প্রতীক্ষিত ভালোবাসা

শহরের কোলাহলে লুকিয়ে থাকা এক নীরব সন্ধ্যায়
আমি খুঁজে ফিরি—তোমাকে।
যে এখনো আসেনি,
হয়তো আসবেও না কখনো।
তবু মনে হয়, কোনো এক গোধূলিবেলায়
তুমি আসবে—
নিভৃতে, চুপিসারে, এক অচেনা বাতাসের মতন।
.
মোবাইলের নীল আলোয় জ্বলে ওঠে
অগণিত মুখ, অপরিচিত নাম—
কিন্তু কোথাও নেই তোমার ছায়া।
তুমি যেন সেই অস্থির মেঘ,
যে প্রতিশ্রুতি দেয় বৃষ্টির,
তবু বারবারই কেবল ছুঁয়ে যায়
আকাশের কান্নাভেজা প্রান্তর।
.
স্মৃতির ধুলোমাখা এক ক্যাফের কোণে
দুটি কফির কাপ মুখোমুখি—
একটিতে আমার উষ্ণতা,
অন্যটিতে তোমার অনুপস্থিতি।
তোমার কাপটি ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে আসে,
ঠিক যেন আমার অন্তরের জমে থাকা
নিঃশব্দ অপেক্ষার দীর্ঘশ্বাস।
.
এই ডিজিটাল যুগের প্রেমে
আমরা যেন ক্লান্ত পথিক—
তুলনাভিত্তিক ‘অ্যাপ’-এ খুঁজি নিখুঁত হৃদয়,
ভুলে যাই—ভালোবাসা কোনো প্রযুক্তি নয়,
এ এক নিঃশব্দ স্পন্দন,
যা জন্মায় গভীর নির্জনতায়,
বাঁচে ধৈর্যে, মমতায়, নিঃশর্ত এক ছোঁয়ায়।
.
হয়তো তুমি আছো খুব কাছেই—
কোনো ব্যালকনির একাকী জানালায় দাঁড়িয়ে,
অথবা পাতাল রেলের নীরব আসনে বসে।
সম্ভবত তোমার চোখেও সেই একই পঙক্তি
যা আমিও কিছুক্ষণ আগে পড়েছিলাম,
তুমি হয়তো দেখছো সেই একই নিঃসঙ্গ স্ট্যাটাস,
যা আমাকেও নিঃশব্দে কাঁদিয়েছে।
.
আমরা দুইজনেই অপেক্ষারত—
অচেনা হলেও পরস্পরের জন্যই নির্ধারিত,
একটি অনন্ত সংযোগের গোপন ছায়াপথে
আমাদের হৃদয় গাঁথা এক অভিন্ন আকাঙ্ক্ষায়।
.
প্রতীক্ষিত ভালোবাসা—
একটি অসমাপ্ত সুর,
যার প্রতিটি শব্দ চেনা,
তবু যার কণ্ঠস্বর অনুপস্থিত।
তবুও আমি অপেক্ষা করি,
কারণ আমি বিশ্বাস করি—
এই ভালোবাসা একদিন ঠিকই এসে দাঁড়াবে
আমার দরজায়, নিঃশব্দে, অনিবার্যভাবে।
.
হয়তো কোনো নতুন সূর্যোদয়ে,
তপ্ত বালুকায় পা পুড়ে যাওয়ার পরও,
অথবা এক হঠাৎ বর্ষণভেজা সন্ধ্যায়—
তুমি এসে দাঁড়াবে আমার উঠোনে,
হাতভরে সূর্যের আলো নিয়ে।
.
ততদিন আমি নিজেকেই ভালোবাসি—
কারণ যে নিজেকে ভালোবাসতে শেখেনি,
সে কখনো ভালোবাসতে পারে না কাউকে।
প্রতীক্ষিত ভালোবাসা—
একটি স্বপ্নের মতো সুন্দর ছবি,
যার কল্পনাই অনেকটা প্রাপ্তি,
আর তার পরিপূর্ণতা—
হয়তো কোনো ভিন্ন সময়,
অন্য কোনো জীবনে।

মন্তব্য করুন