শীতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় মুলা

মুলা পুষ্টিগুণে ভরপুর, স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আমাদের দেশে শীতকালে মুলা পাওয়া যায় যা শরীরকে সহজেই সুস্থ রাখতে পারে। মুলার বৈজ্ঞানিক নাম র্যাফানাস স্যাটাইভাস। মুলা অনেক বৈচিত্র্যময়, আকারে আলাদা, গন্ধযুক্ত, বিভিন্ন রং এবং পরিপক্ব হওয়ার সময়ের বিভিন্নতা রয়েছে। মুলা গাছে বিভিন্ন মিশ্রিত রাসায়নিক নির্গত হওয়ার কারণে এটি তীব্র গন্ধযুক্ত হয়, যার সাথে যুক্ত থাকে গ্লূকোসাইনোলেট, মাইরোসিনাস এবং ইসোথিওসায়ানেট। মুলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা শীতে কফ এবং সর্দি প্রতিরোধ করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম মুলাতে রয়েছে- খাদ্যশক্তি- ১৮ কিলোক্যালরি, শর্করা- ৪.১ গ্রাম, চিনি- ২.৫ গ্রাম, খাদ্যআঁশ- ১.৬ গ্রাম, চর্বি- ০.১ গ্রাম, আমিষ- ০.৬ গ্রাম, থায়ামিন- ০.০২ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লেভিন- ০.০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন- ০.২ মিলিগ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড- ০.১৩৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬- ০.০৪৬ মিলিগ্রাম, ফোলেট- ২৮ আইইউ, ভিটামিন সি- ২২ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম- ২৭ মিলিগ্রাম, আয়রন- ০.৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম- ১৬ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ- ০.০৩৮মিলিগ্রাম, ফসফরাস- ২৩ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম- ২১ মিলিগ্রাম, জিংক- ০.১৫ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম- ২২৭ মিলিগ্রাম।
অনেকে স্বাদের কারণে মুলাকে বেশি পছন্দ করে। মুলা শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যও কাজ করে। তবে এটি খেলে স্বাস্থ্যসম্মত যে লাভ হয়, তা অনেকের অজানা।
ওজন কমাবে
মুলা এমন একটি উপাদান, যা অল্প খেলে পেট সম্পূর্ণভাবে ভরে যায়। অতিরিক্ত ক্যালরিও শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। মুলার মধ্যে জলীয় উপাদানের মাত্রা খুবই বেশি থাকে। একইসঙ্গে থাকে কার্বোহাইড্রেট এবং রাফেজ। যার ফলে, যারা ওজন কমাতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য মুলা খুবই কার্যকরী একটি উপাদান।
ডায়াবেটিস রোধ করে
মুলার মধ্যে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুব কম। এর ফলে, মুলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কখনোই বৃদ্ধি পায় না। এছাড়া, রক্তে শর্করাকে মিশে যেতেও সাহায্য করে মুলা। ফলে রক্তে কখনোই সুগারের মাত্রা বেশি হয় না। উল্টা রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রেখে শরীরকে সুস্থ রাখতে পারে মুলা।
শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করে
নানা কারণে আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস পদ্ধতিতে সমস্যা হতে পারে। যেমন, ঠান্ডা লেগে যাওয়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা সর্দি লাগা, গলা ব্যথা বা ফুলে যাওয়া, ফুসফুসে সংক্রমণ, কোনো রকম অ্যালার্জি এবং আরও নানা কারণ থাকে। মুলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকায় এই ধরনের সমস্যাগুলো সহজে শরীরকে কাবু করতে পারে না। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাও দূর হয়।
হার্টকে ভালো রাখে
মূলার তো অনেকরকম রঙ হয়। এই রঙের পেছনে কারণ হল, মুলার মধ্যে থাকা অ্যান্থোকায়োনিন। এই অ্যান্থোকায়োনিন আসলে এক ধরনের ফ্ল্যাবোনয়েড। এই উপাদানটির বহু স্বাস্থ্যকর দিকও রয়েছে। যেমন বহু গবেষণায় উঠে এসেছে মুলার মাধ্যমে হার্টের যেকোনো সমস্যা দূর করা যায়। এছাড়াও এই উপাদানটি ক্যানসার এবং প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
মুলা শরীরে পটাসিয়াম সরবরাহ করে যার কারণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষত যদি আপনার হাই ব্লাড প্রেশার থাকে, তবে ডায়েটে মুলা রাখা দরকার।
জ্বরের প্রকোপ কমায়
শীতকালে অনেকেরই ঠান্ডা লেগে জ্বর আসে। এই ধরনের সমস্যা মূলত হয় ধুলা, ঠান্ডা বা বিভিন্ন সংক্রমণের জন্য। এই সময় মুলার রস, বিট লবণ দিয়ে পান করলে জীবাণু এবং সংক্রমণ দূর হয়। ফলে জ্বর, সর্দি দূরে পালায়।
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার
মুলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়। যে ব্যক্তি প্রতিদিন সালাদ হিসেবে মুলা খান, তাদের দেহে কখনও ফাইবারের ঘাটতি থাকে না। ফাইবারের কারণে পাচনতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করে।
হজম সহজ করে
মুলা খাবারের হজমে সহায়তা করে। একই সঙ্গে এটি অ্যাসিডিটি, স্থূলত্ব, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এবং বমি বমিভাবের মতো সমস্যা নিরাময়েও সহায়ক।
ত্বক ভালো রাখে
যদি আপনি ঝলমলে ত্বক চান তবে প্রতিদিন মুলার রস খেতে পারেন। এতে ভিটামিন সি এবং ফসফরাস রয়েছে। যা ত্বককে ভালো রাখে।
প্রস্রাবের সমস্যা দূর করে
মুলা প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আসলে মুলা প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীরের বিষাক্ত উপাদান, তরল বর্জ্য হিসাবে বের করে দিতে পারে। এর ফলে কিডনি সুস্থ থাকে এবং মুত্রথলির যেকোনো সমস্যা কমতে শুরু করে। এছাড়াও মূত্রথলিতে প্রদাহজনিত সমস্যা এবং প্রস্রাবের সময় জ্বালা অনুভূত হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
(ঢাকাটাইমস/১৬ নভেম্বর/আরজেড/এজেড)

মন্তব্য করুন