সাঈদীর মৃত্যু: চিকিৎসক মোস্তফা জামানকে হত্যার হুমকিতে যা লেখা হয়

‘এই খুনি বাইরে আয় তোকে এবং তোর পরিবারের সকল সদস্যদের হত্যা করে আমি আমার জীবনের লক্ষ্য পূরণ করব। নাইন এমএম (পিস্তলের একটি মডেল) কিনে রেখেছি।’
‘কু... বাচ্চা বাইরে আয় তোর পরিবারের সকলকে হত্যা করে আমার আশা পূরণ করব, আমার জীবনের এখন একমাত্র কাজ হলো তোকে হত্যা করা। ...বাচ্চা তোর মাকে.....।’ (পুরো মেসেজ প্রকাশ অযোগ্য)।
গত সোমবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা জামানকে এভাবে হত্যার হুমকি দেন তাফসীরুল ইসলাম নামে একজন যুবক। ফেসবুকে ইনবক্সে এবং মোবাইলে খুদে বার্তা দিয়ে মোস্তফা জামানকে হুমকি দেন ওই যুবক। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তির পর সাঈদীকে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা জামান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন, হুমকিদাতা তাফসীরুলের বাড়ি ঝিনাইদহে। তিনি শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং তার বাবা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করেন। এই তাফসীরুল শিবিরের একটি ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন। বুধবার রাতে র্যাব ঝিনাইদহ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
গত রবিবার বুকে ব্যথার কারণে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চিকিৎসার জন্য গাজীপুর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আনা হয়। সেখানে সাঈদীকে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন হাসপাতালটির চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাঈদীর মৃত্যু হলে তার অনুসারীরা চিকিৎসককে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট দিতে থাকেন। কেউবা চিকিৎসক মোস্তফা জামানের ফেসবুক ইনবক্সে কিংবা মোবাইলে এসএমএস করে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকেন। অবস্থা বেগতিক দেখে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ধানমন্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
এদিকে চিকিৎসক মোস্তফা জামানকে হত্যার হুমকিদাতা আরেকজনকে আটক করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। তার নাম হাফিজা মাহবুবা বৃষ্টি। বুধবার রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে আটক করা হয়। বৃষ্টির বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি we are one ummaah (মুসলিম ঐক্য) নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে মোস্তফা জামানকে নিয়ে পোস্ট করেন। সেখানে মোস্তফা জামানের তিনটি ছবি পোস্ট করে তার ক্যাপশনে বৃষ্টি লিখেন- ‘এ কি মৃত্যু ছিল না ষড়যন্ত্র! আল্লাহু আলাম। যে মুস্তফা জামান ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে ‘স তে সাঈদী, তুই রাজাকার তুই রাজাকার’ বলে স্লেগান দিয়েছিল ইমরান, লাকী, অমিদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে, সেই মুস্তফা জামানই গতকাল প্রশাসন কর্তৃক চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় আল্লামা সাঈদী সাহেবের।’
হাফিজা মাহবুবা বৃষ্টির এই পোস্টের লিঙ্ক মোস্তফা জামান থানায় করা তার সাধারণ ডায়েরিতে তুলে ধরেন। এরপরই সিটিটিসি তাকে আটক করে।
সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। তার মৃত্যুর পর জানাজা ঢাকায় পড়ানোর দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ করেন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা। তারা শাহবাগে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ভেতরে ও সামনের সড়কে রাতভর বিক্ষোভ করেন। সড়কে একটি লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িও ভাঙচুর করেন তারা। পুড়িয়ে দেয়া হয় দুটি মোটরসাইকেল। পরে ভোরে (মঙ্গলবার) পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর সাঈদীর মরদেহ পুলিশি নিরাপত্তায় পিরোজপুরে নেওয়া হয় এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।
জীবননাশের হুমকির অভিযোগে গত মঙ্গলবার রাতে থানায় করা জিডিতে এই চিকিৎসক উল্লেখ করেন, আমি ডা. জামান বিএসএমএমইউয়ে হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছি। রবিবার রাতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী অসুস্থ অবস্থায় সেখানে ভর্তি হন। সাঈদী বিএসএমএমইউয়ের হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত আহমেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমবার সেখানে সাঈদী মৃত্যুবরণ করেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিমের একজন সদস্য হিসেবে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও ইউটিউবে বিভিন্ন আইডি থেকে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং হত্যার হুমকি দিচ্ছে।’
জিডিতে চিকিৎসক বলেন, ‘আমি বর্তমানে কতিপয় ব্যক্তির আচরণে ভীত ও শঙ্কিত। কয়েকটি ফেসবুক ও ইউটিউব পেজের ব্যবহারকারী এবং তাদের অনুসারীরা যে কোনো সময় আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের খুন-জখমসহ বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।’
সোমবার রাত ও মঙ্গলবার ভোরে শাহবাগে তাণ্ডব এবং পুলিশের কাজে বাধার অভিযোগ তুলে বুধবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে করা এই মামলায় সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদীসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও পাঁচ হাজার জামায়াত-শিবির কর্মীকে আসামি করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/এসএস/এফএ)

মন্তব্য করুন