নূর হোসেন চত্বর এখনো জিরো পয়েন্ট!

নজরুল ইসলাম
  প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:০৮
অ- অ+

জিপিও ভবনের সামনে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থী এক ভদ্রলোকের কাছে জানতে চাইলেন ‘জিরো পয়েন্ট’টা কোনদিকে। উত্তরে ভদ্রলোক বললেন, এটাইতো ‘জিরো পয়েন্ট’। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওই শিক্ষার্থী কাকে যেন ফোনে বলছেন, ‘আমি জিরো পয়েন্টে আছি, আপনি চলে আসেন।’ শিক্ষার্থীর কথপোকথন শুনে জিপিও ভবনের রাস্তা পার হতেই দেখা যায়, একের পর এক বাস থামছে। সেখানে যাত্রীদের উদ্দেশে চালকের সহকারীদের হাঁক-জিরো পয়েন্ট, জিরো পয়েন্ট। নামেন।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনের নামানুসারে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টের নাম নূর হোসেন চত্বর হয়েছে প্রায় ৩১ বছর হতে চলল। কিন্তু আজও সেই চত্বরে কোনো স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়নি। এটা যে নূর হোসেন চত্বর সেটাও বোঝার উপায় নেই। নূর হোসেনের কোনো ভাস্কর্য বা তাঁর আত্মত্যাগ সম্পর্কে কিছুই লেখা নেই কোথাও।

১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান ধারণ করে মিছিলে অংশ নেন যুবলীগ নেতা নূর হোসেন। গণমিছিলের একপর্যায়ে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তাঁর তাজা রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ, বেগবান হয় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটে। জিরো পয়েন্টের নামকরণ করা হয় নূর হোসেন চত্বর।

চত্বরের দেয়ালে খোদাই করা শহীদ নূর হোসেনের নামটি লেখা থাকলেও সেটা প্রায়ই ঢেকে যায় রাজনৈতিক নেতাদের ব্যানারে। লাল-সবুজ চত্বরটির গায়ে নূর হোসেনের নাম খোদাই করা চারটি পিলারে নূর হোসেনের নামের চেয়ে রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলার দূরত্ব নির্দেশক তথ্যগুলোই ঝলঝল করে বেশি। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চত্বরের গায়ে রাজনৈতিক নেতাদের ব্যানারে ছেয়ে আছে। এটা যে নূর হোসেন চত্বর সেটা বোঝার উপায় নেই। চত্বরের দেয়ালের তিন দিকেই ব্যানারের আড়ালে খোদাই করা শহীদ নূর হোসেনের নামটি ঢেকে গেছে। তাহলে কী নূর হোসেন চত্বর নামটি শুধুমাত্র কাগজপত্রেই আটকে আছে?

জিপিও ভবনের সামনে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রবিন হোসেন। তার কাছে জানতে চাই নূর হোসেন চত্বরটি চেনে কি না? জবাবে এই শিক্ষার্থী এদিক-ওদিক তাকিয়ে চিনে না বলে জানায়। পরে পকেট থেকে মোবাইল বের করে ইন্টারনেটের সহযোগিতা নিয়ে জানায়, এইদিকেই তো দেখাচ্ছে। রবিন যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনের চত্বরটাই হচ্ছে শহীদ নূর হোসেন চত্বর। তাকে বিষয়টি বলার পর সে বলে, ‘এটাতো জিরো পয়েন্ট হিসেবেই চিনি, সবাই এটাকে জিরো পয়েন্টইতো বলে। শহীদ নূর হোসেনের কথা বইতে পড়েছি, তবে এটা যে নূর হোসেন চত্বর সেটা আজ জানা হলো।’ রবিনের সঙ্গে আলাপ সেরে কয়েক কদম পা মাড়িয়ে পুলিশ সার্জেন্ট মুক্তার মিয়ার কাছে জানতে চাই তিনি নূর হোসেন চত্বর চেনেন কি না। জবাবে মুক্তার মিয়া বলেন, ‘এই নামে এখানে কিছু নেই, এটাতো টিএসির দোয়েল চত্বরের দিকে। আপনি সম্ভবত ভুল জায়গায় এসেছেন।’

রবিন-মুক্তারের মতো বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় শহীদ নূর হোসেন চত্বর প্রসঙ্গে। এমন একজন মানুষও পাওয়া গেল না যে, তারা নূর হোসেন চত্বর চেনেন। সবাই এটাকে জিরো পয়েন্ট হিসেবে চেনে।

নূর হোসেন চত্বর সংরক্ষণ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না এটা আমার জানা নেই। আমাদের মেয়র মহোদয় এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নিয়েছেন কি না সেটা বলতে পারব না। এই সরক্ষণ বিষয়ে আমি আপনাকে কিছু বলতে পারছি না।’

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ, হামজাসহ থাকছেন চার প্রবাসী
প্রতীক্ষিত ভালোবাসা
বিএনপির হাতে ১২৩ খুন, মির্জা ফখরুলের ভিন্নমত পোষণ
২০২৬ সালের রমজান ও দুই ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা