মালয়েশিয়ায় কীভাবে ছিলেন বিএনপি নেতা কাইয়ুম, শরণার্থী নাকি প্রতারণা- উঠছে নানা প্রশ্ন

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:০৪ | প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৫৬

বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম। বর্তমানে মালয়েশিয়ার কারাগারে আটক আছেন তিনি। একসময় সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর থেকে ঢাকা উত্তর বিএনপির সভাপতি হন; সবশেষ কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।

বেশ প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকলেও দীর্ঘদিন দেশের বাইরে এম এ কাইয়ুম। এর মধ্যে হয়েছেন আলোচিত ইতালিয়ান নাগরিক তাবেল্লা সিজার হত্যাসহ অসংখ্য মামলার আসামি। এতদিন কাইয়ুম সপরিবারে মালয়েশিয়ায় বসে দল পরিচালনাসহ নানা বিষয়ে কলকাঠি নাড়তে পারতেন নির্বিঘ্নে। তবে সম্প্রতি দেশটিতে আটকের পর কাইয়ুম ইস্যুতে নানান প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

প্রশ্ন আসছে, কোন ভিসায় বছরের পর বছর ধরে দেশটিতে অবস্থান করলেন এম এ কাইয়ুম? নানা ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কাইয়ুম কি মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করেছেন, নাকি রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন? বাংলাদেশের পাসপোর্ট থাকলেও তিনি কীভাবে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তালিকাভুক্ত শরণার্থী হলেন? এক্ষেত্রে তিনি কী প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন? তাকে কি দেশে ফিরিয়ে আনা হবে? ঢাকা টাইমস এসব প্রশ্নের বিষয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছে।

গত ১২ জানুয়ারি অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় অবস্থানের কারণে অভিবাসন আইনের আওতায় কাইয়ুমকে আটক করে স্থানীয় আমপাং থানায় নেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি আটক অবস্থায়ই আছেন।

কাইয়ুমের স্ত্রী শামীম আরা বেগম জানান, ঘটনার দিন জুমার নামাজ শেষ করে তিনি বাসার সামনে অবস্থান করছিলেন। এসময় তাকে আটক করা হয়। এরপর জানানো হয়, অভিবাসন আইনের আওতায় অবৈধভাবে অবস্থানের কারণে তাকে আটক করা হয়েছে। কারণ, তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাতিল হয়েছে।

২০১৫ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোমে’ অবস্থান করছেন এম এ কাইয়ুম। পাশাপাশি তিনি জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তালিকাভুক্ত শরণার্থী হিসেবে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন।

মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিএনপির অনেক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, কাইয়ুম দেশে থাকতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বেশ সক্রিয় ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা আছে। বিভিন্ন সময় গাড়ি পোড়ানোসহ নানা অভিযোগে মামলাগুলো হয়েছে। তবে সবচেয়ে আলোচিত গুলশানে ইতালি নাগরিক তাবেল্লা সিজার হত্যা মামলায় আসামি হওয়া। ২০১৫ সালের তাবেল্লা হত্যা মামলার কার্যক্রম প্রায় শেষপর্যায়ে। আলোচিত তাবেল্লা সিজার হত্যার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এর ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে ঢাকার সাবেক কমিশনার কাইয়ুমের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।

অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় অবস্থানকালে বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে প্রায়ই অন্য দেশে গেছেন। সেখানে তিনি বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন বলেও অভিযোগ আছে। গত নভেম্বরে তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

এদিকে মালয়েশিয়ায় আটক বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুমকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আদেশ স্থগিত করে দেশটির উচ্চ আদালত। ১৮ জানুয়ারি এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। এতেই আপাতত আটকে গেছে তাকে ফেরানোর সুযোগ।

কাইয়ুমের পক্ষের আইনজীবী সেভান দাবি করেছেন, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই তাকে আটক করা হয়েছে। কাইয়ুম ২০১৫ সাল থেকে সেকেন্ড হোম প্রোগ্রামের অধীনে বসবাস রয়েছেন এবং ইউএনএইচসিআরের তালিকাভুক্ত একজন শরণার্থী।” সেভান বিবৃতিতে বলেন, “মালয়েশিয়ার পুলিশ এবং বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) যৌথ অভিযানে এম এ কাইয়ুমকে আমপাং-এ তার বাসভবন থেকে আটক করে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে উচ্চ আদালতে তার ইস্যুতে শুনানি আছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ুন কবির ঢাকা টাইমসকে বলেন, “বিএনপি নেতা কাইয়ুম কীভাবে এতদিন দেশটিতে অবস্থান করছিলেন সেটা না জেনে বলা সম্ভব হবে না৷ তবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকলেও তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী হিসেবে কীভাবে সেখানে আছেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এক্ষেত্রে মনে হচ্ছে, তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।”

মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার বাদলুর রহমান বাদল ঢাকা টাইমসকে বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তাকে আটক করা হয়েছে। এগুলো হয়রানি ছাড়া কিছু নয়। পাশাপাশি তাকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ আদালত স্থগিত করেছেন। আর তার কাছে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড আছে।”

বাংলাদেশ সরকার কাইয়ুমের পাসপোর্ট বাতিল করার বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, “এটা কীভাবে সরকার করেছে জানি না। আপনারা খোঁজখবর নেন, জানতে পারবেন।”

এতদিন ধরে কীভাবে, কোন ভিসায় এম এ কাইয়ুম মালয়েশিয়ায় আছেন- জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন নেতা বলেন, “তিনি কোন ভিসায় আছেন তা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। তবে তিনি এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন; সেকেন্ড হোম করেছেন। তাই হয়তো কোনোভাবে রয়েছেন। তাছাড়া জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ডও তার আছে। তবে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে দেশটিতে থাকেন না। কারণ, এখানে এমন সুযোগ নেই।”

কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, “রাজনৈতিক আশ্রয়ে দেশটিতে থাকার সুযোগ নেই। হয়ত তিনি সেখানকার কোনো পন্থায় দেশটিতে অবস্থান করছেন।”

কে এই বিএনপি নেতা কাইয়ুম?

ঢাকার প্রয়াত মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা মেয়র থাকার সময় কাইয়ুম গুলশান-বাড্ডা এলাকার কমিশনার ছিলেন। দলের প্রয়াত মেয়র আব্দুস সালাম তালুকদারের হাত ধরে তিনি বিএনপিতে এসেছিলেন বলেও শোনা যায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে গুলশান-বাড্ডা আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন কাইয়ুম।

জানা গেছে, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানিয়েছিলেন কাইয়ুম। আবাসন ব্যবসা ছাড়াও মালয়েশিয়ায় তার অঢেল অর্থকড়ি আছে। দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার ঠিক আগেই কাইয়ুম পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। সেখানে অবস্থান করেই দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন তিনি।

২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল রাতে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং উত্তরের আংশিক নির্বাহী কমিটি অনুমোদন করা হয়। এতে ৬৬ সদস্যবিশিষ্ট ঢাকা মহানগর উত্তরের বিএনপির সভাপতি হন এম এ কাইয়ুম এবং সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান। কমিটি হওয়ার আগে থেকে অদ্যাবধি বিদেশেই আছেন তিনি।

অভিযোগ আছে, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির জয়ের পর গুলশান, বাড্ডা এলাকায় জমি দখলসহ নানা অভিযোগ ওঠে কাইয়ুমের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলাও হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০০৪ সালে কমিশনার হওয়ার পর বাড়তে থাকে প্রভাব প্রতিপত্তি। পরে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে গড়ে তোলেন আবাসন প্রতিষ্ঠান স্বদেশ প্রপার্টিজ।

এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে কাইয়ুমের আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয় তার স্ত্রী শামীম আরাকে। শুরুতে কয়েকদিন মাঠ গরম করলেও নির্বাচনের আগ মুহূর্তে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি। ‘নাভিদ উল ওয়ারস’ নামে একটি গার্মেন্টসের চেয়ারম্যান কাইয়ুমপত্নী।

(ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/এসএস/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

অসুস্থ তাঁতীদল নেতা রেজাউল করিমকে দেখতে গেলেন কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ

শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ছাত্রলীগের কর্মসূচি

জাপাকে বিক্রি করে নেতাকর্মীদের ক্রীতদাস বানানোর চেষ্টা হয়েছে: কাজী মামুন

আ.লীগই ষড়যন্ত্র করে: সালাম

দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের কিছুই অবশিষ্ট নেই: জামায়াত

ডোনাল্ড লু প্রসঙ্গে বেশি কথা বলতে চান না মির্জা ফখরুল

বিএনপির আরও পাঁচ নেতা বহিষ্কার

ইসরায়েলি লবির সঙ্গে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি: হাছান মাহমুদ

ডোনাল্ড লু'র আগমনে সরকার ভীত: ববি হাজ্জাজ

গণতন্ত্রের আস্থার মূল জায়গা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে: গয়েশ্বর

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :