অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে গবেষণা দরকার

তাওহিদুল ইসলাম, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১১ মে ২০২৪, ১০:৫৬| আপডেট : ১১ মে ২০২৪, ১৩:৪৯
অ- অ+

বিশ্বজুড়ে ৩০০ কোটির বেশি ডোজ দেওয়ার পরে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি। এ খবরের পর টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বিশ্বব্যাপী। তবে বাংলাদেশে এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বড় কোনো শঙ্কা নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সঠিক তথ্য জানতে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে যেহেতু অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে; আর যেহেতু বাংলাদেশেও অনেক লোক এই টিকা নিয়েছে; তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শঙ্কা থাকা স্বাভাবিক। তবে দেশের মানুষের এটা নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

এ নিয়ে সম্প্রতি এক বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশে যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণ করেছেন তারা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগছেন কি না এটা জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছি এবং তারা এটা জরিপ করছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে এখন পর্যন্ত জরিপের কাজ শুরু করতে পারেনি।

যুক্তরাজ্যের ভোক্তা সুরক্ষা আইনের অধীনে করা একটি মামলায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনটি ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ভ্যাকসিনটি প্রত্যাশা অনুযায়ী নিরাপদ ছিল না। এর জবাবে আদালতের কাছে জমা দেওয়া নথিতে প্রথমবারের মতো অ্যাস্ট্রাজেনেকা স্বীকার করেছে যে তাদের কোভিড ভ্যাকসিন খুবই বিরল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে জমা দেওয়া একটি আইনি নথিতে বলেছে, তাদের কোভিড ভ্যাকসিনের ফলে “খুব বিরল ক্ষেত্রে, টিটিএস ঘটাতে পারে”।

টিটিএস একটি বিরল সিন্ড্রোম যেখানে একইসঙ্গে থ্রম্বোসিস (রক্ত জমাট বাঁধা) ও থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া (প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়া) হয়।

গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশেও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয় এক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বিশ্বজুড়ে অ্যাস্টাজেনেকার টিকা গ্রহণকারীরা নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগছেন। ইতোমধ্যে কোভিডের এই টিকা তুলে নেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণ করেছেন তারা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগছেন কি না এটা জানতে এই টিকা গ্রহণকারীদের ওপর জরিপ চালানো হচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে এ রকম কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার রিপোর্ট আমরা এখন পর্যন্ত পাই নাই। আমি এটা জানার পরে ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছি এবং তারা এটা জরিপ করছেন। মানে যাদেরকে এই টিকা দেওয়া হয়েছে তাদের ওপর জরিপ করে আমাকে রিপোর্ট দেবেন তারা।

এ বিষয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে অনেক লোক। মারাও গিয়েছে বেশ কিছু লোক। বাংলাদেশেও অনেক লোক অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন। সুতরাং তাদের মধ্যেও চিন্তা থাকাটা স্বাভাবিক। তবে যে জটিলতা দেখা দিয়েছে, এটা অনেক ব্যাপক না।’

‘এটা এমন যে ৫০ হাজার লোক টিকা নিলে একজনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। আর বাংলাদেশে এটা হচ্ছে কি না বা কারো মধ্যে হয়েছে কি না এরকম তথ্য নেই। এখন সরকারের উচিত এই ব্যাপারটাকে ভালোভাবে খতিয়ে দেখা। বাংলাদেশে কত লোক আসলে এটাতে আক্রান্ত হতে পারে’, বলেন এই বিশেষজ্ঞ।

ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘যারা টিকা নিয়েছে তাদের মোবাইল নম্বর, এনআইডি কার্ড সবই সরকারের কাছে আাছে। এসব তথ্য দিয়ে সরকার অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণকারীদের সহজে পাবে এবং ভালো করে বিশ্লেষণ করে পরিস্থিতি বুঝা যাবে। জনগণকেও প্রকৃত অবস্থা জানানো যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যেহেতু তথ্য নেই যে বাংলাদেশে কতজন আক্রান্ত হয়েছে। আর হয়ে থাকলে তাদের পরিণতিটা কী। তাদের কি মারাত্মক শারীরিক সমস্যা হয়েছে, না মৃত্যু হয়েছে। এগুলো যদি জানা যায় তাহলে বাংলাদেশের ব্যাপকতা জানা যাবে এবং প্রস্তুতি নেওয়া যাবে।’

ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘দেশের মানুষের এটা নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কেননা এই জটিলতাগুলো টিকা দেওয়ার পরপর হয়। কিন্তু বাংলাদেশে টিকা দিয়েছে অনেক দিন আগে। কারো হয়ে থাকলে আগে হয়ে গেছে। আর যে জটিলতার কথা বলা হচ্ছে থ্রম্বোসিস উইথ থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া সিন্ড্রোম (টিটিএস)। এই টিকা নেওয়ার অনেক পরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার তেমন তথ্য নেই। তবে সরকারের দায় আছে, এটা নিয়ে গবেষণা করা দরকার।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ভাইরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাবেয়া শারমীন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছে তাদের শ্যাম্পল (নমুনা) নিতে হবে। তাদের কী অবস্থা এসব নিয়ে স্টাডি হওয়া দরকার। এ ছাড়া কিছু বলা ঠিক না। এটা নিয়ে গবেষণা করতে হবে, এরপর বলা যাবে।’

ঢামেকের আরেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনো রোগী এখন পর্যন্ত পাইনি। আর এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারটা রিসার্চ করে দেখতে হবে। সরকার চাইলে এটা নিয়ে জরিপ করে দেখতে পারে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (মাতৃ, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি-ইপিআই) ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী জরিপের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু এটা তো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আর আমরা আমাদের অধিদপ্তর থেকে যখন নির্দেশনা পাব তখন এই জরিপ কীভাবে করব, কখন করব তার সিদ্ধান্ত হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জরিপের প্রক্রিয়া এখনও শুরু করতে পারেনি।’

(ঢাকাটাইমস/১১মে/টিআই/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ফরিদপুরে দেড় লাখ টাকায় ‘বিক্রি হওয়া’ সেই শিশু উদ্ধার
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল ইসি
ঝিকরগাছায় পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্য
পরমাণু যুদ্ধের হুমকি ভারত সহ্য করবে না: মোদি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা