মা-শিশুকে সুস্থ রাখতে গুঁড়ো দুধ বর্জনের আহ্বান

হাসপাতাল ও কিনিক্লগুলোতে গুড়োঁ দুধের প্রচারণা বন্ধে ডাক্তারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। মা ও শিশুকে সুস্থ রাখতে হলে গুঁড়ো দুধ বর্জন করতে হবে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আয়োজিত মাতৃদৃগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও তা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ ও বিধি ২০১৭ এবং পুষ্টিখাতের অর্জন বিষয়ক অবহিতকরণ কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, জন্ম গ্রহণের পরে পরিপূর্ণ সুস্থ সবল শিশুর জন্য মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের শালদুধই শিশুর প্রথম টিকা ও খাবার। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সংক্রামক থেকে শিশুকে দ্রুত রক্ষা করে। শিশুকে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখতে হলে জন্মের প্রথম ছয় মাস অবশ্যই বুকের দুধ দিতে হবে। এর বাইরে আর কিছুই দেয়া যাবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি ঘরে তৈরি শিশুর উপযোগী তরল সুষম ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। তাহলে শারীরিক-মানসিক বিকাশসহ শিশুটি বুদ্ধিমান হবে। কিন্তু মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে যেসব গুঁড়ো দুধ বাজারে বিক্রি হয় সেগুলো শিশু স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

বুকের দুধের পরির্বতে এগুলো খাওয়ালে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগে এবং বিভিন্ন জঠিল রোগে আক্রান্ত হয়।

জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের বাস্তবায়নে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় কর্মশালার আয়োজন করেন।

বক্তারা বলেন, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর খুব দ্রুত শাল দুধ খাওয়ালে মায়ের রক্তক্ষরণ কম হয় ও গর্ভফুল পড়তে সাহায্য করে। ফলে মা রক্তস্বল্পতা থেকে রক্ষা পায়। দেশী-বিদেশী কিছু অসাধু কোম্পানি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে শিশুদের জন্য মায়ের দুধের পরির্বতে গুঁড়ো দুধের প্রচার প্রচারণা চালায়। তারা এক শ্রেণির ডাক্তারদের চুক্তিতে শিশুদের জন্য মায়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবস্থাপত্রে গুঁড়ো দুধ লেখানোর জন্য বাধ্য করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বক্তারা আরও বলেন, সন্তান প্রসবের পর কোনো মা মারা গেলে শুধুমাত্র ওই শিশুর জন্য বুকের দুধের পরিবর্তে রেজিস্টার্ড শিশু চিকিৎসকেরা তাদের ব্যবস্থাপত্রে কারণ উল্লেখ করে বিকল্প হিসেবে ভালোমানের গুড়ো দুধ দিতে পারবে। মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে কোনো কোম্পানি তাদের উৎপাদিত গুঁড়ো দুধের প্রচার-প্রচারণা চালালে তাদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে।

মাতৃদুগ্ধের বিকল্প গুঁড়ো দুধের বিরুদ্ধে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। তাদেরকে হাসপাতাল ও ডাক্তারের চেম্বার বা ক্লিনিক থেকে বয়কট করতে হবে। কর্মশালায় উপস্থিত বিশেষ অতিথিরা এই আইনটি বাস্তবায়নে সর্বত্র প্রচার-প্রচারনা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির সভাপতিত্বে ও জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহাখালীস্থ জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ।

মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমের জাতীয় পুষ্টিখাতের অর্জন বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের পরিচালক ডা. তাহেরুল ইসলাম ও মাতৃদুগ্ধ বিকল্প আইন ২০১৩ ও বিধি ২০১৭ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ শোয়াইব।

স্বাগত বক্তব্য দেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল-মাসুম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারজান হোসেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হায়দার হেনরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উ-পরিচালক মো. সেলিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মাহমুদা আক্তার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আহমেদ তানজিমুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ফটিকছড়ির ডা. নাবীল চৌধুরী, বোয়ালখালীর ডা. জিল্লুর রহমান, সাতকানিয়ার ডা. আবদুল মজিদ ওসমানী, লোহাগাড়ার ডা. মোহাম্মদ হানিফ, চন্দনাইশের ডা. শাহীন হোসাইন চৌধুরী, হাটহাজারীর এএসএম ইমতিয়াজ হোসাইন, সীতাকুন্ডের ডা. মো. নুর উদ্দিন, বাঁশখালীর ডা. মো. শাফিউর রহমান মজুমদার, রাউজানের মো. নুর আলম দ্বীন, আনোয়ারার আবু জাহিদ মো. শরফুদ্দিন, মিরসরাইয়ের ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পটিয়ার শব্যসাচী নাথ, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএস ডা. ওয়াজেদ চৌধুরী অভি, এমও ডিসি ডা. মোহাম্মদ নুরুল হায়দার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসআইএমও ডা. এফ এম জাহিদ, সাংবাদিক রনজিত কুমার শীল, অ্যাডভোকেট সেলিম চৌধুরী, ডা. রুমি দাশ, ডা. রুমানা রশিদ, ডা. ফারিয়া সিলভী, ডা. নারগীস আক্তার সিদ্দিকী, ডা. ফাহিমা আফরিন প্রমুখ। কর্মশালায় বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা অংশ নেন।

(ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/কেএম)