বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক চাপাল ট্রাম্প, ড. ইউনূসকে চিঠিতে যে বার্তা দিলেন

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন রপ্তানি পণ্যের অন্যতম বাজার যুক্তরাষ্ট্রে এবার ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। সেই সময় সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি চিঠি লিখে সময় চেয়েছিলেন।
চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প তিন মাস সময় বাড়ান এবং বাণিজ্য ঘাটতি নিরসনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ও চুক্তির জন্য আহ্বান জানান। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশসহ অধিকাংশ দেশই কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি।
এই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে সোমবার ট্রাম্প ঘোষণা দেন, সময় আরও এক মাস বাড়িয়ে ১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি ১৪টি দেশের সরকার প্রধানদের কাছে একটি করে চিঠি পাঠান।
এই চিঠিগুলোতে ট্রাম্প বলেন, “যদি বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আপনার দেশ কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া পণ্যে বাড়তি শুল্ক দিতে হবে।”
ড. ইউনূসকেও এমন একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে, যা ট্রাম্প নিজেই তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেন।
চিঠিতে ট্রাম্প লেখেন, প্রিয় ড. ইউনূস, আপনাদের কাছে এ চিঠি পাঠানো আমার জন্য একটি বড় সম্মানের বিষয়। আমাদের বাণিজ্য সম্পর্কের শক্তি ও প্রতিশ্রুতি এবং আপনার দেশের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। তবে পরবর্তী বাণিজ্য কেবল আরও ভারসাম্যপূর্ণ এবং ন্যায্য, বাণিজ্যের সঙ্গে হবে। অতএব, আমরা আপনাকে বিশ্বের এক নম্বর বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসাধারণ অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা হয়েছে এবং আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, বাংলাদেশের শুল্ক এবং অ-শুল্ক, নীতি ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার কারণে সৃষ্ট এই দীর্ঘমেয়াদি এবং অত্যন্ত স্থায়ী বাণিজ্য ঘাটতি থেকে আমাদের অবশ্যই সরে আসতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আরও লেখেন, ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে শুরু করে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরিত যে কোনো এবং সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বাংলাদেশ থেকে আগত পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক নেব। উচ্চতর শুল্ক এড়ানোর জন্য প্রেরিত পণ্যগুলো সেই উচ্চতর শুল্কের সাপেক্ষে হবে। দয়া করে বুঝবেন, ৩৫ শতাংশ শুল্কটি আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতির বৈষম্য দূর করার জন্য যা প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক কম। আপনারা জানেন, বাংলাদেশ বা আপনার দেশের কোম্পানিগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই পণ্য তৈরি বা উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে কোনো শুল্ক থাকবে না।
বাংলাদেশ যদি এই শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা কোনো ব্যবস্থা নেয় তাহলে শুল্ক আরও বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
চিঠিতে তিনি লেখেন, যদি কোনো কারণে আপনি মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তবে আপনি যে সংখ্যাটি বাড়াতে চান তা আমরা যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছি সেটির সঙ্গে যুক্ত করা হবে। দয়া করে বুঝুন যে এই শুল্কগুলো বাংলাদেশের বহু বছরের শুল্ক এবং অ-শুল্ক, নীতি এবং বাণিজ্য বাধাগুলো সংশোধন করার জন্য প্রয়োজনীয়, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই অস্থিতিশীল বাণিজ্য ঘাটতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘাটতি আমাদের অর্থনীতি এবং প্রকৃতপক্ষে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের দেওয়া এই বাড়তি শুল্ক বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে ব্যাপক চাপের মুখে ফেলবে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম বড় রপ্তানি গন্তব্য।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট সমাধানে দ্রুত কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় হওয়া ছাড়া বাংলাদেশের সামনে আর তেমন বিকল্প নেই।
(ঢাকাটাইমস/৮ জুলাই/আরজেড)

মন্তব্য করুন