বীণের তালে কি সাপ নাচে?

আবদুল গাফফার রনি, প্রদায়ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর ২০১৬, ১০:২৬| আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০১৬, ১০:২৭
অ- অ+

সাপের শ্রবণ ও ঘ্রাণ শক্তি অত্যন্ত দুর্বল। অথচ সাপের এই দুটো ইন্দ্রিয় শক্তি নিয়েই আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে নানা গালগল্প। আজও বেদেরা বীণ বাজিয়ে গ্রামে গ্রামে সাপ খেলা দেখিয়ে বেড়ায়; সাপুড়েরা হাটে-বাজারে সাপের খেলা দেখিয়ে আমাদের মুগ্ধ করে তাবিজ-কবচ বিক্রির পাঁয়তারা করে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, সাপের কান নেই, চেরা জিভ দিয়ে তারা শব্দ শোনে। এ কারণেই সাপকে শব্দ শোনার জন্য ঘন ঘন জিভ বের করতে হয়। সাপের জিভের সেই শ্রবণ শক্তিও এত দুর্বল যে, বীণের শব্দে উতালা হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

বীণ বাজিয়ে সাপ খেলা দেখানোর সময় সাপুড়ে এক ধরনের কৌশলের আশ্রয় নেয়। খেয়াল করলে দেখা যায়, সাপুড়ে যখন হাত ঘুরিয়ে বীণ বাজায় তখণ বীণের তালে তালে সাপুড়ে তার নিজের শরীরটাকেও দোলায়। সাপ প্রায় নির্বোধ ধরণের প্রাণী; তাদের দৃষ্টি শক্তিও তেমন প্রখর নয়। তাই বীণের তালে ঘুরতে থাকা সাপুড়ের হাত ও দুলতে থাকা শরীর সাপের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। সাপ বুঝে উঠতে পারে না, তখন তার আসলে কী করা উচিত। তাই একটু ভালো করে বোঝার জন্য, একটু ভালো করে দেখার জন্য সাপও সাপুড়ের সাথে সাথে দুলতে শুরু করে। আমরা সেই দুলনিকেই সাপের নাচ বা খেলা বলে ভুল করি।

কোনো সাপুড়ে বীণ বাজিয়ে গর্ত থেকে সাপকে বাইরে বের করে এনেছে একথা কেবল গল্পেই শোনা যায়। সাপের সিনেমায় অবশ্য দেখাও যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গর্তে পানি না ঢেলে কিংবা খোন্তা-কোদাল দিয়ে গর্ত না ভেঙ্গে সাপকে গর্ত থেকে বের করে আনা অসম্ভব।

এখন প্রশ্ন হতে পারে এত কম শ্রবণ ও ঘ্রাণ শক্তি নিয়ে সাপ চলাফেরা ও খাদ্য সংগ্রহ করে কীভাবে? আগেই বলেছি, সাপ শব্দ শোনার জন্য জিভ ব্যবহার করে। শুধু এই জিভ দিয়ে সাপের শ্রবণ চাহিদার ষোলোআনা মেটে না। সাপের পেটের তলায় এক ধরণের স্নায়ুতন্ত্র আছে। এই আইশের সাহয্যে মাটি থেকে উচ্চ মাত্রার কম্পনযুক্ত শব্দ তরঙ্গ (ভাইব্রেশন) সংগ্রহ করে মস্তিষ্কে চালান করে দেয়। মূলত সাপ এভাবেই শত্রু ও খাদ্যদ্রব্যের অবস্থান কতদূরে তা বুঝতে পারে।

তাবিজ-কবচের জোরে নাকি সাপকে বশ করা যায়? তাবিজ-কবচের ব্যাপারটা পুরোপুরি ধাপ্পা। আসলে সাপুড়েরা দীর্ঘ অনুশীলনের দ্বারা সাপকে বশ মানানো ও সাপ ধরার নানা কৌশল আয়ত্ব করে ফেলে। এই কৌশলকেই তারা তাবিজ-কবচের গুণ বলে প্রচার চালিয়ে সেসব আমাদের কাছে বিক্রির পাঁয়তারা করে। তেমনি কবিরাজেরা মন্ত্র পড়ে সাপের বিষ নামায় এ ব্যাপারটাও সম্পূর্ণ বুজরুকি। কিছু নির্বিষ সাপে কাটা রোগিকে বিষধর সাপে কাটা বলে মন্ত্র-টন্ত্র পাঠ করে নিজের কৃতিত্ব জাহির করার চেষ্টা করে। কিন্তু আসল বিষধর সাপেকাটা কোনো রোগিকে সাপুড়ের কাছে নিলেই কোথায় পালায় তাদের সেই মন্ত্রের শক্তি!

(ঢাকাটাইমস/৫অক্টোবর/এজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নববর্ষ উৎসব হিসেবে মহররম উদযাপন: ইসলামের আদর্শবিরোধী চক্রান্ত
পিএসজির বিরুদ্ধে এমবাপে মামলা করলেন
হঠাৎ তেহরানে একের পর এক বিস্ফোরণ, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু
‘কাঁটা লাগা’ খ্যাত শেফালি জারিওয়ালার অকাল মৃত্যু
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা