কালিয়াকৈর রেঞ্জে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ইঁদুর-বিড়াল খেলা
গাজীপুরের কালিয়াকৈর রেঞ্জে বন বিভাগের জমিতে লাগামহীনভাবে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে চলছে ইঁদুর-বিড়াল খেলা। পুরো রেঞ্জে অন্তত দুই হাজার কাঁচাপাকা বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বহুতল ভবন নির্মাণ হলেও এখনো এক ভাগ উচ্ছেদ হয়নি। আবার বিভিন্ন এলাকায় উচ্ছেদ হওয়া স্থাপনা স্থানীয় দালাল, ভূমিদস্যু ও রেঞ্জের কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় ফের মেরামতের কাজও চলছে।
সরকারি বন সংরক্ষক রেজাউল আলম জানান, প্রতিনিয়তই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চলছে। তবে পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে নেই। ধীরে ধীরে সব স্থানেই উচ্ছেদ হবে বলে তড়িঘড়ি ফোন কেটে দেন তিনি।
সরেজমিনে ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর কালিয়াকৈর রেঞ্জের চন্দ্রা বিট, মৌচাক বিট, বোয়ালী বিট ও সোনাতলা বিটে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা নির্ণামের হিড়িক পড়ে। খুদ সরকারি বনের জমির গাছপালা কেটে ও ফাঁকা জমিতে লাগামহীনভাবে স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়। স্থানীয় দালাল ও ভূমিদস্যুরা গোপনে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সাথে আঁতাত করে এসব স্থাপনা নির্মাণে মদত দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বন বিভাগ এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে জড়িতদের তালিকা তৈরি করে কয়েক শত ব্যক্তিকে মামলার আওতায় আনে। পরবর্তী সময়ে গত ২৩ অক্টোবর বন বিভাগ কালিয়াকৈর রেঞ্জের চন্দ্রা বিট অফিসের আওতাধীন বোর্ডমিল এলাকায় যৌথ বাহিনী ও প্রশাসনের সহায়তায় বৃহদাকারে অভিযান চালিয়ে দেড় শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করে। এতে পুরো রেঞ্জে একরকম আতংক ছড়িয়ে যায়। উচ্ছেদের ধারাবাহিকতা চলবে বলে ঘোষণা দিয়ে বন বিভাগ বিভিন্ন এলাকায় মিটিং ও মাইকিং করে। এরপর বিভিন্ন এলাকায় হাতে গোনা কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও জোরালোভাবে কোথাও উচ্ছের অভিযান দেখা যায়নি। ফলে দখলকারীরা আবার স্থাপনা নির্মাণ শুরু করে।
একাধিক সূত্র জানায়, কালিয়াকৈর রেঞ্জের কর্মকর্তা মনিরুল করিম উচ্ছেদে গড়িমসি করেন। তার ব্যক্তিগত লোকজন দিয়ে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ নিচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় বনের জমি ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েও নানাভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
অপরদিকে রেঞ্জ কর্মকর্তা কার্যালয়ের অদূরে বনের জমিতে থাকা গাছপালা ও বেতবাগান কেটে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করলেও সেখানে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বন বিভাগ। অভিযোগ রয়েছে, ওই পুকুর খনন করা বাবদ স্থানীয় সাইফুল নামে এক ব্যক্তি রেঞ্জ কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ দুই প্রহরীর মাধ্যমে তিন লাখ টাকা লেনদেন করেন। এভাবেই একের পর এক অবৈধ স্থাপনা হলেও তা উচ্ছেদে দিনের পর দিন চলছে ইঁদুর-বিড়াল খেলা।
নাম প্রকাশ না করে চন্দ্রা বিটের আওতাধীন বোর্ডমিল এলাকার এক ব্যক্তি জানান, ওই এলাকায় উচ্ছেদের পর বিভিন্ন লোকজন তাদের ঘরবাড়ি রক্ষা করতে বন বিভাগকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছে। পরবর্তীতে সেখানে উচ্ছেদের কথা থাকলেও বন বিভাগ সেদিকে আর নজর দেয়নি।
একই বিটের সিনাবহ খন্দকারপাড়া এলাকার এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে দুই দিন পর বন বিভাগের লোকজন আমার বাড়িতে এসে আমাকে মামলার ভয় দেখান। তারপর বলেন ঘর ভেঙে দিতে। পরে এলাকার কিছু দালাল সবাইকে ডেকে নিয়ে টাকা দাবি করে বলল অভিযান আসবে না, অফিসে টাকা দিতে হবে।
সিনাবহ বাজার এলাকায় শতাধিক স্থাপনা হলেও সেখানে বন বিভাগ মিটিং করে মাত্র দুটি স্থাপনা ভেঙে নজর সরিয়ে নেয়। ওই স্থাপনার মালিক রিপন আহম্মেদ বলেন, ‘আমার পুরনো বাড়ি অল্প মেরামত করেছিলাম। আর অন্যান্য লোকজন বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করেছে। কারো স্থাপনা উচ্ছেদ না করে আমার এখানে ভেঙে দিয়েছে।’
তবে উচ্ছেদ অভিযানে গড়িমসিসহ বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করেন কালিয়াকৈর রেঞ্জের কর্মকর্তা মনিরুল করিম। তিনি বলেন, ‘আমরা যতটা সম্ভব করে যাচ্ছি। তাছাড়া আমি বা আমার অফিসের কেউ কোথাও থেকে যাতে কোনো টাকা-পয়সা না নেয় সে ব্যাপারেও নির্দেশনা রয়েছে। আমরা এসব থেকে দূরে রয়েছি।’ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব হবে।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশির আল মামুন বলেন, ওই রেঞ্জের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি এসব কাজের সাথে যুক্ত থেকেন, তার সঠিক তথ্য পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/৪ডিসেম্বর/মোআ)
মন্তব্য করুন