বর্ষায় রোগভোগ কাবু করে ফেলে শরীরকে, সুস্থ থাকতে যা খাবেন এবং যা খাবেন না

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৭
অ- অ+

প্রকৃতিতে এখন বর্ষাকাল চলছে। সারাদেশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।প্রকৃতি ঠান্ডা হলেও বৃষ্টির প্রকোপে জনজীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। ঋতু পরিবর্তনকে নিজের শারীরবৃত্তীয় চক্রে খাপ খাইয়ে নিতে একটু সময় লাগে। তাই এই সময়েই অসুখ ঢুকে পড়ে ঢিলেঢালা সুরক্ষার ফাঁক গলে। তাই সচেতন হওয়ার সেরা সময় এটাই। বর্ষাকে কবজা করতে কিছু সাধারণ নিয়ম মানাই যথেষ্ট বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাদের মতে, বর্ষায় শরীরের ‘প্রোটেকটিভ মেকানিজম অর্থাৎ শরীরের নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ঠিক রাখতে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। বিশেষ করে বর্ষায় অসুখ ও হাঁচি-কাশির সমস্যা হয়। তাই এই বর্ষায় সার্বিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় মেনে চললে সুস্থ থাকা যায়।

বর্ষাকলে রোগভোগ বাড়ে। চারপাশে স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার সঙ্গে রয়েছে ডেঙ্গু আর করোনার প্রাদুর্ভাব। ফলে খুবই সচেতন থাকার সময়। চিকিৎসকেরা এই সময়টাতে খাবারের ব্যাপারে বেশি সতর্ক হতে বলছেন। কারণ এই সময়ই সব চেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে জীবাণুরা। আর সুযোগ পেলেই বাঁধিয়ে দেয় জ্বর, সর্দি, কাশি, অ্যালার্জি, স্কিন ইনফেকশন, হজমের সমস্যা, পেটের সমস্যা। আবহাওয়ায় আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে হজমশক্তি কমে যায়। তাই বর্ষার ডায়েট প্লান ভেবে চিন্তা করে নির্ধারণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বর্ষার সময় কয়েকটি খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। বর্ষার সময় চাই পুষ্টিকর খাবার। বিশেষ করে যেসব খাবারে অ্যান্টিবডি থাকে। কেননা, বর্ষায় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়।

বর্ষার মৌসুমে শরীর সুস্থ রাখতে মৌসুমী সবজি ও ফল প্রচুর পরিমাণে খাওয়া জরুরি। আপেল, আম, জাম, লিচু,কাঁঠাল, ন্যাশপাতি এই সব মরসুমি ফল খান। এ ছাড়া অবশ্যই খাদ্যতালিকায় রাখুন ওল, মিষ্টি আলু, গাঁঠি কচু, করলা ইত্যাদি সব্জি। শরীরকে সুস্থ রাখতে ও শরীর আর্দ্র রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

ঘর থেকে বের হলেই বিশুদ্ধ পানির বোতল সঙ্গে রাখুন। বর্ষাকালে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। যতদূর সম্ভব পানি ফুটিয়ে পান করুন। খাবারের আগে অবশ্যই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।হাত ধোয়ার একান্ত উপায় না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।

রাস্তার ধারের কাটা ফল, ফলের রস, আখের রস এড়িয়ে চলুন। ডায়রিয়া বা ডিসেন্ট্রি হলে বারেবারে ওআরএস স্যালাইন খান। সঙ্গে বাড়ির তৈরি হালকা খাবার খাওয়া যেতে পারে। ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

বর্ষায় চোখের ইনফেকশনও দেখা যায়। বিশেষত কনজাংটিভাইটিস। চোখ চুলকালে, জল পড়লে বা চোখের কোনায় পিচুটি হলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যখন তখন চোখ কচলানোর অভ্যাস বদলাতে হবে। এতে ইনফেকশন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। শ্বাসকষ্ট দূর করতে মধু দারুণ কাজ করে। আধা গ্রাম গুঁড়া করা গোলমরিচের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু ও আদা মিশিয়ে দিনে তিনবার খেলে হাঁপানি রোগে উপকার পাওয়া যায়।

ডাবের পানি পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। কারণ ডাবের পানিতে রিবোফ্লোবিন, নিয়াসিন, থায়ামিন ও পিরিডক্সিনের মতো উপকারী উপাদানে ভরপুর। ডাবের পানি প্রতিদিন পান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে জীবাণুরা আক্রমণ করতে পারে না।

বর্ষায় নিয়মিত লেবু খেতে পারেন। কারণ লেবুতে ‘রুটিন’ নামের বিশেষ ফ্লাভোনয়েড পাওয়া যায়, যা শিরা ও রক্ত জালিকার প্রাচীর শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এ ছাড়া লেবুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি ও বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, যা সর্দিকাশির সমস্যা দূরসহ বিভিন্ন ক্যানসার নিরাময়ে সহায়তা করে। স্নায়ু ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, ফুসফুস পরিষ্কার রাখে এবং হাঁপানির সমস্যা দূর করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বর্ষায় খালি পেটে রসুন খাওয়া হলে এটি অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে। খালি পেটে অথবা নাশতার পর ১ কোয়া রসুন খাতে পারেন। সামান্য তেলে অর্ধেক কোয়া রসুন ভেজে তা এক টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেলে বুকে জমে থাকা কফ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। শরীর থেকে জ্বর ও ঠান্ডা দূর করতে প্রতিদিন ২-৩ কোয়া রসুন কাঁচা খেতে হবে।

ডিটক্স ওয়াটার হিসেবে গ্রিন টি- ও যথেষ্ট উপকারী। ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা দূর করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিফ্লেমেটরি উপদান সমৃদ্ধ এই পানীয়।

তুলসী পাতা মেশানো চা যা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ অর্থাৎ ইনফেকশন থেকে আপনাকে দূরে রাখে। সেই সঙ্গে সুস্থ রাখে আপনার ত্বককেও।

হলুদ মেশানো দুধ স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ভাল। শরীরের নানা রকমের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি আপনার ত্বকের ইনফেকশন দূর করতেও সাহায্য করে এই হলুদ।

বর্ষার মরশুমে আপনার ডায়েটে থাকুক রকমারি ফল। বিভিন্ন ধরনের ফল খেলে পেটও ভরবে। শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকবে।

ভাজাভুজি এবং স্ট্রিট ফুড ও তেলমশলা যুক্ত খাবার বর্ষাকালে এড়িয়ে চলাই ভাল। কারণ এর প্রভাবে স্বাস্থ্যের অবনতির সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের ক্ষয়ক্ষতিও হতে পারে।

ত্বক আর্দ্র রাখতে এবং সর্বোপরি সুস্থ থাকলে পরিমিত পানি পান করুন। শরীরে পানির ঘাটতি হওয়া কখনই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়।

বর্ষাকালে পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। তাই বাইরের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা যায়, ততটাই ভালো। এবার থেকে ঘন ঘন রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আনার সময় এই বিষয়টা খেয়াল রাখবেন। মাছ-মাংস না খেলে মন ভালো থাকে না? কিছু পুষ্টিবিদের মতে কিন্তু বর্ষাকালে মাছ, মাংস ও ডিম যতটা সম্ভব কম পরিমাণে খাওয়া যায়, ততই ভাল। বিশেষ করে মাছ, কারণ এটি মাছেদের প্রজননের সময়। সামুদ্রিক খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে বর্ষাকালে সেটিও এড়িয়ে চলুন। রান্না করার সময় খাবারে রসুন ও পেঁয়াজের পরিমাণ কমান।

বর্ষাকালে কোনো সময়ই কেটে রাখা ফল খাওয়া উচিত না। এই সময় তো নয়ই। বাতাসের সংস্পর্শে তার ওপর নোংরা ব্যাকটেরিয়া জন্মায়।

যে কোনো খাবার ভালো করে রান্না করে সিদ্ধ করে খাওয়া উচিত। কাঁচা খাবার বর্ষায় না খাওয়াই ভালো। বর্ষায় এ ধরনের খাবারে জন্ডিস, টাইফয়েডের আশঙ্কা অনেক বাড়িয়ে দেয়।

সুস্থ থাকতে কাঁচা লবণ, অতিরিক্ত নোনতা খাবার- যেমন, বাদাম, চিপস, ডালমুট এড়িয়ে চলুন। এতে শরীরে ওয়াটার রিটেনশন থেকে ব্লোটিংয়ের মতো সমস্যা কম হবে। ফাইবার যুক্ত ওটস, বার্লি, ব্রাউন রাইস রাখুন রোজকার ডায়েটে। তাতে পেটের সমস্যা কম দেখা দেবে। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অল্প রসুন ব্যবহার করুন রান্নায়। চায়ে অল্প আদা দিয়ে খান। পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য টক দই, ইয়োগার্ট নিয়মিত খান। প্রতিদিনের খাবার শেষে করলা সেদ্ধ, নিমপাতা, মেথি খান।

সারা বছর যাদের স্কিনে ব্রণ, র‌্যাশের সমস্যা থাকে, তারা বর্ষায় তেল-মশলা যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। মাছ ও মাংস খেলে হালকা মশলায় রেঁধে খান। হার্বাল টি, লিকার চায়ে অল্প মধু, গোলমরিচ, পুদিনা বা তুলসীপাতা দিয়ে খান।

এছাড়া বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। এ সময় ডেঙ্গু যেন না ছড়ায় সে জন্য বাসার আশপাশে যেসব জলাধার বা পানি জমে এমন পাত্র সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘরের দেয়ালে যেন পানি পড়ে ফাঙ্গাস না জন্মায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘর যাতে স্যাঁতসেঁতে হয়ে না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ এ থেকে রোগবালাই হয় বেশি। বর্ষায় পোকামাকড়, বিষাক্ত সাপ ও জোঁকের উৎপাত বেশি হয়, সে কারণে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

বর্ষায় ঘন ঘন জ্বর, ডেঙ্গু জ্বর থেকে সাবধান থাকতে হবে। প্রতিদিন হালকা এক্সারসাইজ করুন। তাতে শরীর অনেকটাই ফিট থাকবে। রক্ত সঞ্চালন থেকে শুরু করে শরীরের যেকোনো ব্যাথা বা কষ্ট কমাতে যোগ ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। জিমে যেতে না পারলেও, হালকা এক্সারসাইজ করুন প্রতিদিন৷ আর সবচেয়ে যেটা উচিত মন থেকে দূর করুন চিন্তা। তাহলে আপনি থাকবেন সুন্দর, সতেজ ও সুস্বাস্থের অধিকরী৷

(ঢাকাটাইমস/১০ জুলাই/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রাজনীতিতে অভিভাবক দল হিসেবে আমরা বারবার ধৈর্য ধরেছি: অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া
এনবিআরের আরও ৬ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরখাস্ত
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাস
তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আরও একজন গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা