কবিতা
দেবদূতের দূতিয়ালি এবং কঙ্কালের বাহাদুরি
ওরে নির্বোধ নন্দলাল!
কবে আর দেখবি তুই স্বপ্নিল সোনালি সকাল?
কঙ্কালের প্রেমে পড়ে আছিস কোন অভব্য মোহে?
অথচ তুই ঠিকই জানিস
তোর মুক্তি কেবল বন্ধনহীন বিগ্রহ-বিদ্রোহে।
কিসে তোর এতো কাতরতা
কিসে তোর ভ্রম হলো মতি?
হাতে হাতে তুলে দিলি কোন চশমা-জোড়া
না বাড়িয়ে অন্তরের অনির্বাণ জ্যোতি?
তুচ্ছ দরদে যদি দয়ার দরিয়া
উথলে উঠেই কাঁপে শিরা-উপশিরা,
আয় ছেড়ে সুনামের সরু চৌকাঠ
সেবার মহিমা লয়ে রাজপথে হাঁট;
সস্তা স্বস্তি নয়, নয় কাটছাট
আলোর মশাল জ্বাল; বিপুল-বিরাট।
এই-যে চৈত্রের খড়খড়ে খরা,
সেই দাবদাহে
কতটাই কাবু হয় এ বসুন্ধরা?
ধরিত্রীর আরেক নাম সর্বংসহা
স্পর্শ করে না তারে কুটিলের জরা।
দেবদূতের দুর্দান্ত ধমকে ঘুম ভেঙে চমকে উঠি,
স্বপ্নের রেশ যদিওবা কাটে,
জেগে থাকে অলৌকিক ছায়ার ভ্রুকুটি।
তবু যথারীতি
নিত্যদিনের অভ্যাসে হই সেই কঙ্কালমুখি।
খটখটে কঙ্কালের গায়ে শাওয়ারজেল মেখে
সিনান করাই বাথ-টাবের কুসুম গরম জলে
মন দেইনা এক তিল
বিশ্ব-সংসার ডুবে যাবার কোন কোলাহলে।
সৌখিন কঙ্কালের কটা-পরচুলায় শ্যাম্পু মেখে
পরিষ্কার করি মাথার খুলি,
পায়ের পাতায় মেখে সুগন্ধি সাবান
নির্মূল করি ময়লা মলিন ধূলি।
আলতো হাতে নরম তোয়ালের পরত বদলে
কঙ্কালের গা দেই মুছে
পরম আদরে অতি আলগোছে।
চুলে বুরুশ বুলাই আশীর্বাদের ঢঙে,
উপযুক্ত ভাঁজ দেখে দেখে;
ফরাসি পারফিউম মেখে
দূর করি অন্তর্গত অখোশবু
কঙ্কাল কলেবরের অভদ্র মূলুকে।
টেলকম পাউডার মাখি কুলীন কঙ্কালে
ফেয়ারনেস ক্রিম মাখি হাড়ভাঙা গালে
স্যুট-টাইয়ে হাল তার লেফাফা দুরস্ত
তবুও অকুণ্ঠে হয় অন্যের দারস্থ।
দেবদূতের সংসার নেই
নেই কঙ্কালের প্রতি কোনো মায়ামোহ,
আমি মর্ত্যবাসী
আছে কতো চোরাবালি বৈশ্বিক ব্যূহ।
অন্ধজনের পথের ভরসা যেমন তার সাদা ছড়ি,
সূর্য-তাপের তারতম্য যেমন বলে দেয় সময়ের ঘড়ি,
আমার ‘পান্থ জনের সখা’ও তেমনি কঙ্কালের বাহাদুরি।
যদিও প্রাণের পুকুর থেকে প্রতিদিন মাছ যায় চুরি,
তবু কঙ্কালকে ভর করেই উড়ে আমার নিরুদ্দেশ ঘুড়ি।