রাইডের টাকায় ‘অ্যাপের ভাগ’, খ্যাপেই যাচ্ছে বেশি

লিটন মাহমুদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৩, ১৩:২৩ | প্রকাশিত : ০২ মার্চ ২০২৩, ২০:২৮

যানজটের শহর ঢাকায় চলাচলে অতিরিক্ত সময় নষ্ট হয় না, এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। এই পরিস্থিতিতে শহরে চলাচলকারীদের জন্য যেন আশির্বাদ হয়ে আসে পাঠাও-উবারের মতো স্মার্টফোন অ্যাপসভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ভাড়ার বিনিময়ে মোটরসাইকেলের পেছনে উঠে গন্তব্যে পৌঁছান, এমন চলাচলকারীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অন্যান্য যানবাহনের চেয়ে তুলনামূলক কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছার কারণে বেশ জনপ্রিয় হয় এসব সেবা।

তবে অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রাহক পেলেও অ্যাপস কর্তৃপক্ষের সেবায় যেন অসন্তুষ্টি বাড়ছে বাইকারদের। অ্যাপসকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না করে গ্রাহকের সঙ্গে মৌখিক চুক্তিতে ভাড়ায় যাচ্ছেন অনেকে। অন্যদিকে বাইকারদের এমন প্রবণতায় নিরাপত্তার আশঙ্কার কথা জানা যাচ্ছে। অপরিচিত ব্যক্তিকে মোটারসাইকেল নিয়ে যাওয়া কিংবা অপরিচিত ব্যক্তির মোটরসাইকেলে ওঠা- দুটোই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তাহলে এই পরিস্থিতির সমাধান কী?

গাড়ি আমার, পরিশ্রম আমার, তেল আমার, মবিল আমার, রাস্তায় পুলিশের মামলা খেলে সেটা উঠাতে হয় আমার, গাড়ির সার্ভিস খরচ আমার এমনকি অ্যাপ ব্যবহারে যে ইন্টারনেট খরচ হয় সেটাও আমারই কিনতে হয়, তাহলে কেন উবার-পাঠাও কোম্পানির আওতায় বাইক চালিয়ে তাদেরকে কমিশন দিতে যাব? আগে স্মার্টফোনে ‘পাঠাও’ অ্যাপ রেজিস্ট্রেশন করা ছিল, অনেক আগেই তা ডিলিট করে দিছি।’ -এভাবেই বলছিলেন আজিমপুর থেকে আসা বাইকার মুস্তাফিজুর রহমান। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে যাত্রী খুঁজে তাদেরকে গন্তব্যে নিয়ে যান তিনি। বুধবার কারওয়ান বাজার মোড়ে ঢাকাটাইমস প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল তার।

এতগুলো অসুবিধার ভিড়ে অ্যাপের অধীনে বাইক চালানোর সুবিধা জানতে চাইলে মুস্তাফিজুর রহমানের উত্তর, ‘অ্যাপে সহজেই ক্লায়েন্ট (গ্রাহক) পাওয়া যায়। একইসঙ্গে ক্লায়েন্ট ও বাইকারের দুজনের জন্যই অ্যাপের অধীনে যাতায়াত নিরাপদ।’। তিনি জানান, অ্যাপের অধীনে রাইড করলে শতকরা ২৫ শতাংশ দিতে হয় সংশ্লিষ্ট অ্যাপ কোম্পানিকে। প্রতি ৩০০ টাকা বাইক রাইডে মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে কোম্পানিকে টাকা দিতে হয়।

এই রাইডার বলেন, ‘প্রতিদিন বাইক চালিয়ে এক হাজার টাকা আয় করতে গেলে তার পেছনে তৈলসহ আনুসাঙ্গিক খরচ আছে ৫০০ টাকার ওপরে। এতে করে যদি ২৫০ টাকায় অ্যাপ কোম্পানিকে দিয়ে দেই তাহলে দিন শেষে নিজের শ্রমের মূল্য থাকে না বললেই চলে। আগে তেল-খরচা কম ছিল। তখন গায়ে লাগত না। এখন সবকিছুর যেমন দাম, হাজারে ২৫০ টাকা কোম্পানিকে দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারি না। এজন্য অ্যাপ ছাড়া খ্যাপেই বাইক চালানো ভালো। এক্ষেত্রে কাউকে কোনো কমিশন দেওয়া লাগে না।’

এদিন দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ মোড়, বেইলি রোড এলাকা ঘুরে যাত্রী ধরতে মুস্তাফিজের মতো অসংখ্য বাইকারের হাঁক-ডাক লক্ষ্য করা যায়। তাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায় অ্যাপ থেকে খ্যাপে অর্থাৎ অফলাইনে বাইক রাইড করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তারা।

বেশিরভাগই বাইকারের সঙ্গে থাকা মোবাইলে উবার-পাঠাও অ্যাপ চালু করা থাকলেও দেখা যায় রাজধানীর বিভিন্ন মোড় ও বাসস্টান্ড থেকে যাত্রী খুঁজছেন তারা। যাত্রী পেলে তাদের সঙ্গে কথা বলে দরদাম মিললেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন। কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামা করছে।

এদিন দুপুরে বাংলামোটর মোড়ে গিয়ে দেখা যায় বেশ কয়েকজন মোটরসাইকেল নিয়ে বসে আছেন। কাছে যেতেই হাবিব নামের আরেক পাঠাও চালক জানতে চান কোথায় যাবেন? ভাড়া ও অ্যাপসের যাওয়ার কথা বললে তিনি বলেন, ‘ভাড়া তো জানেন। সেটা দিলেই হবে। যারা নিয়মিত চলাচল করেন, তারা বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া জানেন।’ অ্যাপসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাত্রীরা অ্যাপে রিকোয়েস্ট দিয়ে অযথা সময় নষ্ট করতে চান না। যাত্রীরা চুক্তিতে চলে যান।’

চুক্তিতে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আরও একাধিক চালক এ প্রতিবেদককে জানান, অ্যাপসের মাধ্যমে গেলে বিভিন্নভাবে টাকা কেটে নেওয়ার পর যা থাকে, তাতে তেলের দাম ওঠে না। তাই বাধ্য হয়ে অ্যাপস ছেড়ে চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছেন। অনেকে আবার সময় বাঁচানোর জন্য চুক্তিতে চলাচল করেন। অ্যাপে কল দিয়ে অযথা সময় নষ্ট করতে চান না। এছাড়া যারা নিয়মিত যাত্রী তাদের বিভিন্ন ধরনের ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো। এক্ষেত্রে তেল খরচের টাকাও উঠে না বলে জানান তিনি।

আমির হোসেন নামে আরেক বাইক চালক ঢাকাটাইসকে জানান, আমি পার্টটাইম (খণ্ডকালীন) বাইক রাইড শেয়ার করি, ‘অ্যাপ কেন যাত্রী নিতে চায় না সেটা কি জানেন? এর একমাত্র কারণ ওরা ২৫% কমিশন নিয়ে নেয়। কমিশন, বাইক ওয়েল, মবিল, বাইক সার্ভিস, পরিশ্রম সব মিলিয়ে আয় ০ %। কমিশনটা ২৫% থেকে ৫% অথবা ১০% করলে সবাই অ্যাপের অধীনে বাইক রাইড করত।

এদিন বাইকে যাতায়াত করেন এমন যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে অ্যাপের পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য পাওয়া যায়। গোলাম সবুর নামের এক যাত্রী বলেন, ‘একটু ঝুকিপূর্ণ হলেও ক্ষেপেই যাতায়াত করা শ্রেয়। অ্যাপে রিকোয়েস্ট দিয়ে রাইডার আসতে অনেক সময় লাগে। আবার অনেক সময় ‘সার্চ করতে করতে বাইক পাওয়াই যায় না। এজন্য অ্যাপস বাদ দিয়ে চুক্তিতে চলে যাই।

চুক্তিতে যাওয়া তো ঝুকিপূর্ণ, ঢাকা টাইমসের এমন কথার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা তো ঘটেই। সেটা জানি। কিন্তু জরুরি সময়গুলোতে অ্যাপসে নেটওয়ার্ক বিজি দেখানোর কারণে ঝুঁকি নিয়েই চলে যাই।’

নয়ন আশরাফ নামের একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী ঢাকাটাইসের এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন, রাইড শেয়ারিং বাইকারগুলোর ইদানিং বেয়াদবি এত বেড়েছে, বলার মত না। অ্যাপে কোথাও যাওয়ার অনুরোধ করলে সেটা রিসিভ করে তারা কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে কোথায় যাবেন? ভাড়া কত আসছে? এর পর তার সুবিধাজনক হলে বলে, থাকেন আসছি। আবার অনেকে ভাড়া জানার পর পরে ,‘ভাই এই ভাড়াতেই নিয়ে যাব আপনাকে, কিন্তু অ্যাপের রিকোয়েস্ট ক্যান্সেল করে দেন। এগুলোর সমাধান দরকার।

তবে বাইকে যাতায়াতের জন্য অ্যাপকে প্রধান্য দেন এমনই একজন রিয়াদ হোসেন। অ্যাপে যাতায়াতের বেশকিছু সুবিধা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমেই নিরাপত্তা, অ্যাপে যাতায়াত করলে নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। কারণ রাজধানীতে অনেক ধরনের লোক আছে, কে কেমন সেটা তো আর কাউকে দেখা পরিমাপ করা যায় না। এজন্য অ্যাপে যাতায়াত করলে নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। কারণ এতে তাদের ডাটা অ্যাপস কোম্পানির কাছে থাকে।

তিনি বলেন, অ্যাপে ভাড়া নিয়ে দরদাম করা লাগে না। গন্তব্যের নাম লিখে সার্চ দিলেই অ্যাপসে ভাড়া দেখায়। ভাড়া সন্তোষজনক হলে গেলাম, নয়তো গেলাম না। এছাড়া কোথাও যেতে হলে বাসস্টান্ড বা রাস্তার মোড়ে যেতে হয়না। যেকোন স্থানে বসে রিকোয়েস্ট দিলে সেখানেই বাইক পৌঁছে যায়।

এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে উবার বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছে ইমেইল করা হলে তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অগ্রহী নয় বলে জানিয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০১মার্চ/এলএ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :