ছয়তলার বারান্দায় দাঁড়ানোর দুই মিনিটে গুলিবিদ্ধ তরুণী মা সুমাইয়া

মো. আকাশ, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
  প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০২৪, ১৪:১৪
অ- অ+

সদ্য সন্তানের মা হয়েছিলেন ২০ বছর বয়সী সুমাইয়া আক্তার। মা হওয়ার আনন্দ আর ফুরফুরে মনে মায়ের বাড়িতে বেড়াচ্ছিলেন। গত শুক্রবার নিজের বাসায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল (২৭ জুলাই) নবজাতককে নিয়ে। কিন্তু কোথা থেকে ছুটে আসা একটি গুলি তার সন্তানকে মাতৃহারা করে। নবজাতক কন্যাকে নিজ বাড়ি দেখানোর সৌভাগ্য হয়নি এই তরুণী মায়ের।

গত ২১ জুলাইয়ের ঘটনা এটি। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আন্দোলনকারী আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছিল। উত্তাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত। টিয়ার শেল, গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দে দিনভর আতঙ্কময় পরিবেশ চারপাশে।

তখন বিকাল বেলা। মিজমিজি পাইনাদী দোয়েল চত্বর এলাকায় দৌড়াদৌড়ির আওয়াজ শুনে মায়ের ঘরের ছয় তলার বারান্দায় যান সুমাইয়া। রেলিংয়ের ভেতর থেকে উঁকিঝুঁকি মেরে বাইরের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করছিলেন। হঠাৎ চিৎকার করে লুটিয়ে পড়েন মেজেতে। জানালার এসএস ছিদ্র করে একটি গুলি লাগে তার মাথার বাম পাশে।

পরিবারের সদস্যরা তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যান তাকে। তবে, বাঁচানো যায়নি। চিকিৎসক জানান হাসপাতালে পৌঁছানোর আগ মুহূর্তে মারা গছেন তিনি।

পিতৃহারা পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিন নম্বর বোন সুমাইয়া। অভাবের তাড়নায় ভাইদের মতো নিজেও পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। দুই বছর আগে কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা জাহিদ হাসানের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। স্বামীও একজন পোশাককর্মী। তিনি কাঁচপুরের একটি ফ্যাক্টরিতে কর্মরত।

স্বামী-স্ত্রীর কর্মময় জীবনে সুখে-শান্তিতে চলছিল সংসার। সন্তান গর্ভে এলে স্বাস্থ্যের কথা ভেবে চাকরি ছেড়ে দেন সুমাইয়া। গত মে মাসের ১২ তারিখে ঢাকার মাতুয়াইল শিশু হাসপাতালে এক ফুটফুটে কন্যাসন্তান আসে তার কোলজুড়ে। নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে মেয়ের নাম রাখেন সুবাইয়া।

এরপর নবজাতক মেয়েকে নিয়ে মা ও ভাইদের বাড়িতে ছিলেন সুমাইয়া। গত ২৭ জুলাই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল নিজের বাসায়।

বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন সুমাইয়ার মা আসমা বেগম (৪৪), ‘আমি মা হইয়া আমার মাইয়্যারে বাঁচাইতে পারি নাই। দুই মাসের বাচ্চা এহন মায়ের কোল পাইব কই!’

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আসমা বেগম বলেন, ‘আমার মাইয়া তার দুধের সন্তানরে হোয়াইয়্যা (শুইয়ে) বারিন্দায় খালি খাড়াইছিল। হুট কইরা আমার মাইয়্যার কান্দন শুইনা আমি পাশের ঘর থেইকা দৌড়াইয়া আইছি। আইয়া দেখি মাইয়া ছটফট করতাছে। পরে আমার পোলাসহ আরও মানুষ হাসপাতালে নিয়া গেলেও আমার মাইয়াডা আর বাঁচতে পারল না। ছয় তলায় বাসা, তাও গুলি আইলো! আমার নাতনির কী হইবো এহন?’

সুমাইয়াদের গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জে। কষ্টের জীবনযাপনের মধ্যে মহামারি করোনার সময় তার বাবা না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান। আসমা বেগম জানান, তখন থেকে সংসারে টানাপোড়েন বেড়ে যায়। খুব কষ্টে জীবনযাপন করে সুমাইয়াকে বিয়ে দেন। মেয়েটি বেশ হাসিখুশি সময় পার করতেন সন্তান হওয়ার পর থেকে।

সুমাইয়ার বড় বোনের স্বামী বিল্লাল বলেন, ‘সুমাইয়া বারান্দায় দাঁড়ানোর দুই মিনিটের মধ্যে চিৎকার শুনতে পাই। আমার স্ত্রী ও শাশুড়ি দৌড়ে গিয়ে দেখে মেঝেতে ছটফট করছে সুমাইয়া। রক্তে ভিজে গেছে বারান্দার মেঝে। আমরা দ্রুত তাকে সাইনবোর্ডের প্রো-অ্যাক্টিভ হাসপাতালে নিয়ে যাই, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।’

(ঢাকাটাইমস/৩১জুলাই/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আবারও এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি, কলকাতা বিমানবন্দরে আটকে গেল ফ্লাইট
যুদ্ধ থামাতে খামেনিকে সরাতে বললেন নেতানিয়াহু
অবিলম্বে তেহরান খালি করতে হবে, ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি
তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের বৈঠক নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সন্তোষ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা