তিভিত্তিক গোল্ডেন ভিসার থেকে আলাদা। সম্পত্তিভিত্তিক ভিসা সম্পত্তি বিক্রি বা ভাগ হয়ে গেলে বাতিল হতে পারে, কিন্তু মনোনয়নভিত্তিক ভিসা একবার পেলে স্থায়ী থাকবে। ভিসাধারীরা পরিবার নিয়ে দুবাইতে বসবাস করতে পারবেন এবং গৃহকর্মী, গাড়িচালক নিয়োগের সুযোগ পাবেন। এছাড়া তারা দুবাইয়ে যেকোনো ব্যবসা বা পেশাদার কাজ করতে পারবেন।
বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশের জন্য এই ভিসাটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারত ভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রায়াদ গ্রুপ এই ভিসার প্রাথমিক রূপ পরীক্ষা করছে। রায়াদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রায়াদ কামাল আইয়ুব এই সুযোগটিকে ‘সুবর্ণ সুযোগ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
নতুন ভিসার আবেদনকারীদের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করা হবে, যার মধ্যে অর্থপাচার, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে যে আবেদনকারী সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংস্কৃতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, ব্যবসা ও পেশাদার সেবায় ইতিবাচক অবদান রাখবে।
(ঢাকাটাইমস/৯ জুলাই/আরজেড)

মন্তব্য করুন